রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব ইজতেমা : তুরাগ তীরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে দলে দলে ভাগ হয়ে স্বেছাশ্রম দিচ্ছেন। সামিয়ানা টানানো, রাস্তাঘাট মেরামত, নিচু জমি ভরাট ও পয়োনিষ্কাশন কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। তাবলিগ-জামাতের অনুসারী, স্থানীয় মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ইজতেমা মাঠে স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করছেন।

আয়োজকদের মতে এরইমধ্যে ইজতেমা ময়দানে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শীতের ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সর্বাধিক সংখক মুসল্লি এবারের ইজতেমায় যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইজতেমা সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব। মাঝে চারদিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব এবং ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে মাওলানা যোবায়েরপন্থি মুসল্লিরা এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সা’দ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন।

 

গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৬০ একর জায়গায় বিশাল সামিয়ানা টাঙানোর কাজ প্রায় শেষ। তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৈরি করছেন পল্টুন ব্রিজ। যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন। বিশাল ময়দানে জেলা অনুযায়ী খিত্তাভিত্তিক চলছে মাইক বাঁধা এবং বৈদ্যুতিক তার ও বাতি টাঙানোর কাজ।

এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি উৎপাদন নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রায় ৮ হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ ও ২৫টি ফগার মেশিনে মশক নিধনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইজতেমার মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য টঙ্গীর তুরাগ নদের উপরে ৬টি ভাসমান সেতু তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর ৫টি নির্মাণ করছে সেনাবাহিনী আর একটি তৈরি করছে বিআইডব্লিউটিএ।

 

এদিকে এবারের দু’পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গত ২২ জানুয়ারি ইজতেমা ময়দানে প্রস্তুতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত ফলোআপ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম-সচিব মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, পুলিশের মহা-পরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইজতেমার উভয় পক্ষকে মিলেমিশে থাকার অনুরোধ জানানো হয়।

 

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে গিয়ে দেখা গেছে, তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের পরার্মশক্রমে ইজতেমার যাবতীয় প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। এতে তাবলিগ জামাতভুক্ত মুসল্লি ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও শরীক হচ্ছেন। দলবদ্ধভাবে কেউ বয়ানের মঞ্চ তৈরি, কেউ বিদেশিদের আবাসস্থলে টিনের ছাপরা, বাঁশ দিয়ে ফুলের বাগানে বেড়া দেওয়া, সৌচাগার নির্মাণসহ আনুসাঙ্গিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

ইজতেমায় আগত বিদেশি মুসল্লিদের জন্য ময়দানের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে তৈরি করা হচ্ছে টিনের ছাউনি দিয়ে তার নিচে চটের ছাউনির প্যান্ডেল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। বিদেশি মেহমানদের উন্নত মানের অযু, গোসল ও বাথরুমের পৃথক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের রান্নার জন্য সরবরাহ করা হবে প্রাকৃতিক গ্যাস।

 

 

বিশেষ করে বিদেশি মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তাদের পুরো ছাউনিটি আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেয় পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বীদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ানসমূহ তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে শুনানোর ব্যবস্থাও থাকছে। বিদেশি ছাউনির পূর্ব পাশে তৈরি করা হচ্ছে মূল বয়ান মঞ্চ।

 

শুক্রবার মূল মঞ্চের কাছে গিয়ে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেশ কিছু মুসল্লি মূল মঞ্চটি তৈরি করছেন। সু’উচ্চ এ মঞ্চটিতে দেশ বিদেশের বরেণ্য আলেমগণ বয়ান পেশ করবেন। আর সেসব বয়ান বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করে প্রচার করা হবে এ মঞ্চ থেকেই। মঞ্চের চারপাশে লাগানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা।

ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণ দিকে বেশ কিছু অংশে এখনো চটের ছাউনি দেওয়া হয়নি। আয়োজকরা বলছেন দুই তিন দিনের মধ্যেই এগুলো প্রস্তুত হয়ে যাবে। ময়দানে মাইক ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর এসব কাজই হচ্ছে ইজতেমার মুরুব্বিদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে।

 

ঢাকার গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মসজিদ থেকে আসা ইজতেমার কাজে নিয়োজিত মুসল্লি হাজী রেজাউল করিম বলেন, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য মেহনত করতে ময়দানে এসেছি এবং স্বেচ্ছায় কাজ করছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আবার বাড়ি ফিরে যাবো।

 

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। আগত মুসল্লিরা জেলাওয়ারী খিত্তায় অবস্থান করবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তরজমা করা হবে।

 

 

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, ইজতেমা ময়দান ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ওই হাসপাতালসহ চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে অন্তত ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

 

এদিকে তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসি টিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া স্পেশালাইজড টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নি নির্বাপনের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌ-টহলও থাকবে।

 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, দু’পর্বের ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বিশ্ব ইজতেমা : তুরাগ তীরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

