শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে মাঠে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিষ্ঠান

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ, সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তবে মার্কিন এই দুই প্রতিষ্ঠান অন্য সব সংস্থার মত শুধু কেন্দ্রে ভোট দেখেই দায় সারবে না। বরং আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটের আগে এবং পরের সহিংসতা ও ত্রুটিগুলো গভীরভাবে মূল্যায়ন করতেই পাঠানো হয়েছে ছোট এই ‘যৌথ কারিগরী মূল্যায়ন দল’। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। আইআরআই-য়ের ওয়েবসাইটের বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শনিবার বাংলাদেশে আসা আইআরআই ও এনডিআইর পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল ছয় থেকে আট সপ্তাহ অবস্থান করবে। অবস্থানকালে নির্বাচন পূর্ববর্তী, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংস পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে এবং সেগুলোর মূল্যায়ন করবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই পর্যবেক্ষক দল বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ করবেন। এরমধ্যে রয়েছে নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে সহিংসতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সহিংসতা, আন্ত-দলীয় সহিংসতা, অনলাইনে হয়রানি ও হুমকি। এছাড়া ভবিষ্যৎ নির্বাচনে যাতে সহিংসতা কমানো হয়, সেটার গঠনমূলক সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন ওই কারিগরি দল দেবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথও জানান, বাংলাদেশের নির্বাচনের সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করবে এই দুটি প্রতিষ্ঠান। শুধু রাজনৈতিক সহিংসতা না, ভোটের আগে পরের সব পর্যবেক্ষণ তাদের প্রতিবেদনে থাকবে। এদিকে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অতীতের দুটি জাতীয় নির্বাচন দেশে-বিদেশে নানা বিতর্ক তৈরি করেছে। এ কারণে আগামীতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতেই যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশকে এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো এই দল ভোটের দিনের ভোটের চিত্র দেখতে আসছে না। যখন কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক দল ভোট পর্যবেক্ষণে আসেন তখন তারা বড় কোনো টিম পাঠায়। সেই টিম নির্বাচনের দিন সারাদেশের ভোটগ্রহণের সব চিত্র পর্যবেক্ষণ করেন। তারা যদি শুধু নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আসতো তাহলে বিশাল টিম পাঠাতো। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‍্যাব ও ছয়জন কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট হয়। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ ছিলো দেশটির। যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রহ সম্পর্কে নির্বাচন বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে নতুন করে একটা সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার একটা সুযোগ ছিলো। হয়তো সেটি নিশ্চিত হচ্ছে না। সে কারণে এটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন কোনো জায়গায় সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ থাকে না, অর্থাৎ সব দলের অংশগ্রহণ থাকে না, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যেসব ভোট নিয়ে প্রশ্ন থাকে। শুধুমাত্র সেসব জায়গায় পর্যবেক্ষক পাঠানোর বদলে কারিগরি টিম পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থা দুটি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করেছে ১৫৬ জন। নির্বাচন কমিশন জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডাচ, ইরাক, ফিলিস্তিন, জর্জিয়া, উগান্ডা, নরওয়ে, বুলগেরিয়া, কঙ্গো থেকে আগামী সাতই জানুয়ারির ভোট পর্যবেক্ষণের আবেদন করেছে। এর আগে নির্বাচনের চার মাস আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করলেও তারা শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো তারাও ভোট পর্যবেক্ষণে ছোট একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচনের সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে মাঠে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত সময় : ১০:৪৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ, সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তবে মার্কিন এই দুই প্রতিষ্ঠান অন্য সব সংস্থার মত শুধু কেন্দ্রে ভোট দেখেই দায় সারবে না। বরং আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটের আগে এবং পরের সহিংসতা ও ত্রুটিগুলো গভীরভাবে মূল্যায়ন করতেই পাঠানো হয়েছে ছোট এই ‘যৌথ কারিগরী মূল্যায়ন দল’। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। আইআরআই-য়ের ওয়েবসাইটের বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শনিবার বাংলাদেশে আসা আইআরআই ও এনডিআইর পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল ছয় থেকে আট সপ্তাহ অবস্থান করবে। অবস্থানকালে নির্বাচন পূর্ববর্তী, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংস পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে এবং সেগুলোর মূল্যায়ন করবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই পর্যবেক্ষক দল বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ করবেন। এরমধ্যে রয়েছে নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে সহিংসতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সহিংসতা, আন্ত-দলীয় সহিংসতা, অনলাইনে হয়রানি ও হুমকি। এছাড়া ভবিষ্যৎ নির্বাচনে যাতে সহিংসতা কমানো হয়, সেটার গঠনমূলক সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন ওই কারিগরি দল দেবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথও জানান, বাংলাদেশের নির্বাচনের সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করবে এই দুটি প্রতিষ্ঠান। শুধু রাজনৈতিক সহিংসতা না, ভোটের আগে পরের সব পর্যবেক্ষণ তাদের প্রতিবেদনে থাকবে। এদিকে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অতীতের দুটি জাতীয় নির্বাচন দেশে-বিদেশে নানা বিতর্ক তৈরি করেছে। এ কারণে আগামীতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতেই যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশকে এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো এই দল ভোটের দিনের ভোটের চিত্র দেখতে আসছে না। যখন কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক দল ভোট পর্যবেক্ষণে আসেন তখন তারা বড় কোনো টিম পাঠায়। সেই টিম নির্বাচনের দিন সারাদেশের ভোটগ্রহণের সব চিত্র পর্যবেক্ষণ করেন। তারা যদি শুধু নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আসতো তাহলে বিশাল টিম পাঠাতো। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‍্যাব ও ছয়জন কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট হয়। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ ছিলো দেশটির। যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রহ সম্পর্কে নির্বাচন বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে নতুন করে একটা সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার একটা সুযোগ ছিলো। হয়তো সেটি নিশ্চিত হচ্ছে না। সে কারণে এটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন কোনো জায়গায় সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ থাকে না, অর্থাৎ সব দলের অংশগ্রহণ থাকে না, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যেসব ভোট নিয়ে প্রশ্ন থাকে। শুধুমাত্র সেসব জায়গায় পর্যবেক্ষক পাঠানোর বদলে কারিগরি টিম পাঠায় যুক্তরাষ্ট্রের এই সংস্থা দুটি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করেছে ১৫৬ জন। নির্বাচন কমিশন জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডাচ, ইরাক, ফিলিস্তিন, জর্জিয়া, উগান্ডা, নরওয়ে, বুলগেরিয়া, কঙ্গো থেকে আগামী সাতই জানুয়ারির ভোট পর্যবেক্ষণের আবেদন করেছে। এর আগে নির্বাচনের চার মাস আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করলেও তারা শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো তারাও ভোট পর্যবেক্ষণে ছোট একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠাবে।