বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ: গোলাগুলি-বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের উত্তরে বলিবাজার এলাকায় রোববার (৩ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আকাশ থেকে মর্টার শেল ও বোমা হামলা চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। জবাবে স্থলভাগ থেকে পাল্টা আক্রমণ করে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গোলাগুলি-বিস্ফোরণে এপারে টেকনাফের কয়েকটি ইউনিয়নে ভূকম্পন দেখা দেয়। এ সময় আতঙ্কে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন। তবে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি হলেও আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়নি। এদিকে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করায় বিপাকে পড়েছেন টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কয়েক শ’ মানুষ।

নাফ নদীর সীমান্তে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। সংঘাতের কারণে তারা ঘেরে নামতে পারছেন না। এ ছাড়া সীমান্তে সমস্যার কারণে টেকনাফ স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যেও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। টেকনাফ ও উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়ন হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ সদর, সাবরাং ও পালংখালীর বিপরীতে নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্য। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা রাজ্যের মধ্যভাগে টেকনাফ পৌর শহরের বিপরীতে মংডু টাউনশিপের অবস্থান। মংডুর পশ্চিমে নাফ নদী, পেছনে (পূর্ব দিকে) আকাশছোঁয়া কালাদান পাহাড়। তিন দিন ধরে মংডু শহরের উত্তর দিকের কুমিরখালী, বলিবাজার, নাইচাডং, কোয়াচিদং, শিলখালী, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপ্রু গ্রামে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। সেখানে সীমান্তচৌকি দখল ও পুনরুদ্ধার নিয়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় আরাকান আর্মি।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার রাতে আরাকান আর্মি বলিবাজার এলাকায় দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কয়েকটি সীমান্তচৌকিতে হামলা করে এবং একাধিক চৌকি দখলে নেয়। চৌকি পুনরুদ্ধারে রবিবার দুপুরে আকাশ থেকে হামলা চালায় সরকারি বাহিনী। মংডু টাউনশিপ থেকে হেলিকপ্টার উড়ে উত্তর দিকে বলিবাজারে গিয়ে মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপ করে আবার মংডুতে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য এপার থেকে দেখা যায়। নাফ নদীর তীরে নেটং পাহাড়ের নিচে ছোট্ট ঘরে থাকেন গাড়িচালক আলী আহমদ (৪৫) বলেন, ‘তিন দিন ধরে মংডু শহরের উত্তরে কয়েকটি গ্রামে সবচেয়ে বেশি বিস্ফোরণ হচ্ছে। রবিবার দুপুরে বিমান থেকে হামলা করা হয়েছে। ’

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, মংডুর দক্ষিণ-পূর্বাংশে রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপেও সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরাকান আর্মি মংডু শহরকে তিন দিক থেকে ঘিরে হামলা চালাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের পশ্চিম দিকের নাফ নদী অংশের নিয়ন্ত্রণ এখনো সরকারি বাহিনীর হাতে আছে। উখিয়ার পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তাঁর ইউনিয়নে সীমান্তঘেঁষা সাতটি গ্রামের মানুষ ধান-সবজি চাষ করতে সীমান্তে যেতে পারছেন না।

এতে হাজারো মানুষ বিপাকে পড়েছেন। টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে মংডুর আশপাশে কয়েকটি গ্রামে ৬০-৭০টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কুলালপাড়া, ডেইলপাড়াতে ভূকম্পন তৈরি হয়। আগের দুই রাতেও একই অবস্থা ছিল। ভূকম্পনের সময় ভয়ে শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে। রাখাইনের এ সংঘাত কখন থামবে, কেউ জানে না। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মংডুর আশপাশের গ্রামে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তে গুলি এসে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্ত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সতর্ক অবস্থায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ: গোলাগুলি-বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ

প্রকাশিত সময় : ১০:৩০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের উত্তরে বলিবাজার এলাকায় রোববার (৩ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আকাশ থেকে মর্টার শেল ও বোমা হামলা চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। জবাবে স্থলভাগ থেকে পাল্টা আক্রমণ করে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গোলাগুলি-বিস্ফোরণে এপারে টেকনাফের কয়েকটি ইউনিয়নে ভূকম্পন দেখা দেয়। এ সময় আতঙ্কে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন। তবে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি হলেও আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়নি। এদিকে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করায় বিপাকে পড়েছেন টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কয়েক শ’ মানুষ।

নাফ নদীর সীমান্তে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। সংঘাতের কারণে তারা ঘেরে নামতে পারছেন না। এ ছাড়া সীমান্তে সমস্যার কারণে টেকনাফ স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যেও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। টেকনাফ ও উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়ন হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ সদর, সাবরাং ও পালংখালীর বিপরীতে নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্য। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা রাজ্যের মধ্যভাগে টেকনাফ পৌর শহরের বিপরীতে মংডু টাউনশিপের অবস্থান। মংডুর পশ্চিমে নাফ নদী, পেছনে (পূর্ব দিকে) আকাশছোঁয়া কালাদান পাহাড়। তিন দিন ধরে মংডু শহরের উত্তর দিকের কুমিরখালী, বলিবাজার, নাইচাডং, কোয়াচিদং, শিলখালী, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপ্রু গ্রামে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। সেখানে সীমান্তচৌকি দখল ও পুনরুদ্ধার নিয়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় আরাকান আর্মি।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার রাতে আরাকান আর্মি বলিবাজার এলাকায় দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কয়েকটি সীমান্তচৌকিতে হামলা করে এবং একাধিক চৌকি দখলে নেয়। চৌকি পুনরুদ্ধারে রবিবার দুপুরে আকাশ থেকে হামলা চালায় সরকারি বাহিনী। মংডু টাউনশিপ থেকে হেলিকপ্টার উড়ে উত্তর দিকে বলিবাজারে গিয়ে মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপ করে আবার মংডুতে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য এপার থেকে দেখা যায়। নাফ নদীর তীরে নেটং পাহাড়ের নিচে ছোট্ট ঘরে থাকেন গাড়িচালক আলী আহমদ (৪৫) বলেন, ‘তিন দিন ধরে মংডু শহরের উত্তরে কয়েকটি গ্রামে সবচেয়ে বেশি বিস্ফোরণ হচ্ছে। রবিবার দুপুরে বিমান থেকে হামলা করা হয়েছে। ’

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, মংডুর দক্ষিণ-পূর্বাংশে রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপেও সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরাকান আর্মি মংডু শহরকে তিন দিক থেকে ঘিরে হামলা চালাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের পশ্চিম দিকের নাফ নদী অংশের নিয়ন্ত্রণ এখনো সরকারি বাহিনীর হাতে আছে। উখিয়ার পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তাঁর ইউনিয়নে সীমান্তঘেঁষা সাতটি গ্রামের মানুষ ধান-সবজি চাষ করতে সীমান্তে যেতে পারছেন না।

এতে হাজারো মানুষ বিপাকে পড়েছেন। টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে মংডুর আশপাশে কয়েকটি গ্রামে ৬০-৭০টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কুলালপাড়া, ডেইলপাড়াতে ভূকম্পন তৈরি হয়। আগের দুই রাতেও একই অবস্থা ছিল। ভূকম্পনের সময় ভয়ে শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে। রাখাইনের এ সংঘাত কখন থামবে, কেউ জানে না। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মংডুর আশপাশের গ্রামে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তে গুলি এসে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্ত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সতর্ক অবস্থায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।