প্রকাশিত সময় : ১১:৪৮:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে দলে দলে ভাগ হয়ে স্বেছাশ্রম দিচ্ছেন। সামিয়ানা টানানো, রাস্তাঘাট মেরামত, নিচু জমি ভরাট ও পয়োনিষ্কাশন কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। তাবলিগ-জামাতের অনুসারী, স্থানীয় মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ইজতেমা মাঠে স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করছেন।

আয়োজকদের মতে এরইমধ্যে ইজতেমা ময়দানে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শীতের ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সর্বাধিক সংখক মুসল্লি এবারের ইজতেমায় যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইজতেমা সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব। মাঝে চারদিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব এবং ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে মাওলানা যোবায়েরপন্থি মুসল্লিরা এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সা’দ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন।

 

গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৬০ একর জায়গায় বিশাল সামিয়ানা টাঙানোর কাজ প্রায় শেষ। তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৈরি করছেন পল্টুন ব্রিজ। যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন। বিশাল ময়দানে জেলা অনুযায়ী খিত্তাভিত্তিক চলছে মাইক বাঁধা এবং বৈদ্যুতিক তার ও বাতি টাঙানোর কাজ।

এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি উৎপাদন নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রায় ৮ হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ ও ২৫টি ফগার মেশিনে মশক নিধনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইজতেমার মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য টঙ্গীর তুরাগ নদের উপরে ৬টি ভাসমান সেতু তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর ৫টি নির্মাণ করছে সেনাবাহিনী আর একটি তৈরি করছে বিআইডব্লিউটিএ।

 

এদিকে এবারের দু’পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গত ২২ জানুয়ারি ইজতেমা ময়দানে প্রস্তুতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত ফলোআপ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম-সচিব মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, পুলিশের মহা-পরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইজতেমার উভয় পক্ষকে মিলেমিশে থাকার অনুরোধ জানানো হয়।

 

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে গিয়ে দেখা গেছে, তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের পরার্মশক্রমে ইজতেমার যাবতীয় প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। এতে তাবলিগ জামাতভুক্ত মুসল্লি ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও শরীক হচ্ছেন। দলবদ্ধভাবে কেউ বয়ানের মঞ্চ তৈরি, কেউ বিদেশিদের আবাসস্থলে টিনের ছাপরা, বাঁশ দিয়ে ফুলের বাগানে বেড়া দেওয়া, সৌচাগার নির্মাণসহ আনুসাঙ্গিক কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

ইজতেমায় আগত বিদেশি মুসল্লিদের জন্য ময়দানের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে তৈরি করা হচ্ছে টিনের ছাউনি দিয়ে তার নিচে চটের ছাউনির প্যান্ডেল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। বিদেশি মেহমানদের উন্নত মানের অযু, গোসল ও বাথরুমের পৃথক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের রান্নার জন্য সরবরাহ করা হবে প্রাকৃতিক গ্যাস।

 

 

বিশেষ করে বিদেশি মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তাদের পুরো ছাউনিটি আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেয় পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বীদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ানসমূহ তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে শুনানোর ব্যবস্থাও থাকছে। বিদেশি ছাউনির পূর্ব পাশে তৈরি করা হচ্ছে মূল বয়ান মঞ্চ।

 

শুক্রবার মূল মঞ্চের কাছে গিয়ে দেখা গেছে, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেশ কিছু মুসল্লি মূল মঞ্চটি তৈরি করছেন। সু’উচ্চ এ মঞ্চটিতে দেশ বিদেশের বরেণ্য আলেমগণ বয়ান পেশ করবেন। আর সেসব বয়ান বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করে প্রচার করা হবে এ মঞ্চ থেকেই। মঞ্চের চারপাশে লাগানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা।

ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণ দিকে বেশ কিছু অংশে এখনো চটের ছাউনি দেওয়া হয়নি। আয়োজকরা বলছেন দুই তিন দিনের মধ্যেই এগুলো প্রস্তুত হয়ে যাবে। ময়দানে মাইক ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর এসব কাজই হচ্ছে ইজতেমার মুরুব্বিদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে।

 

ঢাকার গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মসজিদ থেকে আসা ইজতেমার কাজে নিয়োজিত মুসল্লি হাজী রেজাউল করিম বলেন, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য মেহনত করতে ময়দানে এসেছি এবং স্বেচ্ছায় কাজ করছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আবার বাড়ি ফিরে যাবো।

 

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। আগত মুসল্লিরা জেলাওয়ারী খিত্তায় অবস্থান করবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তরজমা করা হবে।

 

 

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, ইজতেমা ময়দান ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ওই হাসপাতালসহ চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে অন্তত ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

 

এদিকে তাবলিগ জামাতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসি টিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া স্পেশালাইজড টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নি নির্বাপনের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌ-টহলও থাকবে।

 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, দু’পর্বের ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি।