রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণিত-ইংরেজি-গাইড বইও মিলছে বইমেলায়

পাঠক-লেখক ও জ্যেষ্ঠ প্রকাশকদের মতে, বইমেলার নীতিমালার ফাঁকফোকর গলে এক শ্রেণির প্রকাশক সৃজনশীল সাহিত্যের বইমেলার সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছেন।অমর একুশে বইমেলার প্রাঙ্গণ ঘুরে বিভিন্ন প্রকাশনীতে সৃজনশীল রচনার পাশাপাশি গণিত, ইংরেজি ও কম্পিউটার শেখার বই দেখা গেছে। দুটি প্রকাশনী দোয়েল ও সিসটেক পাবলিকেশনসের স্টলে সৃজনশীল কোনো রচনাই চোখে পড়েনি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিন ইউনিটের স্টল বরাদ্দ পাওয়া দোয়েল বিক্রি করছে ইংরেজি শেখার বই ‘কুইক ভোকাবুলারি’, ‘গ্রামার ভোকাবুলারি’, ‘হাইড অ্যান্ড সিক ওয়ার্ডস’-এর মতো বই। আছে গণিত শেখার বইও। প্রকাশনীটির বিক্রয় কর্মী জানালেন, এই বইগুলো ছাড়া কোনো গল্প-প্রবন্ধের বই নেই তাদের প্রকাশনীতে। দোয়েলের অফিশিয়াল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও কেউ সাড়া দেননি।

সিসটেক পাবলিকেশনস বিক্রি করছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নানা বিষয়ভিত্তিক বই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম সহায়িকা হিসেবে বইগুলোর চাহিদা রয়েছে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোতে। এ বিষয়ে সিসটেকের ম্যানেজার আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এমন বই নিয়ে সেই ১৯৯৫ সাল থেকে মেলায় অংশ নিচ্ছি। কেউ তো এসব বই নিয়ে কখনো প্রশ্ন তোলেননি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমিও কখনো বলেনি যে, এই বইগুলো নিয়ে মেলায় অংশ নেওয়া যাবে না। ’

মেলায় অংশ নেওয়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস বুক কর্নারে দেখা গেল সেখানে বিক্রি হচ্ছে ইংরেজি শেখার নানা বই। নতুন বই কী এসেছে জানতে চাইলে বিক্রয় কর্মীরা ‘অ্যান ইজি একসেস টু ইংলিশ গ্রামার’, ‘ডিকশনারি অব সিননিমস অ্যান্ড অ্যান্টোনিমস’, ‘দ্য আর্ট অব স্পিকিং’, ‘লার্নিং ইংলিশ দ্য ইজি ওয়ে’ বইগুলো এগিয়ে দেন।

এই বইগুলো কি সৃজনশীল বই কি না, জানতে চাইলে ফ্রেন্ডস বুক কর্নারের অন্যতম পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ক্ষিপ্ত হন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রদের জন্য নানা ধরনের বই প্রকাশ করছি। ইংরেজি শিক্ষা সহজ করার জন্য আমরা এই ধরনের বই প্রকাশ করছি। এই বইগুলো সৃজনশীল না হলেও এ বইগুলো তো দরকারি, তাই না?’

এই প্রকাশনীগুলো ছাড়াও মল্লিক ব্রাদার্স, মুক্তচিন্তা, আবীর প্রকাশন, গণপ্রকাশনের স্টলে দেখা গেল সেখানে ইংরেজি শিক্ষা, গণিত শিক্ষা আর হাতেখড়ির নানা বই বিক্রি করছে। চমনপ্রকাশের স্টলে পাওয়া গেল গণিত শিক্ষার একাধিক বই।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘ইংরেজি ও গণিত শেখার বই কিন্তু বেশ জনপ্রিয় এখন। টেন মিনিট স্কুলের আয়মান সাদিক, মুনজেরিন শহিদ আর অন্তিম মাহমুদের মতো জনপ্রিয় ইউটিউবারদের লেখা বইগুলোর চাহিদা অনেক। মানুষ দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকেন। আমার মনে হয় না এই ধরনের বইগুলো মেলার মূলভাব নষ্ট করে দেয়। ’

এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সচিব ও বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক হাসান কবীর বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে এসব বইকে কোনোভাবেই সৃজনশীল বই বলা যায় না। এই বইগুলোর মেলার মান নষ্ট করছে। টাস্কফোর্স কমিটি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বইমেলা পরিচালনা কমিটিকে এসব বইয়ের বিষয়ে সুপারিশ করেছে। সমস্যা হলো, বইমেলা পরিচালনা কমিটির একটি যৌথসভা ডেকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে নোটিশ দিতে হবে। ইংরেজি বা গণিত শিক্ষার বই যেগুলো রয়েছে বা যেগুলো রীতিমতো গাইড বইয়ের মতো সেগুলোর বিষয়ে টাস্কফোর্স কমিটিও পর্যবেক্ষণের তথ্য দিয়েছে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে। বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করা হবে। ’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

