বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে ৮ উপায়ে নারীরা নিতে পারেন মনের যত্ন

নারীর জীবনে বহু রং। একই অঙ্গে বহু রূপ। একটা দিনে নারী অনেক চরিত্রে অভিনয় করেন, অনেক ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। নারীর মনের যত্ন নেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনের কথা লিখেছেন খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ইংরেজি বিভাগের গবেষক ও লেখক সায়মা সুলতানা।মমতাময়ী মা, স্নেহশীলা বোন, যত্নবান স্ত্রী কিংবা কর্তব্যপরায়ণ গৃহিণীর দায়িত্বের নিচে বরবারই চাপা পড়ে যায় নারীসত্তা। নারীর যেন নিজস্বতা বলতে কিছুই নেই। নানান দায়িত্বের চাপে আটকে থাকে নারীর জীবন।

মধ্যবিত্ত আটপৌরে নারীরা যেন ভুলতে বসেছে নিজেকে। কোনোমতে শরীরটা তো চলছে; কিন্তু মনের যত্ন নেওয়ার সময়-সুযোগ হয়ে ওঠে না বেশির ভাগ নারীর। কিন্তু একটু সচেতন হলেই আমরা নারীরা পারি মনের যত্ন নিতে।নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে ভালোবাসার প্রসঙ্গটি অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না।

ব্যাপারটি কিন্তু বেশ সরল ও সহজ। অন্যকে ভালোবাসলে তার ভালো-মন্দ, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, পছন্দ-অপছন্দের বিষয় জানতে হয়। অন্যের প্রয়োজন বুঝে যত্ন নেন আপনি। ছোট ছোট ভুল ক্ষমা করেন। ঠিক একই কাজটি করতে হবে নিজের সঙ্গেও।

নিজেকে ভালোবাসা মানে কিন্তু অন্যের প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়া নয়, বরং সামগ্রিক ভালোবাসার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। অন্যের পাশাপাশি নিজের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ভালোবাসা শুরু করতে পারেন।নিজের জন্য সময় বের করুন: খুব সামান্য হলেও দিনের কিছুটা সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। ওই ব্যক্তিগত সময়টায় আপনি আপনার পছন্দের কাজ করবেন। কিছুই না করেও চুপচাপ বসে থাকতে পারেন। বই পড়তে পারেন, কিংবা বন্ধুকে মুঠোফোনে কল দিয়ে কোনো সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। সিনেমা দেখুন, ছাদে যান, আঁকাআঁকি বা সেলাই করুন; কিন্তু এই সময়ে এমন কিছু ভাববেন না যা আপনাকে কষ্ট দেয়। 

কাজের তালিকা ধরে কাজ করুন: দিনের শুরুতেই বা আগের দিন রাতেই আপনার নিজের কর্মতালিকা করে রাখুন। এতে মানসিক চাপ যেমন কমে যাবে, তেমনি সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন হবে। সময় বাঁচবে এবং সময়কে কাজে লাগানোর জন্য এই বুদ্ধি বেশ কার্যকর। তবে কোনো কাজে ভুল হলে, নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ হবেন না। ভুল করা মানবিক। আপনার লক্ষ্য থাকবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুন্দরভাবে কাজ সম্পন্ন করে নিজের জন্য সময় বের করা।

মনোযোগ ধরে রাখুন, দুশ্চিন্তা কমান: কাজের সময় শুধু হাতে থাকা কাজটিই করুন। অন্য কোনো চিন্তা মাথায় আনবেন না। প্রয়োজনে দুশ্চিন্তা বা পরিকল্পনা করার জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ রাখুন। কাজের সময় কোনো দুশ্চিন্তা মাথায় এলে, নিজেকে বলবেন দুশ্চিন্তা করার জন্য অন্য সময় আছে। যেকোনো একটা কাজে মনোযোগ দিলে, কাজটিকে সর্বোচ্চ উপায়ে সুষ্ঠুভাবে শেষ করুন। এতে মন থাকবে চাপমুক্ত।

যত্ন নিন নিজের, যত্ন নিতে শিখুন: কাজের চাপে সবচেয়ে বেশি বিঘ্নিত হয় আমাদের খাবার রুটিন ও খাদ্যাভ্যাস। সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ না করা, সঠিক খাবার গ্রহণ না করার ফলে আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন। এতে শারীরিক সৌন্দর্য হারাবেন, বয়সের গতিশীলতা হারাচ্ছেন। ফলস্বরূপ আত্মবিশ্বাসেও খামতি হচ্ছে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, পরিচ্ছন্ন থাকুন, বিশ্রাম নিন, মেডিটেশন করুন। নারী হিসেবে মনে রাখতে হবে, মাতৃত্ব কিংবা নানা হরমোনের হেরফেরের সময়টায় নিজের বিশেষ যত্ন নিজেকেই নিতে হবে।

