বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুয়েটের শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার: কান্না থামছে না অপির মায়ের

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন অভিভাবকেরা। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বুয়েটের ৩১ শিক্ষার্থীসহ কারাবন্দি ৩৪ শিক্ষার্থীর মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে এসেছেন সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে। সন্তানদের কারাগারে আসামি দেখে কিছুতেই মানতে পারছের না তারা। কেউ আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।কারাগার থেকে মুক্তি পেতে কান্নার শেষ নেই যেনো বুয়েট শিক্ষার্থী মো. সাদ আদনান অপির মায়ের। অপির মা সানোয়ারা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের (কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ায়) পরিবারকে সবাই চিনে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে। কেনো আমার ছেলেকে এখানে (কারাগার) নিয়ে আসলো? আমার ছেলে তো নির্দোষ, আমার ছেলে কোনোদিন পড়ালেখা ছাড়া অন্য কোনো হিস্টরি নাই। বন্ধুদের সাথে আসছে আমাদের বলছে একদিনের জন্য ঘুরতে যাবো।

তিনি বলেন, আমার ছেলের স্কুল দেখতে পারেন কলেজে দেখতে পারেন, ওনারা কিছু পাবে না।

কারাগারে ছেলের সাথে তিনি কথা বলেছেন। তিনি জানান, ছেলে আমাকে বলেছে ‘আম্মু আমি তো একদম নির্দোষ। আমাকে কেনো এখানে এনেছে আমি জানি না।’ আমার ছেলে আমাকে দেখে অঝরে কাঁদতেছে।শুধু সাদ আদনান অপির মা এক নন, তার মতো আরও শিক্ষার্থীদের মা-বাবা পরিবারের লোকজন এসেছেন সুনামগঞ্জের কারাগারে। এ সময় অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।  অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানেরা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। একদম নির্দোষ।  সব শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল বাবির বাবা মোহাম্মদ মতিউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন,আমার ছেলে হাওরে বেড়াতে গেছিলো বন্ধুরা মিলে। জীবনে কখনও দেখে নাই, দেখার শখ। সিলেট দেখছে, সুন্দরবন দেখছে, কক্সবাজার দেখছে, এবার হাওর দেখতে গেছে। আমাকে বলেছিলো আব্বা আমি হাওর দেখতে যাবো, আমি বলেছিলাম এ সময়ে যেও না, এখন বর্ষার সময় সিচুয়েশন ভালো না। তারপর বন্ধুদের চাপে সে চলে আসছে। হাওরের যেসব দৃশ্য দেখেছে সে, ভালো লেগেছে আমাদেরকে মোবাইলে ছবি পাঠিয়েছে। আমার ছেলে বরাবরই ভালো ছাত্র, লেখাপড়া ছাড়া সে কিছু বুঝে না।

তিনি বলেন, আমার ছেলে বলছে আব্বা আমার কাছে তো শুধু একটা মোবাইল ছিলো, ছবি তুলার জন্য, এছাড়া আর কিছুই পায়নি। আমরা ছেলের মুক্তি চাই।

সাদ আদনান অপির বাবা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এদেশের ছেলে এই দেশে বেড়াতে এসে  এ ঘটনা আজব একটা ব্যাপার। আমার ছেলে যদি কোনো পলিটিক্সের সাথে জড়িত থাকতো তাও মনে শান্ত্বনা পেতাম যে আমার ছেলে কোনো পলিটিক্স করতেছে। সে কোনো পলিটিক্সের সাথে জড়িত নেই। শুধু পড়ালেখা আর দুইটা টিউশনি করে আর কিছু না

মো. তৈয়বুর রহমান বাবুল রাইজিংবিডিকে বলেন, অনেকেই কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসে, ঠিক এভাবে বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও আসছিলো কিন্তু একটা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হইছে। আমি  একজন আইনজীবী হিসেবে বলছি, যাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এরা নির্দোষ। এ ধরনের কোনো ঘটনার সাথে এরা জড়িত না। টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় নাশকতা করার মতো কোনো সুযোগ নাই।

আদালত চত্বরে বুয়েটের গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীরা।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে থেকে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা শিবিরকর্মী। আমরা এভাবেই বলতে পানি কারণ সবাই একই সাথে আলোচনা করছিলো। আমরা লিফলেট পেয়েছি। তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

উল্লেখ্য, গত রোববার বিকেলে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে ও দুজন কিশোর হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বুয়েটের শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার: কান্না থামছে না অপির মায়ের

