বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মানবতাবিরোধী অপরাধ : বাগেরহাটের ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে বাগেরহাটের সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক  অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।  বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন।ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, খান আকরাম হোসেন, মকবুল মোল্লা, শেখ মো. উকিল উদ্দিন, খান আশরাফ আলী, রুস্তম আলী মোল্লা, শেখ ইদ্রিস ও শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল। তাদের মধ্যে খান আকরাম হোসেন, মকবুল মোল্লা ও শেখ মো. উকিল উদ্দিন কারাবন্দি আছেন। বাকি চারজন পলাতক।এর আগে গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গত ৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য ৯ নভেম্বর দিন ঠিক করেছিলেন। কিন্তু রায়ের দিন আসামির মৃত্যুর তথ্য পাওয়ায় রায়ের তারিখ পিছিয়ে দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতাই ৩০ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১৭ সালের ৩১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগগুলো হলো-

এক নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৬ মে ১৫/২০ জন রাজাকার ও ২৫/৩০ জন পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষদের ওপর অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে ৪০/৫০টি বাড়ির সমস্ত মালামাল লুণ্ঠন করে, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, দুইজন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করে এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।

দুই নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই আসামিরা বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়।

তিন নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুইজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।

চার নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৭ নভেস্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

পাঁচ নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল গ্রাম থেকে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে অন্যায় আটক ও অপহরণ করে মোড়লগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাটির ব্রিজের উপরে নিয়ে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে।

ছয় নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে অবৈধভাবে আটক করে হত্যা করে এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে সলিমাসহ চারজনকে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।

সাত নম্বর অভিযোগ: বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন গজালিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রী কমলা রানী কর্মকারকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করতে থাকে। আসামিরা শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে কমলা রানী কর্মকারকে জোরপূবক অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে এনে আটকিয়ে রাখে। উল্লিখিত আসামিসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে কমলা রানী কর্মকারসহ আটককৃত অন্যান্য চারজনকে দীর্ঘদিন রাজাকার ক্যাম্পে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। প্রায় এক মাস শারীরিক নির্যাতনের পর কমলা রানী কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ : বাগেরহাটের ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত সময় : ০৪:৩৭:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে বাগেরহাটের সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক  অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।  বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন।ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, খান আকরাম হোসেন, মকবুল মোল্লা, শেখ মো. উকিল উদ্দিন, খান আশরাফ আলী, রুস্তম আলী মোল্লা, শেখ ইদ্রিস ও শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল। তাদের মধ্যে খান আকরাম হোসেন, মকবুল মোল্লা ও শেখ মো. উকিল উদ্দিন কারাবন্দি আছেন। বাকি চারজন পলাতক।এর আগে গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গত ৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য ৯ নভেম্বর দিন ঠিক করেছিলেন। কিন্তু রায়ের দিন আসামির মৃত্যুর তথ্য পাওয়ায় রায়ের তারিখ পিছিয়ে দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতাই ৩০ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১৭ সালের ৩১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগগুলো হলো-

এক নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৬ মে ১৫/২০ জন রাজাকার ও ২৫/৩০ জন পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষদের ওপর অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে ৪০/৫০টি বাড়ির সমস্ত মালামাল লুণ্ঠন করে, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, দুইজন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করে এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।

দুই নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই আসামিরা বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়।

তিন নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুইজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।

চার নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৭ নভেস্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

পাঁচ নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল গ্রাম থেকে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে অন্যায় আটক ও অপহরণ করে মোড়লগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাটির ব্রিজের উপরে নিয়ে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে।

ছয় নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে অবৈধভাবে আটক করে হত্যা করে এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে সলিমাসহ চারজনকে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।

সাত নম্বর অভিযোগ: বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন গজালিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রী কমলা রানী কর্মকারকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করতে থাকে। আসামিরা শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে কমলা রানী কর্মকারকে জোরপূবক অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে এনে আটকিয়ে রাখে। উল্লিখিত আসামিসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে কমলা রানী কর্মকারসহ আটককৃত অন্যান্য চারজনকে দীর্ঘদিন রাজাকার ক্যাম্পে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। প্রায় এক মাস শারীরিক নির্যাতনের পর কমলা রানী কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।