সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রেমালের প্রভাবে দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব পড়েছে রাজধানীতেও। রোববার (২৬ মে) রাতে হালকা বৃষ্টি হলেও সোমবার (২৭ মে) ভোররাত থেকে অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঝড়ো হাওয়া। ভারী বৃষ্টিতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। সেই সঙ্গে যানবাহনের স্বল্পতা এবং রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়া ভোগান্তি বাড়িয়েছে আরো কয়েক গুণ।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমে গেছে। রাজধানীর শান্তিনগর, রামপুরা, খিলাগাঁও, বাড্ডা, গ্রিন রোড, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি ২৭, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১০, ১৩ ও ১৪ নম্বর, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোডে পানি জমেছে।

এছাড়া, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তা, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, মোহাম্মদপুর, ইসিবি, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়ক এবং এসব সড়কের আশপাশের গলিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

রাজধানীর বনশ্রী থেকে মতিঝিলে অফিসে যাওয়ার পথে ভোগান্তি পড়েন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আসিফ মোল্লা। মাথার ওপর ছাতা নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দুটি রিকশা পরিবর্তন করে পানি-কাদায় একাকার হয়ে যখন অফিসে পৌঁছেছেন, ততক্ষণে কাকভেজা হয়েছেন তিনি। আসিফ মোল্লা জানান, অফিসে আসতে আজ চার গুণ বাড়তি খরচ করতে হয়েছে তাকে।

বাড়তি ভাড়া নেওয়া কয়েকজন রিকশাচালক বিষয়টিকে মানবিকভাবে দেখার আহ্বান জানান। তারা বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছি। এ কারণে ১০-২০ টাকা বেশি চাচ্ছি।

রোববার রাতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে প্রবল ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে যশোর ও আশপাশের এলাকায় গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে মহাবিপদ সংকেত ৯ নম্বর নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সারা দেশে আজ সোমবার দিনে ও রাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার দেশের দু’-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানিয়েছেন, ঢাকায় সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ঢাকায় ভারী বর্ষণের ফলে রাস্তাঘাট যেমন ডুবেছে, তেমনই অনেক এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। অনেক জায়গায় রাস্তা পানিতে ডুবে থাকায় এসব এলাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে। যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে ওইসব এলাকায়।

এদিকে, কোথাও জলাবদ্ধতা হলে, পানি জমে থাকলে হটলাইনে যোগাযোগ করার (১৬১০৬) আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কুইক রেসপন্স টিম।

সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় এই টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মুখপাত্র মকবুল হোসাইন।

তিনি বলেছেন, ডিএনসিসির ১০টি কুইক রেসপন্স টিম এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছেন। কোথাও পানি জমে থাকলে ডিএনসিসির হটলাইন ১৬১০৬  নম্বরে ফোন করুন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কুইক রেসপন্স টিম পৌঁছে যাবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

রেমালের প্রভাবে দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

প্রকাশিত সময় : ০৯:১৪:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব পড়েছে রাজধানীতেও। রোববার (২৬ মে) রাতে হালকা বৃষ্টি হলেও সোমবার (২৭ মে) ভোররাত থেকে অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঝড়ো হাওয়া। ভারী বৃষ্টিতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ। সেই সঙ্গে যানবাহনের স্বল্পতা এবং রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়া ভোগান্তি বাড়িয়েছে আরো কয়েক গুণ।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমে গেছে। রাজধানীর শান্তিনগর, রামপুরা, খিলাগাঁও, বাড্ডা, গ্রিন রোড, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি ২৭, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১০, ১৩ ও ১৪ নম্বর, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোডে পানি জমেছে।

এছাড়া, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তা, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, মোহাম্মদপুর, ইসিবি, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়ক এবং এসব সড়কের আশপাশের গলিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

রাজধানীর বনশ্রী থেকে মতিঝিলে অফিসে যাওয়ার পথে ভোগান্তি পড়েন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা আসিফ মোল্লা। মাথার ওপর ছাতা নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দুটি রিকশা পরিবর্তন করে পানি-কাদায় একাকার হয়ে যখন অফিসে পৌঁছেছেন, ততক্ষণে কাকভেজা হয়েছেন তিনি। আসিফ মোল্লা জানান, অফিসে আসতে আজ চার গুণ বাড়তি খরচ করতে হয়েছে তাকে।

বাড়তি ভাড়া নেওয়া কয়েকজন রিকশাচালক বিষয়টিকে মানবিকভাবে দেখার আহ্বান জানান। তারা বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছি। এ কারণে ১০-২০ টাকা বেশি চাচ্ছি।

রোববার রাতে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে প্রবল ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে যশোর ও আশপাশের এলাকায় গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে মহাবিপদ সংকেত ৯ নম্বর নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সারা দেশে আজ সোমবার দিনে ও রাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার দেশের দু’-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানিয়েছেন, ঢাকায় সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ঢাকায় ভারী বর্ষণের ফলে রাস্তাঘাট যেমন ডুবেছে, তেমনই অনেক এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। অনেক জায়গায় রাস্তা পানিতে ডুবে থাকায় এসব এলাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে। যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে ওইসব এলাকায়।

এদিকে, কোথাও জলাবদ্ধতা হলে, পানি জমে থাকলে হটলাইনে যোগাযোগ করার (১৬১০৬) আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কুইক রেসপন্স টিম।

সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় এই টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মুখপাত্র মকবুল হোসাইন।

তিনি বলেছেন, ডিএনসিসির ১০টি কুইক রেসপন্স টিম এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছেন। কোথাও পানি জমে থাকলে ডিএনসিসির হটলাইন ১৬১০৬  নম্বরে ফোন করুন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কুইক রেসপন্স টিম পৌঁছে যাবে।