শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ আইসিজের

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) সর্বসম্মতভাবে ইসরায়েলকে দুর্ভিক্ষ এড়াতে ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় বাধাহীন ত্রাণ প্রবাহ সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালত বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই ‘অবিলম্বে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক পরিষেবা ও মানবিক সহায়তার বিধান’ অনুমোদন করতে হবে। গাজায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করার পর আইসিজের এমন আদেশ এলো। তারা গাজায় ত্রাণ প্রবেশ আটকে দিচ্ছে, এমন অভিযোগগুলোকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানুয়ারিতে ইসরায়েলকে আদেশ দিয়েছিল দ্যা হেগের এই আন্তর্জাতিক আদালত। আদালতের কাছে এই আদেশকে আরও জোরদার করার আর্জি জানিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তারপরই সর্বশেষ এই আদেশ জারি করেছে আইসিজে; জানিয়েছে বিবিসি। আইসিজের আদেশ মানায় আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করার কোনো ক্ষমতা এ আদালতের নেই। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও অন্যান্যদের মাধ্যমে পরিচালিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, গাজায় একটি ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার সবাই ‘উচ্চ মাত্রার তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন’ আর মে মাস শেষ হওয়ার আগেই ভূখণ্ডটির উত্তরাংশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যাবে বলে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। আদেশে আইসিজে বলেছে, গাজা ‘এখন আর শুধু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির সম্মুখীন না’ বরং ‘দুর্ভিক্ষ জেঁকে বসছে’ আর জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য অনুযায়ী অপুষ্টি ও পানি শূন্যতায় ভুগে ইতোমধ্যে ২৭ শিশুসহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনরা ভলকার তুর্ক গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘গাজায় ক্ষুধা, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি মানবিক ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশের বিষয়ে ইসরায়েলের ব্যাপক বিধিনিষেধ, জনসংখ্যার অধিকাংশের বাস্তুচ্যুতি আর এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করার ফল।’ আন্তর্জাতিক আদালত তুর্কের এসব মন্তব্যের কথাও উল্লেখ করেছেন। আদালত বলেছে, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবাগুলো ও মানবিক ত্রাণ সহায়তার বাধাহীন প্রবাহ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে জাতিসংঘের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর সব পদক্ষেপ নিতে হবে।’ যেসব সহায়তা সবচেয়ে বেশি দরকার তার মধ্যে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, আশ্রয় ও পোশাকের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি পণ্য ও ওষুধ আছে বলে জানিয়েছে আইসিজে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে তাদের সামরিক বাহিনী গণহত্যা ঘোষণার অধীনে গাজায় ফিলিস্তিনিদের কোনো অধিকার লঙ্ঘন করে এমন কোনো কাজ করবে না।’ গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে চলা ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩২ হাজার ৫৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ আইসিজের

প্রকাশিত সময় : ০৭:২৪:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) সর্বসম্মতভাবে ইসরায়েলকে দুর্ভিক্ষ এড়াতে ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় বাধাহীন ত্রাণ প্রবাহ সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালত বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই ‘অবিলম্বে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক পরিষেবা ও মানবিক সহায়তার বিধান’ অনুমোদন করতে হবে। গাজায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করার পর আইসিজের এমন আদেশ এলো। তারা গাজায় ত্রাণ প্রবেশ আটকে দিচ্ছে, এমন অভিযোগগুলোকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানুয়ারিতে ইসরায়েলকে আদেশ দিয়েছিল দ্যা হেগের এই আন্তর্জাতিক আদালত। আদালতের কাছে এই আদেশকে আরও জোরদার করার আর্জি জানিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তারপরই সর্বশেষ এই আদেশ জারি করেছে আইসিজে; জানিয়েছে বিবিসি। আইসিজের আদেশ মানায় আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করার কোনো ক্ষমতা এ আদালতের নেই। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও অন্যান্যদের মাধ্যমে পরিচালিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, গাজায় একটি ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার সবাই ‘উচ্চ মাত্রার তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন’ আর মে মাস শেষ হওয়ার আগেই ভূখণ্ডটির উত্তরাংশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যাবে বলে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। আদেশে আইসিজে বলেছে, গাজা ‘এখন আর শুধু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির সম্মুখীন না’ বরং ‘দুর্ভিক্ষ জেঁকে বসছে’ আর জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য অনুযায়ী অপুষ্টি ও পানি শূন্যতায় ভুগে ইতোমধ্যে ২৭ শিশুসহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনরা ভলকার তুর্ক গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘গাজায় ক্ষুধা, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি মানবিক ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশের বিষয়ে ইসরায়েলের ব্যাপক বিধিনিষেধ, জনসংখ্যার অধিকাংশের বাস্তুচ্যুতি আর এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করার ফল।’ আন্তর্জাতিক আদালত তুর্কের এসব মন্তব্যের কথাও উল্লেখ করেছেন। আদালত বলেছে, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবাগুলো ও মানবিক ত্রাণ সহায়তার বাধাহীন প্রবাহ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে জাতিসংঘের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর সব পদক্ষেপ নিতে হবে।’ যেসব সহায়তা সবচেয়ে বেশি দরকার তার মধ্যে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, আশ্রয় ও পোশাকের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি পণ্য ও ওষুধ আছে বলে জানিয়েছে আইসিজে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে তাদের সামরিক বাহিনী গণহত্যা ঘোষণার অধীনে গাজায় ফিলিস্তিনিদের কোনো অধিকার লঙ্ঘন করে এমন কোনো কাজ করবে না।’ গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে চলা ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩২ হাজার ৫৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।