বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অডিও কাণ্ডে চারঘাটের ওসি মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার

গৃহবধূর কাছে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও ভাইরালের পর রাজশাহীর চারঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর ওসির ঘুষ দাবির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর রাতেই তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার আদেশ জারি করেন জেলার পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান। রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্ত করে শনিবার রাতেই চারঘাট থানা পুলিশের ওসি মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার তাকে পুলিশ লাইনসে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসির কোয়ার্টারের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামের এক গৃহবধূর কাছে ওসি মাহবুবুল আলম সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও ফাঁস হয়। পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ওই গৃহবধূকে মাদক ব্যবসা করার পরামর্শ দেন ওসি। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ। অভিযোগের সঙ্গে ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওসির একটি অডিও রেকর্ড পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু মাদক মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গেলে গৃহবধূ সাহারা বেগম ও তার ছেলে মো. রাব্বিকে নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেন ওসি মাহবুবুল আলম। ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম) আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না। এরপর চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার জন্য জেলা ডিবির ওসির সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, দুই লাখ টাকা দেন কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব (ডিবির ওসি আব্দুল আলিম কালুকে গ্রেপ্তার করেছিল)। এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিল)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার নিচে ছাড়াতে পারবেন না। এরপর ওসি বলেন, এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দিইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে (পুলিশ সুপার) কথা দিয়ে এসেছি। স্যারের এখন কী কী লাগবে-৫ লাখ টাকা। কী কী জিনিস চাইছে-৭ লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি আমি চেষ্টা করবো। স্যারকে বলেছি এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। জেলা ডিবির আরেক ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে অডিওতে ওসিকে আরও বলতে শুনা যায়, নির্বাচনের আগে শুভকে (মাদক চোরাকারবারি) ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে। চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুলকে আরও বলতে শোনা যায়, যে জায়গার ক্ষমতা সেখানেই। ৫ লাখ আর ২ লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, মুক্তা ও শুভকে (মাদক চোরাকারবারি) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব উপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই উপরে কাজ করবে। অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের সুন্দর চেহারা নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে। সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবত পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেছে। চারঘাট এলাকায় তার মাধ্যমে র‌্যাব-পুলিশ অনেক মাদক আটক করেছে। এছাড়া গত নির্বাচনে আমার স্বামী ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এরপর থেকেই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুক্তার, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা। তিনি আর বলেন, চারঘাটের চামটা গ্রামের আনজুর ছেলে মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাইমুদ্দিনের ছেলে সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একই সঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানা গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ওসি মাহবুবুল আলম ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

অডিও কাণ্ডে চারঘাটের ওসি মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার

প্রকাশিত সময় : ১১:০৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

গৃহবধূর কাছে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও ভাইরালের পর রাজশাহীর চারঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর ওসির ঘুষ দাবির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর রাতেই তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার আদেশ জারি করেন জেলার পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান। রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্ত করে শনিবার রাতেই চারঘাট থানা পুলিশের ওসি মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার তাকে পুলিশ লাইনসে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসির কোয়ার্টারের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগম (২৮) নামের এক গৃহবধূর কাছে ওসি মাহবুবুল আলম সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও ফাঁস হয়। পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ওই গৃহবধূকে মাদক ব্যবসা করার পরামর্শ দেন ওসি। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ। অভিযোগের সঙ্গে ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওসির একটি অডিও রেকর্ড পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু মাদক মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গেলে গৃহবধূ সাহারা বেগম ও তার ছেলে মো. রাব্বিকে নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেন ওসি মাহবুবুল আলম। ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম) আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না। এরপর চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার জন্য জেলা ডিবির ওসির সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, দুই লাখ টাকা দেন কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব (ডিবির ওসি আব্দুল আলিম কালুকে গ্রেপ্তার করেছিল)। এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিল)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার নিচে ছাড়াতে পারবেন না। এরপর ওসি বলেন, এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দিইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে (পুলিশ সুপার) কথা দিয়ে এসেছি। স্যারের এখন কী কী লাগবে-৫ লাখ টাকা। কী কী জিনিস চাইছে-৭ লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি আমি চেষ্টা করবো। স্যারকে বলেছি এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। জেলা ডিবির আরেক ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে অডিওতে ওসিকে আরও বলতে শুনা যায়, নির্বাচনের আগে শুভকে (মাদক চোরাকারবারি) ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে। চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুলকে আরও বলতে শোনা যায়, যে জায়গার ক্ষমতা সেখানেই। ৫ লাখ আর ২ লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, মুক্তা ও শুভকে (মাদক চোরাকারবারি) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব উপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই উপরে কাজ করবে। অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের সুন্দর চেহারা নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে। সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবত পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেছে। চারঘাট এলাকায় তার মাধ্যমে র‌্যাব-পুলিশ অনেক মাদক আটক করেছে। এছাড়া গত নির্বাচনে আমার স্বামী ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এরপর থেকেই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুক্তার, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা। তিনি আর বলেন, চারঘাটের চামটা গ্রামের আনজুর ছেলে মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাইমুদ্দিনের ছেলে সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একই সঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। সেই অভিযোগ করতে থানা গেলে ওসি ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে আমাকে মাদকের ব্যবসা করতে বলে। তাতে আমি রাজি না হলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ওসি মাহবুবুল আলম ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।