প্রকাশিত সময় : ১১:৩০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অগাস্ট ২০২৩

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন অভিভাবকেরা। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বুয়েটের ৩১ শিক্ষার্থীসহ কারাবন্দি ৩৪ শিক্ষার্থীর মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে এসেছেন সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে। সন্তানদের কারাগারে আসামি দেখে কিছুতেই মানতে পারছের না তারা। কেউ আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।কারাগার থেকে মুক্তি পেতে কান্নার শেষ নেই যেনো বুয়েট শিক্ষার্থী মো. সাদ আদনান অপির মায়ের। অপির মা সানোয়ারা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের (কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ায়) পরিবারকে সবাই চিনে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে। কেনো আমার ছেলেকে এখানে (কারাগার) নিয়ে আসলো? আমার ছেলে তো নির্দোষ, আমার ছেলে কোনোদিন পড়ালেখা ছাড়া অন্য কোনো হিস্টরি নাই। বন্ধুদের সাথে আসছে আমাদের বলছে একদিনের জন্য ঘুরতে যাবো।

তিনি বলেন, আমার ছেলের স্কুল দেখতে পারেন কলেজে দেখতে পারেন, ওনারা কিছু পাবে না।

কারাগারে ছেলের সাথে তিনি কথা বলেছেন। তিনি জানান, ছেলে আমাকে বলেছে ‘আম্মু আমি তো একদম নির্দোষ। আমাকে কেনো এখানে এনেছে আমি জানি না।’ আমার ছেলে আমাকে দেখে অঝরে কাঁদতেছে।শুধু সাদ আদনান অপির মা এক নন, তার মতো আরও শিক্ষার্থীদের মা-বাবা পরিবারের লোকজন এসেছেন সুনামগঞ্জের কারাগারে। এ সময় অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।  অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানেরা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। একদম নির্দোষ।  সব শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল বাবির বাবা মোহাম্মদ মতিউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন,আমার ছেলে হাওরে বেড়াতে গেছিলো বন্ধুরা মিলে। জীবনে কখনও দেখে নাই, দেখার শখ। সিলেট দেখছে, সুন্দরবন দেখছে, কক্সবাজার দেখছে, এবার হাওর দেখতে গেছে। আমাকে বলেছিলো আব্বা আমি হাওর দেখতে যাবো, আমি বলেছিলাম এ সময়ে যেও না, এখন বর্ষার সময় সিচুয়েশন ভালো না। তারপর বন্ধুদের চাপে সে চলে আসছে। হাওরের যেসব দৃশ্য দেখেছে সে, ভালো লেগেছে আমাদেরকে মোবাইলে ছবি পাঠিয়েছে। আমার ছেলে বরাবরই ভালো ছাত্র, লেখাপড়া ছাড়া সে কিছু বুঝে না।

তিনি বলেন, আমার ছেলে বলছে আব্বা আমার কাছে তো শুধু একটা মোবাইল ছিলো, ছবি তুলার জন্য, এছাড়া আর কিছুই পায়নি। আমরা ছেলের মুক্তি চাই।

সাদ আদনান অপির বাবা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এদেশের ছেলে এই দেশে বেড়াতে এসে  এ ঘটনা আজব একটা ব্যাপার। আমার ছেলে যদি কোনো পলিটিক্সের সাথে জড়িত থাকতো তাও মনে শান্ত্বনা পেতাম যে আমার ছেলে কোনো পলিটিক্স করতেছে। সে কোনো পলিটিক্সের সাথে জড়িত নেই। শুধু পড়ালেখা আর দুইটা টিউশনি করে আর কিছু না

মো. তৈয়বুর রহমান বাবুল রাইজিংবিডিকে বলেন, অনেকেই কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসে, ঠিক এভাবে বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও আসছিলো কিন্তু একটা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হইছে। আমি  একজন আইনজীবী হিসেবে বলছি, যাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এরা নির্দোষ। এ ধরনের কোনো ঘটনার সাথে এরা জড়িত না। টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় নাশকতা করার মতো কোনো সুযোগ নাই।

আদালত চত্বরে বুয়েটের গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীরা।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে থেকে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা শিবিরকর্মী। আমরা এভাবেই বলতে পানি কারণ সবাই একই সাথে আলোচনা করছিলো। আমরা লিফলেট পেয়েছি। তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

উল্লেখ্য, গত রোববার বিকেলে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে ও দুজন কিশোর হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।