শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনায় তিন দফা সংঘর্ষ, পুলিশ সদস্য নিহত

খুলনার জিরো পয়েন্ট, গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের তিন দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় মো. সুমন নামে পুলিশের এক কন্সটেবল নিহত হয়েছেন। ২০ থেকে ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পুলিশ কন্সটেবল মো. সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক। মো. সুমন খুলনা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে, আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা) অবস্থায় ৭ জনসহ আহত ১৬ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যরা খুলনা পুলিশ হাসপাতালের পাশাপাশি নগরীর অন্য হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা খুলনা মহানগরীর নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও পরে পিছু হটে। এরপর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইট নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে হরিণটানা থানাতেও ইট ও খালি বোতল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীরা দুপুর সোয়া ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছান। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ। এছাড়া উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

বিকেল ৪ টার দিকে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। কিছু পুলিশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় এবং কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পুলিশ কিছুটা পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে গল্লামারী মোড়ে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ পিছু হটলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর সিরাজুল ইসলাম, আবির, নীরব, নাবিল, মিজান, সৌরভ, আবদুল্লাহ, রায়েব সুলতানা রাইবা এবং রুবিনা ইয়াসমিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরে রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা গুলি লেগেছে।আন্দোলনকারীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অহেতুক টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঠিক সংখ্যা পরে জানানো হবে।

সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা থানার গেটে কিছু ইট নিক্ষেপ করেছিল। তবে কেউ আহত হননি।’

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, ‘শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি পালন করা কথা ছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নিহত পুলিশ সদস্যের নাম মো. সুমন।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

খুলনায় তিন দফা সংঘর্ষ, পুলিশ সদস্য নিহত

প্রকাশিত সময় : ০৯:৩৮:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪

খুলনার জিরো পয়েন্ট, গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের তিন দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় মো. সুমন নামে পুলিশের এক কন্সটেবল নিহত হয়েছেন। ২০ থেকে ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পুলিশ কন্সটেবল মো. সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক। মো. সুমন খুলনা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে, আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা) অবস্থায় ৭ জনসহ আহত ১৬ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যরা খুলনা পুলিশ হাসপাতালের পাশাপাশি নগরীর অন্য হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা খুলনা মহানগরীর নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও পরে পিছু হটে। এরপর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইট নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে হরিণটানা থানাতেও ইট ও খালি বোতল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীরা দুপুর সোয়া ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছান। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ। এছাড়া উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

বিকেল ৪ টার দিকে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। কিছু পুলিশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় এবং কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পুলিশ কিছুটা পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে গল্লামারী মোড়ে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ পিছু হটলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর সিরাজুল ইসলাম, আবির, নীরব, নাবিল, মিজান, সৌরভ, আবদুল্লাহ, রায়েব সুলতানা রাইবা এবং রুবিনা ইয়াসমিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরে রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা গুলি লেগেছে।আন্দোলনকারীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অহেতুক টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঠিক সংখ্যা পরে জানানো হবে।

সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা থানার গেটে কিছু ইট নিক্ষেপ করেছিল। তবে কেউ আহত হননি।’

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, ‘শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি পালন করা কথা ছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নিহত পুলিশ সদস্যের নাম মো. সুমন।’