জানুন, শিখুন, পড়ুন: দেশ বা বিশ্বের খোঁজ রাখতে, দিন শুরু করুন সংবাদপত্রে নজর বুলিয়ে। নতুন কিছু শিখতে চেষ্টা করুন। ইন্টারনেটের কল্যাণে, আজকাল যেকোনো কিছু শেখা কিন্তু ভীষণ সহজ। নতুন কিছু শেখার ব্যাপারটি যেমন আনন্দের, এটা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। পরিবার বা সমাজে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। পছন্দের বিষয়ে পড়ুন। ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন।

যোগাযোগ হোক ইতিবাচক: আত্মীয়তা বা বন্ধুত্ব রক্ষার্থে আমরা প্রায়ই নেতিবাচক মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে ফেলি। ব্যাপারটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ও বাস্তব জীবনের জন্য বিপজ্জনক। নেতিবাচক মানুষকে এড়িয়ে চলার কৌশল রপ্ত করুন। নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে। দেখা করুন, গল্প করুন, আলোচনা করুন, মন খুলে হাসুন তাদের সাথে। এতে একাকিত্ব, বিষাদ দূর হবে। আবার হতেও পারে, গল্পে গল্পে জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। হয়তো আপনার প্রয়োজনে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন আর তাঁর প্রয়োজনে আপনি পাশে দাঁড়াবেন।

লিখুন: জীবনের গল্পে আনন্দ যেমন থাকে, ছোট-বড় দুঃখ আর মন খারাপও থাকে, যা আপনি কাউকে বলতে পারেন না। কিছু স্বপ্ন বা অলীক কল্পনাও নিশ্চয় আছে, যা ভাবতে ভালো লাগে। ব্যস এ সবই লিখে ফেলুন। অনেক বছর বাদে হয়তো একদিন পড়বেন, স্মৃতি রোমন্থন করবেন। অথবা কিছু একটা লিখে, হঠাৎ একটা বই ছাপিয়ে ফেলবেন। হতেও পারে জে কে রাওলিংয়ের মতো বিখ্যাত, ধনী লেখিকা হয়ে উঠলেন। কে জানে, জীবনের কোথায় সফলতা লুকিয়ে আছে। খুঁজুন না। বনফুলের লেখার নিমগাছ কবিতাটির কয়েক ছত্র দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই। ওই যে শেষ লাইন দুটি―‘বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।/ওদের বাড়ীর গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মী বউটার ঠিক এই দশা।’ এমন নিমগাছের জীবন যেন আপনার না হয় সে বিষয়ে সজাগ হোন, নিজের জন্য বাঁচুন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

যে ৮ উপায়ে নারীরা নিতে পারেন মনের যত্ন

প্রকাশিত সময় : ০৯:১৭:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩

নারীর জীবনে বহু রং। একই অঙ্গে বহু রূপ। একটা দিনে নারী অনেক চরিত্রে অভিনয় করেন, অনেক ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। নারীর মনের যত্ন নেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনের কথা লিখেছেন খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ইংরেজি বিভাগের গবেষক ও লেখক সায়মা সুলতানা।মমতাময়ী মা, স্নেহশীলা বোন, যত্নবান স্ত্রী কিংবা কর্তব্যপরায়ণ গৃহিণীর দায়িত্বের নিচে বরবারই চাপা পড়ে যায় নারীসত্তা। নারীর যেন নিজস্বতা বলতে কিছুই নেই। নানান দায়িত্বের চাপে আটকে থাকে নারীর জীবন।

মধ্যবিত্ত আটপৌরে নারীরা যেন ভুলতে বসেছে নিজেকে। কোনোমতে শরীরটা তো চলছে; কিন্তু মনের যত্ন নেওয়ার সময়-সুযোগ হয়ে ওঠে না বেশির ভাগ নারীর। কিন্তু একটু সচেতন হলেই আমরা নারীরা পারি মনের যত্ন নিতে।নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে ভালোবাসার প্রসঙ্গটি অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না।

ব্যাপারটি কিন্তু বেশ সরল ও সহজ। অন্যকে ভালোবাসলে তার ভালো-মন্দ, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, পছন্দ-অপছন্দের বিষয় জানতে হয়। অন্যের প্রয়োজন বুঝে যত্ন নেন আপনি। ছোট ছোট ভুল ক্ষমা করেন। ঠিক একই কাজটি করতে হবে নিজের সঙ্গেও।

নিজেকে ভালোবাসা মানে কিন্তু অন্যের প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়া নয়, বরং সামগ্রিক ভালোবাসার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। অন্যের পাশাপাশি নিজের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ভালোবাসা শুরু করতে পারেন।নিজের জন্য সময় বের করুন: খুব সামান্য হলেও দিনের কিছুটা সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। ওই ব্যক্তিগত সময়টায় আপনি আপনার পছন্দের কাজ করবেন। কিছুই না করেও চুপচাপ বসে থাকতে পারেন। বই পড়তে পারেন, কিংবা বন্ধুকে মুঠোফোনে কল দিয়ে কোনো সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। সিনেমা দেখুন, ছাদে যান, আঁকাআঁকি বা সেলাই করুন; কিন্তু এই সময়ে এমন কিছু ভাববেন না যা আপনাকে কষ্ট দেয়। 

