শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বোমার চেয়ে রোগে মরতে পারেন বেশি ফিলিস্তিনি : ডব্লিউএইচও

গাজা উপত্যকার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যদি সংস্কার করা না হয়, তাহলে বোমার আঘাতের তুলনায় রোগের কারণে বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মঙ্গলবার সংস্থাটির একজন মুখপাত্র গাজায় শিশুদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণে ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন;

যাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশিই শিশু। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ আছেন আরও অনেক মানুষ।

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলার প্রতিশোধে গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করে গত ৭ অক্টোবর উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। একই দিন ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে গাজায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে রাখে হামাস। ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন এক হাজার ২০০ জন; যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

জেনেভায় জাতিসংঘের এক ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন, ‘‘গাজার এই ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার করতে না পারলে আমরা বোমাবর্ষণে যত মানুষ মারা গেছেন তার চেয়ে রোগে বেশি মানুষের মৃত্যু দেখবো।’’

তিনি গাজায় সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে শিশুদের মাঝে ডায়রিয়ার প্রকোপ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে নভেম্বরের শুরুতে অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার ১০০ গুণেরও বেশি বেড়েছে।

গত সাত সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, উপত্যকার ৩৫ হাসপাতালের প্রায় সবগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কয়েক দিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া গাজার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস শাখার একাংশ মঙ্গলবার চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, গাজায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের প্রথম দফার চারদিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সোমবার আরও অতিরিক্ত দু’দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, মঙ্গলবার এবং বুধবার ১০ জন করে— মোট ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে দু’দিনে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থাকা ৬০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন।

এর আগে, রোববার চার বছর বয়সী ইসরায়েলি-আমেরিকান এক মেয়ে শিশুসহ ১৭ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। এর মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৮ জিম্মি হামাসের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। একই দিন ৩৯ ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১১৭ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় এখনও বন্দী মোট জিম্মির সংখ্যা ১৮৪। যার মধ্যে ১৪ জন বিদেশি এবং ৮০ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বোমার চেয়ে রোগে মরতে পারেন বেশি ফিলিস্তিনি : ডব্লিউএইচও

প্রকাশিত সময় : ১০:১৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

গাজা উপত্যকার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যদি সংস্কার করা না হয়, তাহলে বোমার আঘাতের তুলনায় রোগের কারণে বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মঙ্গলবার সংস্থাটির একজন মুখপাত্র গাজায় শিশুদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণে ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন;

যাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশিই শিশু। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ আছেন আরও অনেক মানুষ।

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলার প্রতিশোধে গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করে গত ৭ অক্টোবর উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। একই দিন ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে গাজায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে রাখে হামাস। ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন এক হাজার ২০০ জন; যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

জেনেভায় জাতিসংঘের এক ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন, ‘‘গাজার এই ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার করতে না পারলে আমরা বোমাবর্ষণে যত মানুষ মারা গেছেন তার চেয়ে রোগে বেশি মানুষের মৃত্যু দেখবো।’’

তিনি গাজায় সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে শিশুদের মাঝে ডায়রিয়ার প্রকোপ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে নভেম্বরের শুরুতে অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার ১০০ গুণেরও বেশি বেড়েছে।

গত সাত সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, উপত্যকার ৩৫ হাসপাতালের প্রায় সবগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কয়েক দিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া গাজার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস শাখার একাংশ মঙ্গলবার চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, গাজায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের প্রথম দফার চারদিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সোমবার আরও অতিরিক্ত দু’দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, মঙ্গলবার এবং বুধবার ১০ জন করে— মোট ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে দু’দিনে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থাকা ৬০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন।

এর আগে, রোববার চার বছর বয়সী ইসরায়েলি-আমেরিকান এক মেয়ে শিশুসহ ১৭ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। এর মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫৮ জিম্মি হামাসের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। একই দিন ৩৯ ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১১৭ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় এখনও বন্দী মোট জিম্মির সংখ্যা ১৮৪। যার মধ্যে ১৪ জন বিদেশি এবং ৮০ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।