সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় রেমাল : প্রচণ্ড তাণ্ডবের শঙ্কা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রে ‘চোখ’ অবয়ব দেখা গেছে। ফলে এটি ব্যাপক শক্তি নিয়ে উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে উপকূলের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। এটি সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের সাগর আইল্যান্ড-খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

রোববার (২৬ মে) আবহাওয়া অধিদফতর ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের চোখ কী এ নিয়ে বিডব্লিউওটির প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, একটি সাইক্লোন যখন সংঘটিত হয়, তখন আশপাশের মেঘগুলো ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় থাকে। মেঘগুলো যখন ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে, তখন এর প্রধান কেন্দ্র প্রচণ্ড গরম থাকে। গরমের ফলে ওই জায়গায় প্রচণ্ড শক্তি তৈরি হয়। এরফলে নিচ থেকে জলীয় বাষ্পগুলো উপরের দিকে উঠে আসে। তখন উপরের জায়গা পরিষ্কার হয়ে যায়। এ অবস্থাকেই ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ তৈরি হয়েছে বলা হয়। এমন অবস্থা তৈরি হলে চারপাশের মেঘগুলো ঘুরে ঘুরে মাঝখানে একটা চোখের মতো অবয়ব তৈরি হয়। এটি মূলত একটি শক্তিশালী সাইক্লোনের লক্ষণ।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, প্রবল শক্তি নিয়েই ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানবে উপকূলে। এর কেন্দ্রে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মতো ‘চোখে’র অবয়ব তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সেন্ট্রাল পয়েন্টকে কেন্দ্র করে যখন মেঘগুলো আবর্তিত হতে থাকে তখন মাঝখানে একটি চোখের মতো অবয়ব তৈরি হয়। এটিকেই ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষেত্রেও এমন অবয়ব তৈরি হয়েছে। সাধারণত যেসব ঘূর্ণিঝড়ে এমন ‘চোখে’র দেখা পাওয়া যায় সেগুলো শক্তিশালী হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালও প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ সমুদ্র উপকূলে আঘাত হেনেছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে মূল কেন্দ্র আঘাত হানবে। তবে এরপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে যাবে তেমনটি নয়। কেন্দ্র অতিক্রম করা শেষ হওয়ার পর এর শেষ অংশও উপকূলসহ তীরবর্তী অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে।

এছাড়াও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় রেমাল এ মুহূর্তে উত্তর বঙ্গোপসাগরে। রোববার (২৬ মে) মধ্যরাতে রেমাল স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের ঘূর্ণনগতি বর্তমানে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। সাময়িকভাবে তা পৌঁছে যাচ্ছে ১১০ কিলোমিটারেও। এর ফলে উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের উপকূল থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে রেমাল। ক্যানিং থেকে এর দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্বে। সাগরেই প্রবল আকার নিয়েছে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়টি গত ছয় ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার বেগে স্থলভাগের দিকে এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ঘূর্ণিঝড় রেমাল : প্রচণ্ড তাণ্ডবের শঙ্কা

প্রকাশিত সময় : ০৫:৫১:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০২৪

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রে ‘চোখ’ অবয়ব দেখা গেছে। ফলে এটি ব্যাপক শক্তি নিয়ে উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে উপকূলের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। এটি সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের সাগর আইল্যান্ড-খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

রোববার (২৬ মে) আবহাওয়া অধিদফতর ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের (বিডব্লিউওটি) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের চোখ কী এ নিয়ে বিডব্লিউওটির প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, একটি সাইক্লোন যখন সংঘটিত হয়, তখন আশপাশের মেঘগুলো ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় থাকে। মেঘগুলো যখন ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসে, তখন এর প্রধান কেন্দ্র প্রচণ্ড গরম থাকে। গরমের ফলে ওই জায়গায় প্রচণ্ড শক্তি তৈরি হয়। এরফলে নিচ থেকে জলীয় বাষ্পগুলো উপরের দিকে উঠে আসে। তখন উপরের জায়গা পরিষ্কার হয়ে যায়। এ অবস্থাকেই ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ তৈরি হয়েছে বলা হয়। এমন অবস্থা তৈরি হলে চারপাশের মেঘগুলো ঘুরে ঘুরে মাঝখানে একটা চোখের মতো অবয়ব তৈরি হয়। এটি মূলত একটি শক্তিশালী সাইক্লোনের লক্ষণ।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, প্রবল শক্তি নিয়েই ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানবে উপকূলে। এর কেন্দ্রে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মতো ‘চোখে’র অবয়ব তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সেন্ট্রাল পয়েন্টকে কেন্দ্র করে যখন মেঘগুলো আবর্তিত হতে থাকে তখন মাঝখানে একটি চোখের মতো অবয়ব তৈরি হয়। এটিকেই ঘূর্ণিঝড়ের ‘চোখ’ বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষেত্রেও এমন অবয়ব তৈরি হয়েছে। সাধারণত যেসব ঘূর্ণিঝড়ে এমন ‘চোখে’র দেখা পাওয়া যায় সেগুলো শক্তিশালী হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালও প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ সমুদ্র উপকূলে আঘাত হেনেছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে মূল কেন্দ্র আঘাত হানবে। তবে এরপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে যাবে তেমনটি নয়। কেন্দ্র অতিক্রম করা শেষ হওয়ার পর এর শেষ অংশও উপকূলসহ তীরবর্তী অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে।

এছাড়াও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় রেমাল এ মুহূর্তে উত্তর বঙ্গোপসাগরে। রোববার (২৬ মে) মধ্যরাতে রেমাল স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের ঘূর্ণনগতি বর্তমানে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। সাময়িকভাবে তা পৌঁছে যাচ্ছে ১১০ কিলোমিটারেও। এর ফলে উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের উপকূল থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে রেমাল। ক্যানিং থেকে এর দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্বে। সাগরেই প্রবল আকার নিয়েছে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়টি গত ছয় ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার বেগে স্থলভাগের দিকে এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।