সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চলে গেলেন পতাকার নকশাকার

চলে গেলেন বাংলাদেশের পতাকার অন্যতম নকশাকার মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাস (৭৭)। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এর আগে তিনি রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়।

শিবনারায়ণ দাসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেন তারা। এতে শিবনারায়ণ দাসের আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে পতাকার নকশা সম্পন্ন করেন শিবনারায়ণ দাস। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ছাত্রদের পক্ষে পতাকা উড়িয়েছিলেন ছাত্রনেতা তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রবসহ অন্য নেতারা। দেশ স্বাধীনের আগে এই পতাকার নকশাকারদের অন্যতম ছিলেন শিবনারায়ণ দাস। জাতীয় পতাকার সবুজ জমিনে বাংলাদেশের যে হলুদ মানচিত্রটি ছিল, তা অঙ্কন করেছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ণ দাসের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাসের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটুয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

শিবনারায়ণ দাস ১৯৪৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সতীশচন্দ্র দাস কুমিল্লাতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। শিবনারায়ণ দাসের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী এবং তাদের এক ছেলে অর্ণব আদিত্য দাস।

শিবনারায়ণ দাস প্রথম ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও নেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি বাহিনী মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি-১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

চলে গেলেন পতাকার নকশাকার

প্রকাশিত সময় : ১০:৪৫:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

চলে গেলেন বাংলাদেশের পতাকার অন্যতম নকশাকার মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাস (৭৭)। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এর আগে তিনি রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়।

শিবনারায়ণ দাসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেন তারা। এতে শিবনারায়ণ দাসের আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে পতাকার নকশা সম্পন্ন করেন শিবনারায়ণ দাস। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে ছাত্রদের পক্ষে পতাকা উড়িয়েছিলেন ছাত্রনেতা তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রবসহ অন্য নেতারা। দেশ স্বাধীনের আগে এই পতাকার নকশাকারদের অন্যতম ছিলেন শিবনারায়ণ দাস। জাতীয় পতাকার সবুজ জমিনে বাংলাদেশের যে হলুদ মানচিত্রটি ছিল, তা অঙ্কন করেছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ণ দাসের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাসের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটুয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

শিবনারায়ণ দাস ১৯৪৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সতীশচন্দ্র দাস কুমিল্লাতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। শিবনারায়ণ দাসের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী এবং তাদের এক ছেলে অর্ণব আদিত্য দাস।

শিবনারায়ণ দাস প্রথম ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও নেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি বাহিনী মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি-১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।