শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পোস্টার ছেঁড়ায় প্রতিবন্ধীকে ক্র্যাচ দিয়ে পেটালেন যুবলীগ নেতা

নেতাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে- এমন অভিযোগে প্রকাশ্যে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ও শারীরিক প্রতিবন্ধীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন এক যুবলীগ নেতা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মারধরের শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির নাম লিটন (৪০)। তিনি ভবানীপুর বাজার এলাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। বাজারের লোকজনের কাছ টাকা তুলে তার দিন চলে। আর লিটনকে মারধর করা সোহেল রানা (৩০) সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকায় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক। তিনি ওই এলাকার মৃত আলমের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় লিটনের কাঠের তৈরি ক্র্যাচ (যাতে ভর দিয়ে সে চলে) কেড়ে নেন যুবলীগ নেতা সোহেল। এতে তিনি মাটিতে পরে যান। এ সময় সোহেল ক্র্যাচ দিয়ে লিটনকে বেধড়ক পেটান। পেটানোর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ক্র্যাচের উপর ভর দিয়ে চলাচল করছিলেন লিটন। এ সময় ওই যুবলীগ নেতা দৌঁড়ে এসে লিটনকে বকাঝকা শুরু করেন। পরে তার হাতে থাকা কাঠের ক্র্যাচটি কেড়ে নিলে সড়কের উপর পড়ে যান লিটন। পরে ওই ক্র্যাচ দিয়ে যুবলীগ নেতা লিটনকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি বাধা দিতে চেষ্টা করেন। আর লিটন মাটিতে বসা দুই হাত দিয়ে আঘাত ফেরানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত সোহেল রানা আরও বেশি পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় ব্যক্তিটি চলে যান। লিটন মার খেয়ে একসময় চুপসে যান। পরে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান ওই নেতা। যুবলীগ নেতা সোহেল রানা বলেন, ‘মাদকাসক্ত ওই ব্যক্তি চুরিসহ এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন আগে গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে স্থানীয়রা মারধর করে তার পায়ের উপর গাড়ি তুলে দেয়। এতে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। তাই তিনি এখন লাঠিতে ভর দিয়ে চলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ছবি সম্বলিত সাঁটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন লিটন। এ বিষয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি অন্য এক ব্যক্তির কথায় পোস্টার ছিঁড়েছেন বলে জানান। পরে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি অস্বীকার করেন। এতে রাগান্বিত হয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেই। পরে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর বাজারে লিটনের সামনে পড়লে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। আমাকে হুমকি দিলে তাকে মারধর করে ছেড়ে দিয়েছি।’ গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এসএম আলতাফ হোসেন বলেন, ‘গাজীপুরের সদর উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দিয়েছি। তাই বর্তমানে প্রচার সম্পাদক পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তিনি হয়তো ভেঙে দেওয়া কমিটির পরিচয় দিয়ে চলছেন। আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দেখব।’ জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহতাব উদ্দিনের মোবাইল ফোন একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সানেয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’- দৈনিক আমাদের সময়

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

পোস্টার ছেঁড়ায় প্রতিবন্ধীকে ক্র্যাচ দিয়ে পেটালেন যুবলীগ নেতা

প্রকাশিত সময় : ০৪:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩

নেতাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে- এমন অভিযোগে প্রকাশ্যে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ও শারীরিক প্রতিবন্ধীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন এক যুবলীগ নেতা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মারধরের শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির নাম লিটন (৪০)। তিনি ভবানীপুর বাজার এলাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। বাজারের লোকজনের কাছ টাকা তুলে তার দিন চলে। আর লিটনকে মারধর করা সোহেল রানা (৩০) সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকায় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক। তিনি ওই এলাকার মৃত আলমের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় লিটনের কাঠের তৈরি ক্র্যাচ (যাতে ভর দিয়ে সে চলে) কেড়ে নেন যুবলীগ নেতা সোহেল। এতে তিনি মাটিতে পরে যান। এ সময় সোহেল ক্র্যাচ দিয়ে লিটনকে বেধড়ক পেটান। পেটানোর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ক্র্যাচের উপর ভর দিয়ে চলাচল করছিলেন লিটন। এ সময় ওই যুবলীগ নেতা দৌঁড়ে এসে লিটনকে বকাঝকা শুরু করেন। পরে তার হাতে থাকা কাঠের ক্র্যাচটি কেড়ে নিলে সড়কের উপর পড়ে যান লিটন। পরে ওই ক্র্যাচ দিয়ে যুবলীগ নেতা লিটনকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি বাধা দিতে চেষ্টা করেন। আর লিটন মাটিতে বসা দুই হাত দিয়ে আঘাত ফেরানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত সোহেল রানা আরও বেশি পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় ব্যক্তিটি চলে যান। লিটন মার খেয়ে একসময় চুপসে যান। পরে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান ওই নেতা। যুবলীগ নেতা সোহেল রানা বলেন, ‘মাদকাসক্ত ওই ব্যক্তি চুরিসহ এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন আগে গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে স্থানীয়রা মারধর করে তার পায়ের উপর গাড়ি তুলে দেয়। এতে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। তাই তিনি এখন লাঠিতে ভর দিয়ে চলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ছবি সম্বলিত সাঁটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন লিটন। এ বিষয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি অন্য এক ব্যক্তির কথায় পোস্টার ছিঁড়েছেন বলে জানান। পরে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি অস্বীকার করেন। এতে রাগান্বিত হয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেই। পরে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর বাজারে লিটনের সামনে পড়লে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। আমাকে হুমকি দিলে তাকে মারধর করে ছেড়ে দিয়েছি।’ গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এসএম আলতাফ হোসেন বলেন, ‘গাজীপুরের সদর উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দিয়েছি। তাই বর্তমানে প্রচার সম্পাদক পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তিনি হয়তো ভেঙে দেওয়া কমিটির পরিচয় দিয়ে চলছেন। আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দেখব।’ জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহতাব উদ্দিনের মোবাইল ফোন একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সানেয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’- দৈনিক আমাদের সময়