বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু

বগুড়ায় ডিবি পুলিশ হেফাজতে আইনজীবীর এক সহকারীর (মুহুরি) মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম হাবিবুর রহমান হাবিব (৩৬)। হাবিবুরের স্বজনদের দাবি, ডিবি পুলিশের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বগুড়া জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে জেলা ডিবি পুলিশ হাবিবুরকে আটক করে। হাবিবুর রহমান বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবীর সহকারী ও জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বগুড়া ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, আটকের পর হাবিবুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসাপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাবিবুরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। ডিবি পুলিশ সূত্র আরো জানায়, গত ২ আগস্ট শাজাহানপুর থানার জোড়া গ্রামের ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা খুকি বেওয়া নিখোঁজ হন। ৪ আগস্ট গ্রামের একটি পুকুর থেকে তার বস্তাবন্দদি লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় লাশের লাশের একটি পা পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে একই গ্রামের মনোয়ারা বেওয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে খুকি বেওয়ার অপর পা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মনোয়ারাকে ডিবি পুলিশ আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবুরের নাম উঠে আসে। হাবিবুর ২০১৩ সালে খুকি বেওয়ার সৎ ছেলে বিপুল হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী ছিলেন খুকি বেওয়া। হাবিবুরের মামা ও আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, সন্ধ্যার পর ডিবি পুলিশ সাদা পোষাকে বিনা ওয়ারেন্টে হাবিবুরকে আটক করে নিয়ে যায়। তার খোঁজে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কাছে একাধিকবার ধর্না দিয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে এক সিনিয়র আইনজীবী আমাকে নিশ্চিত করেন, হাবিবুর ডিবি পুলিশের হেফাজতে আছে। এর কিছুক্ষণ পর তিনিই আমাকে হাবিবুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে এসে হাবিবুরের নিথর দেহ দেখতে পাই। হাবিবুর আমার সহকারী হিসেবে কাজ করতো। ডিবি পুলিশ তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেছেন তিনি। ডিবি পুলিশের নির্যাতনে হাবিবুরের মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, একটি হত্যা মামলায় হাবিবুরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তবে ডিবি কার্যালয়ে আনার পরই অসুস্থবোধ করলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুরের মৃত্যু হয়। তাকে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মোহাম্মদ আলী হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ডিবি পুলিশ হাবিবকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসায় রাত পৌনে ৯টার দিকে সে মারা যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু

প্রকাশিত সময় : ০৪:৪৪:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩

বগুড়ায় ডিবি পুলিশ হেফাজতে আইনজীবীর এক সহকারীর (মুহুরি) মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম হাবিবুর রহমান হাবিব (৩৬)। হাবিবুরের স্বজনদের দাবি, ডিবি পুলিশের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বগুড়া জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে জেলা ডিবি পুলিশ হাবিবুরকে আটক করে। হাবিবুর রহমান বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবীর সহকারী ও জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বগুড়া ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, আটকের পর হাবিবুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসাপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাবিবুরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়। ডিবি পুলিশ সূত্র আরো জানায়, গত ২ আগস্ট শাজাহানপুর থানার জোড়া গ্রামের ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা খুকি বেওয়া নিখোঁজ হন। ৪ আগস্ট গ্রামের একটি পুকুর থেকে তার বস্তাবন্দদি লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় লাশের লাশের একটি পা পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে একই গ্রামের মনোয়ারা বেওয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে খুকি বেওয়ার অপর পা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মনোয়ারাকে ডিবি পুলিশ আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবুরের নাম উঠে আসে। হাবিবুর ২০১৩ সালে খুকি বেওয়ার সৎ ছেলে বিপুল হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী ছিলেন খুকি বেওয়া। হাবিবুরের মামা ও আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, সন্ধ্যার পর ডিবি পুলিশ সাদা পোষাকে বিনা ওয়ারেন্টে হাবিবুরকে আটক করে নিয়ে যায়। তার খোঁজে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের কাছে একাধিকবার ধর্না দিয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে এক সিনিয়র আইনজীবী আমাকে নিশ্চিত করেন, হাবিবুর ডিবি পুলিশের হেফাজতে আছে। এর কিছুক্ষণ পর তিনিই আমাকে হাবিবুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে এসে হাবিবুরের নিথর দেহ দেখতে পাই। হাবিবুর আমার সহকারী হিসেবে কাজ করতো। ডিবি পুলিশ তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেছেন তিনি। ডিবি পুলিশের নির্যাতনে হাবিবুরের মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, একটি হত্যা মামলায় হাবিবুরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তবে ডিবি কার্যালয়ে আনার পরই অসুস্থবোধ করলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুরের মৃত্যু হয়। তাকে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মোহাম্মদ আলী হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ডিবি পুলিশ হাবিবকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসায় রাত পৌনে ৯টার দিকে সে মারা যায়।