গণিত-ইংরেজি-গাইড বইও মিলছে বইমেলায়

প্রকাশিত সময় : ১০:৫৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পাঠক-লেখক ও জ্যেষ্ঠ প্রকাশকদের মতে, বইমেলার নীতিমালার ফাঁকফোকর গলে এক শ্রেণির প্রকাশক সৃজনশীল সাহিত্যের বইমেলার সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছেন।অমর একুশে বইমেলার প্রাঙ্গণ ঘুরে বিভিন্ন প্রকাশনীতে সৃজনশীল রচনার পাশাপাশি গণিত, ইংরেজি ও কম্পিউটার শেখার বই দেখা গেছে। দুটি প্রকাশনী দোয়েল ও সিসটেক পাবলিকেশনসের স্টলে সৃজনশীল কোনো রচনাই চোখে পড়েনি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিন ইউনিটের স্টল বরাদ্দ পাওয়া দোয়েল বিক্রি করছে ইংরেজি শেখার বই ‘কুইক ভোকাবুলারি’, ‘গ্রামার ভোকাবুলারি’, ‘হাইড অ্যান্ড সিক ওয়ার্ডস’-এর মতো বই। আছে গণিত শেখার বইও। প্রকাশনীটির বিক্রয় কর্মী জানালেন, এই বইগুলো ছাড়া কোনো গল্প-প্রবন্ধের বই নেই তাদের প্রকাশনীতে। দোয়েলের অফিশিয়াল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও কেউ সাড়া দেননি।

সিসটেক পাবলিকেশনস বিক্রি করছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নানা বিষয়ভিত্তিক বই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম সহায়িকা হিসেবে বইগুলোর চাহিদা রয়েছে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোতে। এ বিষয়ে সিসটেকের ম্যানেজার আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এমন বই নিয়ে সেই ১৯৯৫ সাল থেকে মেলায় অংশ নিচ্ছি। কেউ তো এসব বই নিয়ে কখনো প্রশ্ন তোলেননি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমিও কখনো বলেনি যে, এই বইগুলো নিয়ে মেলায় অংশ নেওয়া যাবে না। ’

মেলায় অংশ নেওয়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস বুক কর্নারে দেখা গেল সেখানে বিক্রি হচ্ছে ইংরেজি শেখার নানা বই। নতুন বই কী এসেছে জানতে চাইলে বিক্রয় কর্মীরা ‘অ্যান ইজি একসেস টু ইংলিশ গ্রামার’, ‘ডিকশনারি অব সিননিমস অ্যান্ড অ্যান্টোনিমস’, ‘দ্য আর্ট অব স্পিকিং’, ‘লার্নিং ইংলিশ দ্য ইজি ওয়ে’ বইগুলো এগিয়ে দেন।

এই বইগুলো কি সৃজনশীল বই কি না, জানতে চাইলে ফ্রেন্ডস বুক কর্নারের অন্যতম পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ক্ষিপ্ত হন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রদের জন্য নানা ধরনের বই প্রকাশ করছি। ইংরেজি শিক্ষা সহজ করার জন্য আমরা এই ধরনের বই প্রকাশ করছি। এই বইগুলো সৃজনশীল না হলেও এ বইগুলো তো দরকারি, তাই না?’

এই প্রকাশনীগুলো ছাড়াও মল্লিক ব্রাদার্স, মুক্তচিন্তা, আবীর প্রকাশন, গণপ্রকাশনের স্টলে দেখা গেল সেখানে ইংরেজি শিক্ষা, গণিত শিক্ষা আর হাতেখড়ির নানা বই বিক্রি করছে। চমনপ্রকাশের স্টলে পাওয়া গেল গণিত শিক্ষার একাধিক বই।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘ইংরেজি ও গণিত শেখার বই কিন্তু বেশ জনপ্রিয় এখন। টেন মিনিট স্কুলের আয়মান সাদিক, মুনজেরিন শহিদ আর অন্তিম মাহমুদের মতো জনপ্রিয় ইউটিউবারদের লেখা বইগুলোর চাহিদা অনেক। মানুষ দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকেন। আমার মনে হয় না এই ধরনের বইগুলো মেলার মূলভাব নষ্ট করে দেয়। ’

এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সচিব ও বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক হাসান কবীর বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে এসব বইকে কোনোভাবেই সৃজনশীল বই বলা যায় না। এই বইগুলোর মেলার মান নষ্ট করছে। টাস্কফোর্স কমিটি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বইমেলা পরিচালনা কমিটিকে এসব বইয়ের বিষয়ে সুপারিশ করেছে। সমস্যা হলো, বইমেলা পরিচালনা কমিটির একটি যৌথসভা ডেকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে নোটিশ দিতে হবে। ইংরেজি বা গণিত শিক্ষার বই যেগুলো রয়েছে বা যেগুলো রীতিমতো গাইড বইয়ের মতো সেগুলোর বিষয়ে টাস্কফোর্স কমিটিও পর্যবেক্ষণের তথ্য দিয়েছে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে। বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করা হবে। ’