শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

  • রমজান মাসে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরাও রোজা পালন করতে পারবেন
  • তবে রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ম মেনে ও সময় মতো খাবার খেতে হয়। সেই সঙ্গে দিনের বিভিন্ন সময় তাদের ওষুধ নেয়ার দরকার হতে পারে। ফলে রমজান মাসে সেহরি এবং ইফতারের মধ্যে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার প্রভাব পড়তে পারে তাদের শরীরে।

    কিন্তু মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে রোজা অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ফরজ। তাহলে রমজান মাসে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রোজা রাখার ক্ষেত্রে কী করণীয়?

    কিছু নিয়ম-কানুন মেনে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরাও রোজা পালন করতে পারবেন। সেই নিয়মকানুনগুলো এখানে দেওয়া হল।

    ১. ডায়াবেটিক পরীক্ষা

    যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের রোজার আগেই ভালোমত একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিনা। স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী তাদের রোজা পালন করা উচিত হবে কিনা বা কিভাবে করতে পারবেন, তা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া উচিত।

    চিকিৎসক ওষুধের ডোজ পরিবর্তন বা সমন্বয় করে দিতে পারেন। সেটা অনুসরণ করে তারা সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারেন। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে নিয়মকানুন মেনে রোজা রাখা যেতে পারে।

    ২. বিশেষ প্রস্তুতি

    দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের সুগার অতিরিক্ত কমে গিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। তখন প্রচুর ঘাম হয়, বুক ধড়ফড় করে।

    চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এরকম পরিস্থিতি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে শরবত বা বা মিষ্টি জাতীয় কিছু মুখে দিতে হবে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তখনি রোজা ভেঙ্গে ফেলার জন্য তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, না হলে মৃত্যু ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।

    এজন্য সবসময়ে সঙ্গে মিষ্টি চকলেট বহন করার পরার্মশ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

    ৩. ইনসুলিন ও রক্ত পরীক্ষা

    অনেকেই মনে করেন যে ইনসুলিন নিলে বা রক্ত পরীক্ষা করালে রোজা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা বা অনেক আলেমদের মতে এটা একটা ভুল ধারণা। রোজাদার ব্যক্তি ইনসুলিন নিলে বা ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে সেটা রোজা ভঙ্গ হবে না বলেছেন অনেক আলেম।

    চিকিৎসকদের পরামর্শ, নিয়ম অনুযায়ী একজন রোজাদার যেমন ইনসুলিন নেবেন, তেমনি শারীরিক কোন দুর্বলতা অনুভব করলে নিজেই রক্ত পরীক্ষা করে তার ডায়াবেটিস মেপে দেখবেন। সে অনুযায়ী রোজার বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কোনভাবেই যেন হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

    রোজা থাকার সময়ও সকালে এবং বিকালে নিয়মিতভাবে রক্ত পরীক্ষা করে শরীরের সুগারের অবস্থা দেখে নিতে হবে।

    ৪. সকালের খাবার ইফতারে আর রাতের খাবার সেহরিতে

    রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারের চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো, তারা সকালে যে খাবারটি খেতেন, সেটা খাবেন সন্ধ্যায় আর রাতে যে খাবারটি খেতেন, সেটা খাবেন সেহরিতে। এছাড়া ইফতারে ডায়াবেটিস রোগীদের ভাজাপোড়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো নয়।

    এক্ষেত্রে একজন ডায়াবেটিস রোগী দই চিড়া, রুটি বা সবজি, ১/২ টা খেজুর, ফলমূল খেলে শরীরের জন্য ভালো। সেহরিতে ভারী খাবারের পরিবর্তে জটিল শর্করা জাতীয় স্বাস্থ্যকর ও আশযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো।

    ৫. ফলের শরবত বা ডাবের পানি

    ডায়াবেটিক রোগীদের চিনি বা বাজারের বিভিন্ন ধরণের কৃত্রিম শরবত বাদ দিয়ে বরং ডাবের পানি বা ফলের শরবত ইফতারিতে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। সেহরিতে ভারী খাবারের পরিবর্তে যতটা বেশি সম্ভব তরল পান করতে হবে। ইফতারির পর থেকে সেহরি পর্যন্ত যতটা বেশি সম্ভব পানি পান করতে হবে।

    ৬. ব্যায়াম

    নিয়মিত ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার সময় নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। রোজায় ভারী ব্যায়াম শরীরে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সন্ধ্যার পর অথবা সেহরির আগে হাটাহাটি বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন রোজাদার ডায়াবেটিক রোগীরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

প্রকাশিত সময় : ১১:৩৪:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • রমজান মাসে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরাও রোজা পালন করতে পারবেন
  • তবে রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ম মেনে ও সময় মতো খাবার খেতে হয়। সেই সঙ্গে দিনের বিভিন্ন সময় তাদের ওষুধ নেয়ার দরকার হতে পারে। ফলে রমজান মাসে সেহরি এবং ইফতারের মধ্যে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার প্রভাব পড়তে পারে তাদের শরীরে।

    কিন্তু মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে রোজা অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ফরজ। তাহলে রমজান মাসে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রোজা রাখার ক্ষেত্রে কী করণীয়?

