বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতিতে বিপাকে রোগীরা

খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসাসেবা প্রার্থীরা।  মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাত ১০টা থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসরা এই কর্মবিরতি শুরু করেছেন। যা বুধবারও অব্যহত রয়েছে। এর আগে সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের মার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মার্কেটের মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্নার নামের একটি ওষুধের দোকানে এক শিক্ষার্থী ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন। তবে দোকানদার অতিরিক্ত মূল্য চাওয়ায় তিনি প্রতিবাদ করেন। তখন তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরবর্তীতে অন্য শিক্ষার্থীরা গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোকানদাররা জড়ো হয়ে তাদের ওপর হামলা করেন। অন্যদিকে, ওষুধের দোকানদাররা দাবি করেন, ওই শিক্ষার্থী ৭০ টাকার ওষুধ কেনার পর তিনি মোট দামের ওপর ১০ শতাংশ কমিশন চেয়েছিলেন। তবে দোকানদার ওই কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় দুজন বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে মেডিক্যাল কলেজের হল থেকে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ওই দোকানে ভাঙচুর চালান। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী সবুজ সরকার, আনান, নাফিজ ফুয়াদ, হাফিজ, তাহসিম, মাহাদী ও দেব চৌধুরীর অবস্থা গুরুতর। এদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। একাধিক সেবা প্রত্যাশীরা জানান, এই চিকিৎসকরদের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় তাদের ২/৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ওষুধ আনতে হচ্ছে। ফলে সময় ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে। আমিরুল ইসলাম নামে এক রোগী খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তার ভাই সাইফুল বলেন, হাসপাতালে সামনে সব ওষুধের দোকান বন্ধ, যানবাহন নেই। গত রাতে ভাইয়ের জন্য জরুরি একটি ইনজেকশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু গাড়িও পাই না। অনেক কষ্ট করে হেরাজ মার্কেটে গিয়ে ওষুধ আনি। তার মতো অনেক রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে ছুটতে হচ্ছে হেরাজ মার্কেটে। খুমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনে সবগুলো ওষুধের দোকান বন্ধ। দোকানের সামনে ব্যানার টানানো, তাতে লেখা আছে, ‘খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওষুধ ব্যবসায়ীর ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাই।’ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উপি-পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফিজ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। রোগীদের ভোগান্তির বিষয় মাথায় রেখে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসক সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে, হামলার পর আপাতত দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতালে সামনের ওষুধ ব্যবসায়ীরা। ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক জিল্লুর রহমান জুয়েল জানান, হামলার ঘটনায় তাদের ৯ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। শিক্ষর্থীরা একটি দোকানের ভেতরে ভাঙচুর চালিয়েছে। সংঘাত এড়ানোর জন্য দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও খুলনা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন হামলাকারীদেরকে আটক করতে পারিনি। কলেজের শিক্ষার্থীদের ও ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ কেমিস্ট অ‌্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি খুলনা জেলা কমিটি সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম কবির উদ্দিন বাবলু বলেন, আমরা নিরাপত্তার কারণে ওষুধের দোকান বন্ধ রেখেছি। খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা যেভাবে আমাদের ওষুধের দোকানে ওপর হামলা করেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের হামলায় ১০-১৪ জন দোকানদার আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট শোক দিবসের প্রোগ্রামে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। সে কারণে সমিতির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে আমাদের বসার সুযোগ হয়নি। এখন বাংলাদেশ কেমিস্ট অ‌্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা বসে করণীয় বিষয় সিদ্ধান্ত নেবো। হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত ওষুধের দোকান বন্ধ থাকবে বলে তিনি জানান। একই সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ যে কোনো মুহূর্তে খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। এছাড়া, যারা হামলা চালিয়েছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতিতে বিপাকে রোগীরা

প্রকাশিত সময় : ০৩:০৭:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩

খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসাসেবা প্রার্থীরা।  মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাত ১০টা থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসরা এই কর্মবিরতি শুরু করেছেন। যা বুধবারও অব্যহত রয়েছে। এর আগে সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের মার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মার্কেটের মেসার্স বিপ্লব মেডিসিন কর্নার নামের একটি ওষুধের দোকানে এক শিক্ষার্থী ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন। তবে দোকানদার অতিরিক্ত মূল্য চাওয়ায় তিনি প্রতিবাদ করেন। তখন তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরবর্তীতে অন্য শিক্ষার্থীরা গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোকানদাররা জড়ো হয়ে তাদের ওপর হামলা করেন। অন্যদিকে, ওষুধের দোকানদাররা দাবি করেন, ওই শিক্ষার্থী ৭০ টাকার ওষুধ কেনার পর তিনি মোট দামের ওপর ১০ শতাংশ কমিশন চেয়েছিলেন। তবে দোকানদার ওই কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় দুজন বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে মেডিক্যাল কলেজের হল থেকে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ওই দোকানে ভাঙচুর চালান। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী সবুজ সরকার, আনান, নাফিজ ফুয়াদ, হাফিজ, তাহসিম, মাহাদী ও দেব চৌধুরীর অবস্থা গুরুতর। এদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। একাধিক সেবা প্রত্যাশীরা জানান, এই চিকিৎসকরদের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় তাদের ২/৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ওষুধ আনতে হচ্ছে। ফলে সময় ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে। আমিরুল ইসলাম নামে এক রোগী খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তার ভাই সাইফুল বলেন, হাসপাতালে সামনে সব ওষুধের দোকান বন্ধ, যানবাহন নেই। গত রাতে ভাইয়ের জন্য জরুরি একটি ইনজেকশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু গাড়িও পাই না। অনেক কষ্ট করে হেরাজ মার্কেটে গিয়ে ওষুধ আনি। তার মতো অনেক রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে ছুটতে হচ্ছে হেরাজ মার্কেটে। খুমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনে সবগুলো ওষুধের দোকান বন্ধ। দোকানের সামনে ব্যানার টানানো, তাতে লেখা আছে, ‘খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওষুধ ব্যবসায়ীর ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাই।’ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উপি-পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফিজ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। রোগীদের ভোগান্তির বিষয় মাথায় রেখে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়া, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসক সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে, হামলার পর আপাতত দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতালে সামনের ওষুধ ব্যবসায়ীরা। ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক জিল্লুর রহমান জুয়েল জানান, হামলার ঘটনায় তাদের ৯ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। শিক্ষর্থীরা একটি দোকানের ভেতরে ভাঙচুর চালিয়েছে। সংঘাত এড়ানোর জন্য দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও খুলনা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন হামলাকারীদেরকে আটক করতে পারিনি। কলেজের শিক্ষার্থীদের ও ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ কেমিস্ট অ‌্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি খুলনা জেলা কমিটি সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম কবির উদ্দিন বাবলু বলেন, আমরা নিরাপত্তার কারণে ওষুধের দোকান বন্ধ রেখেছি। খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা যেভাবে আমাদের ওষুধের দোকানে ওপর হামলা করেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের হামলায় ১০-১৪ জন দোকানদার আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট শোক দিবসের প্রোগ্রামে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। সে কারণে সমিতির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে আমাদের বসার সুযোগ হয়নি। এখন বাংলাদেশ কেমিস্ট অ‌্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা বসে করণীয় বিষয় সিদ্ধান্ত নেবো। হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত ওষুধের দোকান বন্ধ থাকবে বলে তিনি জানান। একই সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ যে কোনো মুহূর্তে খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা চালাতে পারে। এছাড়া, যারা হামলা চালিয়েছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।