কাজের তালিকা ধরে কাজ করুন: দিনের শুরুতেই বা আগের দিন রাতেই আপনার নিজের কর্মতালিকা করে রাখুন। এতে মানসিক চাপ যেমন কমে যাবে, তেমনি সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন হবে। সময় বাঁচবে এবং সময়কে কাজে লাগানোর জন্য এই বুদ্ধি বেশ কার্যকর। তবে কোনো কাজে ভুল হলে, নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ হবেন না। ভুল করা মানবিক। আপনার লক্ষ্য থাকবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুন্দরভাবে কাজ সম্পন্ন করে নিজের জন্য সময় বের করা।

মনোযোগ ধরে রাখুন, দুশ্চিন্তা কমান: কাজের সময় শুধু হাতে থাকা কাজটিই করুন। অন্য কোনো চিন্তা মাথায় আনবেন না। প্রয়োজনে দুশ্চিন্তা বা পরিকল্পনা করার জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ রাখুন। কাজের সময় কোনো দুশ্চিন্তা মাথায় এলে, নিজেকে বলবেন দুশ্চিন্তা করার জন্য অন্য সময় আছে। যেকোনো একটা কাজে মনোযোগ দিলে, কাজটিকে সর্বোচ্চ উপায়ে সুষ্ঠুভাবে শেষ করুন। এতে মন থাকবে চাপমুক্ত।

যত্ন নিন নিজের, যত্ন নিতে শিখুন: কাজের চাপে সবচেয়ে বেশি বিঘ্নিত হয় আমাদের খাবার রুটিন ও খাদ্যাভ্যাস। সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ না করা, সঠিক খাবার গ্রহণ না করার ফলে আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন। এতে শারীরিক সৌন্দর্য হারাবেন, বয়সের গতিশীলতা হারাচ্ছেন। ফলস্বরূপ আত্মবিশ্বাসেও খামতি হচ্ছে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, পরিচ্ছন্ন থাকুন, বিশ্রাম নিন, মেডিটেশন করুন। নারী হিসেবে মনে রাখতে হবে, মাতৃত্ব কিংবা নানা হরমোনের হেরফেরের সময়টায় নিজের বিশেষ যত্ন নিজেকেই নিতে হবে।

জানুন, শিখুন, পড়ুন: দেশ বা বিশ্বের খোঁজ রাখতে, দিন শুরু করুন সংবাদপত্রে নজর বুলিয়ে। নতুন কিছু শিখতে চেষ্টা করুন। ইন্টারনেটের কল্যাণে, আজকাল যেকোনো কিছু শেখা কিন্তু ভীষণ সহজ। নতুন কিছু শেখার ব্যাপারটি যেমন আনন্দের, এটা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। পরিবার বা সমাজে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। পছন্দের বিষয়ে পড়ুন। ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন।

যোগাযোগ হোক ইতিবাচক: আত্মীয়তা বা বন্ধুত্ব রক্ষার্থে আমরা প্রায়ই নেতিবাচক মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে ফেলি। ব্যাপারটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ও বাস্তব জীবনের জন্য বিপজ্জনক। নেতিবাচক মানুষকে এড়িয়ে চলার কৌশল রপ্ত করুন। নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে। দেখা করুন, গল্প করুন, আলোচনা করুন, মন খুলে হাসুন তাদের সাথে। এতে একাকিত্ব, বিষাদ দূর হবে। আবার হতেও পারে, গল্পে গল্পে জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। হয়তো আপনার প্রয়োজনে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন আর তাঁর প্রয়োজনে আপনি পাশে দাঁড়াবেন।

লিখুন: জীবনের গল্পে আনন্দ যেমন থাকে, ছোট-বড় দুঃখ আর মন খারাপও থাকে, যা আপনি কাউকে বলতে পারেন না। কিছু স্বপ্ন বা অলীক কল্পনাও নিশ্চয় আছে, যা ভাবতে ভালো লাগে। ব্যস এ সবই লিখে ফেলুন। অনেক বছর বাদে হয়তো একদিন পড়বেন, স্মৃতি রোমন্থন করবেন। অথবা কিছু একটা লিখে, হঠাৎ একটা বই ছাপিয়ে ফেলবেন। হতেও পারে জে কে রাওলিংয়ের মতো বিখ্যাত, ধনী লেখিকা হয়ে উঠলেন। কে জানে, জীবনের কোথায় সফলতা লুকিয়ে আছে। খুঁজুন না। বনফুলের লেখার নিমগাছ কবিতাটির কয়েক ছত্র দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই। ওই যে শেষ লাইন দুটি―‘বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।/ওদের বাড়ীর গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মী বউটার ঠিক এই দশা।’ এমন নিমগাছের জীবন যেন আপনার না হয় সে বিষয়ে সজাগ হোন, নিজের জন্য বাঁচুন।