বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমি চাই না দ্বিতীয় কেউ আমার শরীর উপভোগ করুক’

ফেসবুকে প্রেম করে অভিভাবকের অমতে বিয়ে করেন জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়া (১৯) নামে এক তরুণী। পরে স্বামীর দেওয়া যৌতুকের চাপে ৭ পৃষ্ঠার চিঠি লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই তরুণী।

শনিবার (১৩ জুলাই) আনুমানিক রাত দশটার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বিশগিরি পাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে গৃহবধূ সুমাইয়ার মরদেহ ও চিঠি উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মাস আগে শেরপুর সদর উপজেলার সাপমারী এলাকার শিপন নামের এক যুবককের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের মাধ্যমে বিয়ে হয় ওই তরুণীর। অভিভাবকের অমতে বিয়ে হওয়ায় মেনে নিচ্ছিল না স্বামী শিপনের পরিবার। ফলে তারা দুজন আলাদা থাকতেন। কিন্তু শিপনের পরিবার মেনে না নেওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত। এমন কি শিপন বিয়ের পর ৮ লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে সুমাইয়াকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতেন। এসব বিষয় নিয়ে রাগারাগি করে গত রোজার ঈদের সময় সুমাইয়া তার বাবার বাড়িতে চলে এসে সেখানেই থাকছিলেন।

গতকাল শনিবার রাতে সুমাইয়া মনের ক্ষোভে ৭ পৃষ্ঠার চিঠি লিখে শয়নকক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।

চিঠিতে সুমাইয়া লিখেন, ‘বিয়ের গোসলটাও পেলাম না। শেষ গোসলটাও পাব না। জানাযাও পাব না। আমার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না।’

তিনি আরও লিখেন, ‘আমি চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবনটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই না দ্বিতীয় কেউ আমার শরীরটা উপভোগ করুক।’ বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে সুমাইয়া লিখেন, তোমরা মনে কষ্ট নিও না। শিপনকে সুখে রাখার জন্য আমি চলে যাচ্ছি। আমার মুখ তাকে দেখতে দিও না। আমার শরীরটা কাটতে দিও না। আমি তাহলে কষ্ট পাব।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভুঁইয়া জানান, নিহত সুমাইয়ার মরদেহ ও চিঠি উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

‘আমি চাই না দ্বিতীয় কেউ আমার শরীর উপভোগ করুক’

প্রকাশিত সময় : ০৭:৩০:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

ফেসবুকে প্রেম করে অভিভাবকের অমতে বিয়ে করেন জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমাইয়া (১৯) নামে এক তরুণী। পরে স্বামীর দেওয়া যৌতুকের চাপে ৭ পৃষ্ঠার চিঠি লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই তরুণী।

শনিবার (১৩ জুলাই) আনুমানিক রাত দশটার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বিশগিরি পাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পরদিন সকালে গৃহবধূ সুমাইয়ার মরদেহ ও চিঠি উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মাস আগে শেরপুর সদর উপজেলার সাপমারী এলাকার শিপন নামের এক যুবককের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের মাধ্যমে বিয়ে হয় ওই তরুণীর। অভিভাবকের অমতে বিয়ে হওয়ায় মেনে নিচ্ছিল না স্বামী শিপনের পরিবার। ফলে তারা দুজন আলাদা থাকতেন। কিন্তু শিপনের পরিবার মেনে না নেওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত। এমন কি শিপন বিয়ের পর ৮ লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে সুমাইয়াকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতেন। এসব বিষয় নিয়ে রাগারাগি করে গত রোজার ঈদের সময় সুমাইয়া তার বাবার বাড়িতে চলে এসে সেখানেই থাকছিলেন।

গতকাল শনিবার রাতে সুমাইয়া মনের ক্ষোভে ৭ পৃষ্ঠার চিঠি লিখে শয়নকক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।

চিঠিতে সুমাইয়া লিখেন, ‘বিয়ের গোসলটাও পেলাম না। শেষ গোসলটাও পাব না। জানাযাও পাব না। আমার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অনেক ভালোবাসি তোমাকে শিপন। কিন্তু তুমি শেষ পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে দিলা না।’

তিনি আরও লিখেন, ‘আমি চাইলে দ্বিতীয় বিয়ে করে জীবনটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। কিন্তু আমি চাই না দ্বিতীয় কেউ আমার শরীরটা উপভোগ করুক।’ বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে সুমাইয়া লিখেন, তোমরা মনে কষ্ট নিও না। শিপনকে সুখে রাখার জন্য আমি চলে যাচ্ছি। আমার মুখ তাকে দেখতে দিও না। আমার শরীরটা কাটতে দিও না। আমি তাহলে কষ্ট পাব।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভুঁইয়া জানান, নিহত সুমাইয়ার মরদেহ ও চিঠি উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।