শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড উপকূল, গতিবেগ ১০২ কি:মি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ভারী নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রিমালে রূপান্তর হয়ে বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা মোরেলগঞ্জে ৭ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। রবিবার (২৬ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ৪টায়ও চলছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে মাছ ও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচাঘর। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রিমালের গতিবেগ ঘন্টায় ১০২ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় রিমাল এখন পর্যন্ত পটুয়াখালীর উপকূলে সর্বোচ্চ ১০২ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় গতি ৯০ থেকে ১১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে।

চারদিকে অন্ধকার আর থৈ থৈ করছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব লিলার জলোচ্ছ্বাস। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবলীলা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। ৭ থেকে ৮ ফুট পানিতে তলিয়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রবিবার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন জেলার অধিকাংশ এলাকা। এর মধ্যে সারা দিন মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। অন্যান্য এলাকায়ও বিদ্যুৎ ছিল যাওয়া-আসার মধ্যে। তবে জেলা সদরের পৌর শহরে রবিবার রাত সাড়ে ১০টায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।

কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায়।
তিনি আরো বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৪ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে।

এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হলে লাইনে কাজ করে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশুর বুনিয়া সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেওয়া মোরারেক হোসেন বলেন, সিডর ও আইলার মতো ঘূর্ণিঝড় দেখেছি কিন্তু জলোচ্ছ্বাস এত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্রের বাহিরে শুধু থৈ থৈ করছে পানি। কোনটা রাস্তা কোনটা পুকুর, বিল কিছুই বোঝার উপায় নাই।

সন্ন্যাসী বাজারের সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেওয়া দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৭ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসের পানি যদি না নামে গবাদি পশু বাঁচানো যাবে না। মাছ আর কৃষি তো শেষ।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতান বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার দুর্যোগ প্রস্তুতিতে মেডিক্যাল অফিসার ডা. শেখ নাদিরুজ্জান আকাশকে টিম লিডার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে এবং ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রত্যেকটি টিমে ৬ জন সদস্য নিয়ে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। ৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রাখা হয়েছে। তবে পানি না কমলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ (৪৪-৬৮ মি.মি./২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (১৮৯ মি.মি./২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড উপকূল, গতিবেগ ১০২ কি:মি

প্রকাশিত সময় : ০১:৫২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০২৪

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ভারী নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রিমালে রূপান্তর হয়ে বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা মোরেলগঞ্জে ৭ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। রবিবার (২৬ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ৪টায়ও চলছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে মাছ ও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচাঘর। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রিমালের গতিবেগ ঘন্টায় ১০২ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় রিমাল এখন পর্যন্ত পটুয়াখালীর উপকূলে সর্বোচ্চ ১০২ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় গতি ৯০ থেকে ১১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে।

চারদিকে অন্ধকার আর থৈ থৈ করছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব লিলার জলোচ্ছ্বাস। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবলীলা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। ৭ থেকে ৮ ফুট পানিতে তলিয়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রবিবার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন জেলার অধিকাংশ এলাকা। এর মধ্যে সারা দিন মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। অন্যান্য এলাকায়ও বিদ্যুৎ ছিল যাওয়া-আসার মধ্যে। তবে জেলা সদরের পৌর শহরে রবিবার রাত সাড়ে ১০টায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।

কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায়।
তিনি আরো বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৪ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে পল্লী বিদ্যুতের মূল সঞ্চালন লাইনের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে।

এতে কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ শেষ হলে লাইনে কাজ করে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার পশুর বুনিয়া সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেওয়া মোরারেক হোসেন বলেন, সিডর ও আইলার মতো ঘূর্ণিঝড় দেখেছি কিন্তু জলোচ্ছ্বাস এত দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্রের বাহিরে শুধু থৈ থৈ করছে পানি। কোনটা রাস্তা কোনটা পুকুর, বিল কিছুই বোঝার উপায় নাই।

সন্ন্যাসী বাজারের সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেওয়া দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৭ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসের পানি যদি না নামে গবাদি পশু বাঁচানো যাবে না। মাছ আর কৃষি তো শেষ।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতান বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার দুর্যোগ প্রস্তুতিতে মেডিক্যাল অফিসার ডা. শেখ নাদিরুজ্জান আকাশকে টিম লিডার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে এবং ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রত্যেকটি টিমে ৬ জন সদস্য নিয়ে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। ৫১টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রাখা হয়েছে। তবে পানি না কমলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ (৪৪-৬৮ মি.মি./২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (১৮৯ মি.মি./২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।