    কিছু নিয়ম-কানুন মেনে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরাও রোজা পালন করতে পারবেন। সেই নিয়মকানুনগুলো এখানে দেওয়া হল।

    ১. ডায়াবেটিক পরীক্ষা

    যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের রোজার আগেই ভালোমত একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিনা। স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী তাদের রোজা পালন করা উচিত হবে কিনা বা কিভাবে করতে পারবেন, তা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া উচিত।

    চিকিৎসক ওষুধের ডোজ পরিবর্তন বা সমন্বয় করে দিতে পারেন। সেটা অনুসরণ করে তারা সুস্থভাবে রোজা রাখতে পারেন। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে নিয়মকানুন মেনে রোজা রাখা যেতে পারে।

    ২. বিশেষ প্রস্তুতি

    দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের সুগার অতিরিক্ত কমে গিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। তখন প্রচুর ঘাম হয়, বুক ধড়ফড় করে।

    চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এরকম পরিস্থিতি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে শরবত বা বা মিষ্টি জাতীয় কিছু মুখে দিতে হবে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তখনি রোজা ভেঙ্গে ফেলার জন্য তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, না হলে মৃত্যু ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।

    এজন্য সবসময়ে সঙ্গে মিষ্টি চকলেট বহন করার পরার্মশ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

    ৩. ইনসুলিন ও রক্ত পরীক্ষা

    অনেকেই মনে করেন যে ইনসুলিন নিলে বা রক্ত পরীক্ষা করালে রোজা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা বা অনেক আলেমদের মতে এটা একটা ভুল ধারণা। রোজাদার ব্যক্তি ইনসুলিন নিলে বা ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে সেটা রোজা ভঙ্গ হবে না বলেছেন অনেক আলেম।

    চিকিৎসকদের পরামর্শ, নিয়ম অনুযায়ী একজন রোজাদার যেমন ইনসুলিন নেবেন, তেমনি শারীরিক কোন দুর্বলতা অনুভব করলে নিজেই রক্ত পরীক্ষা করে তার ডায়াবেটিস মেপে দেখবেন। সে অনুযায়ী রোজার বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কোনভাবেই যেন হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

    রোজা থাকার সময়ও সকালে এবং বিকালে নিয়মিতভাবে রক্ত পরীক্ষা করে শরীরের সুগারের অবস্থা দেখে নিতে হবে।

    ৪. সকালের খাবার ইফতারে আর রাতের খাবার সেহরিতে

    রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারের চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো, তারা সকালে যে খাবারটি খেতেন, সেটা খাবেন সন্ধ্যায় আর রাতে যে খাবারটি খেতেন, সেটা খাবেন সেহরিতে। এছাড়া ইফতারে ডায়াবেটিস রোগীদের ভাজাপোড়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ভালো নয়।

    এক্ষেত্রে একজন ডায়াবেটিস রোগী দই চিড়া, রুটি বা সবজি, ১/২ টা খেজুর, ফলমূল খেলে শরীরের জন্য ভালো। সেহরিতে ভারী খাবারের পরিবর্তে জটিল শর্করা জাতীয় স্বাস্থ্যকর ও আশযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো।

    ৫. ফলের শরবত বা ডাবের পানি

    ডায়াবেটিক রোগীদের চিনি বা বাজারের বিভিন্ন ধরণের কৃত্রিম শরবত বাদ দিয়ে বরং ডাবের পানি বা ফলের শরবত ইফতারিতে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। সেহরিতে ভারী খাবারের পরিবর্তে যতটা বেশি সম্ভব তরল পান করতে হবে। ইফতারির পর থেকে সেহরি পর্যন্ত যতটা বেশি সম্ভব পানি পান করতে হবে।

    ৬. ব্যায়াম

    নিয়মিত ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার সময় নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। রোজায় ভারী ব্যায়াম শরীরে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সন্ধ্যার পর অথবা সেহরির আগে হাটাহাটি বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন রোজাদার ডায়াবেটিক রোগীরা।