সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহতের ঘটনায় উত্তাল ফ্রান্স, গ্রেফতার ১৫০

ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় টানা দ্বিতীয় রাত ধরে চলা সহিংসতা ও অস্থিরতায় অন্তত ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাজধানী প্যারিসের ন্যান্টেরে এলাকায় সড়ক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নাহেল এম নামের এক কিশোর গাড়িচালককে দাঁড় করায় পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি ফুটেজে দেখা যায়, দুই পুলিশ কর্মকর্তা গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করছেন। তাদের একজন গাড়িচালকের দিকে অস্ত্র তাক করে রেখেছেন। এসময় গাড়িটি চলতে শুরু করলে খুব কাছ থেকে চালককে গুলি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ফলে একটু দূরে গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গাড়িটি। এ ঘটনার পর জরুরি সেবাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ কিশোরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তবে তাদের সব প্রচেষ্টা শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়। মারা যায় ১৭ বছরের ছেলেটি। এর পরপরই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন স্থানীয়রা। পুলিশ সদর দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বাসস্টপ ভাঙচুর ও পুলিশের দিকে আতশবাজি নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। জবাবে পুলিশও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ন্যান্টেরের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, গাড়িচালক কিশোরের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন বলেছেন, জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা দৃশ্যটি ‘অত্যন্ত জঘন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। নিহত কিশোরকে স্মরণ করতে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রেনেতে প্রায় ৩০০ লোক জড়ো হয়, তাদের মধ্যে অনেককেই সড়কে আগুন জ্বালাতে দেখা গেছে। পুলিশ পরে ওই বিক্ষোভকারীদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ কিশোর নাহেলকে গুলি করার ঘটনা ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পুলিশের ইউনিয়নগুলো। তাদের ভাষ্য, প্রেসিডেন্ট খুব দ্রুত ঘটনায় জড়িত পুলিশকে দায়ী করে ফেলছেন। ঘটনার পর পুলিশের একটি গ্রুপ ‘তরুণ অপরাধীকে’ গুলি করায় কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানানো ও কিশোরের মৃত্যুর জন্য তাদের বাবা-মাকে অভিযুক্ত করে একটি টুইটও পোস্ট করেছিল। পরে সেটি মুছে ফেলা হলেও গ্রুপটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নাহেলকে গুলি করা পুলিশ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে ওঠা নরহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য, জীবন বিপন্ন এমনটা মনে হওয়াতেই তিনি গুলি চালিয়েছিলেন। ফ্রান্সে এ বছর গাড়ি না থামানোয় পুলিশের গুলিতে চালক নিহতের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। গত বছর এ ধরণের ঘটনায় রেকর্ড ১৩ জন নিহত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা এক ভিডিওতে নাহেলের মা মৌনিয়াকে তার নিহত সন্তানের স্মরণে মিছিলে নামতে লোকজনের প্রতি আহ্বান জানাতে দেখা গেছে। “সে একটি শিশু, মাকে তার দরকার। সে আমাকে সকালে চুমু খেয়ে বিদায় জানিয়েছিল, আর বলেছিল, তোমাকে ভালোবাসি মা। ঘণ্টাখানেক পর আমাকে বলা হল, কেউ একজন আমার ছেলেকে গুলি করেছে। কী করবো আমি? ও ছিল আমার জীবন। আমার সবকিছু,” বলেন তিনি। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে দুর্বৃত্তের হামলায় দুই সহোদর খুন

পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহতের ঘটনায় উত্তাল ফ্রান্স, গ্রেফতার ১৫০

প্রকাশিত সময় : ০৪:০৫:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০২৩

ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় টানা দ্বিতীয় রাত ধরে চলা সহিংসতা ও অস্থিরতায় অন্তত ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাজধানী প্যারিসের ন্যান্টেরে এলাকায় সড়ক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নাহেল এম নামের এক কিশোর গাড়িচালককে দাঁড় করায় পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি ফুটেজে দেখা যায়, দুই পুলিশ কর্মকর্তা গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করছেন। তাদের একজন গাড়িচালকের দিকে অস্ত্র তাক করে রেখেছেন। এসময় গাড়িটি চলতে শুরু করলে খুব কাছ থেকে চালককে গুলি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ফলে একটু দূরে গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গাড়িটি। এ ঘটনার পর জরুরি সেবাকর্মীরা গুলিবিদ্ধ কিশোরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তবে তাদের সব প্রচেষ্টা শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়। মারা যায় ১৭ বছরের ছেলেটি। এর পরপরই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন স্থানীয়রা। পুলিশ সদর দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বাসস্টপ ভাঙচুর ও পুলিশের দিকে আতশবাজি নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। জবাবে পুলিশও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ন্যান্টেরের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, গাড়িচালক কিশোরের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন বলেছেন, জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা দৃশ্যটি ‘অত্যন্ত জঘন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। নিহত কিশোরকে স্মরণ করতে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রেনেতে প্রায় ৩০০ লোক জড়ো হয়, তাদের মধ্যে অনেককেই সড়কে আগুন জ্বালাতে দেখা গেছে। পুলিশ পরে ওই বিক্ষোভকারীদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ কিশোর নাহেলকে গুলি করার ঘটনা ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পুলিশের ইউনিয়নগুলো। তাদের ভাষ্য, প্রেসিডেন্ট খুব দ্রুত ঘটনায় জড়িত পুলিশকে দায়ী করে ফেলছেন। ঘটনার পর পুলিশের একটি গ্রুপ ‘তরুণ অপরাধীকে’ গুলি করায় কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানানো ও কিশোরের মৃত্যুর জন্য তাদের বাবা-মাকে অভিযুক্ত করে একটি টুইটও পোস্ট করেছিল। পরে সেটি মুছে ফেলা হলেও গ্রুপটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নাহেলকে গুলি করা পুলিশ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে ওঠা নরহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য, জীবন বিপন্ন এমনটা মনে হওয়াতেই তিনি গুলি চালিয়েছিলেন। ফ্রান্সে এ বছর গাড়ি না থামানোয় পুলিশের গুলিতে চালক নিহতের দ্বিতীয় ঘটনা এটি। গত বছর এ ধরণের ঘটনায় রেকর্ড ১৩ জন নিহত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা এক ভিডিওতে নাহেলের মা মৌনিয়াকে তার নিহত সন্তানের স্মরণে মিছিলে নামতে লোকজনের প্রতি আহ্বান জানাতে দেখা গেছে। “সে একটি শিশু, মাকে তার দরকার। সে আমাকে সকালে চুমু খেয়ে বিদায় জানিয়েছিল, আর বলেছিল, তোমাকে ভালোবাসি মা। ঘণ্টাখানেক পর আমাকে বলা হল, কেউ একজন আমার ছেলেকে গুলি করেছে। কী করবো আমি? ও ছিল আমার জীবন। আমার সবকিছু,” বলেন তিনি। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স