বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খাবার পানি, শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট

ফেনী সদর, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়ার বেশিরভাগ এলাকার মানুষজন পানিবন্দি। সোনাগাজীর মানুষ এখনও পানিবন্দি থাকলেও তুলনামূলক ভালো আছেন। পুরো ফেনী শহরের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। যেসব খোলা আছে, সেসব দোকানেও খাবার পানি, শিশু খাদ্য, মোমবাতির তীব্র সংকট রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনীয় যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগেরই দাম ব্যবসায়ীরা বেশি রাখছেন বলে অভিযোগ করেন বাসিন্দারা। সরবরাহ সংকটের কারণে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরেজমিন ফেনী শহরে অবস্থান করে, বিভিন্ন রেসকিউ টিমের সদস্য, ত্রাণ নিয়ে যাওয়া টিম, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত কয়েকদিন ফেনীতে কেউ কারও সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেননি। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মোবাইল টাওয়ার অকার্যকর হয়ে পড়ে। নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে যায়। জেলার বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান পিডিবি কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন। বর্তমানে ফেনী থেকে ক্রমে পানি নেমে যাচ্ছে। আজ (রোববার) থেকে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহও শুরু হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে, জেলা শহর ও বিভিন্ন থানা এলাকায় আটকা পড়ে আছেন লাখো মানুষ। দোতলা থেকে ওপরের দিকের বাসিন্দারা প্রাণে বেঁচে গেলেও বেশিরভাগ পরিবারে দুর্ভোগ নেমে আসে। আচমকা বন্যায় ঘরে আটকে পড়া এসব মানুষ খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকটে পড়েন চরমভাবে। বিশেষ করে শিশু খাদ্য ও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।

 

ট্রাংক রোডে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিনহাজ জানান, ত্রাণসামগ্রীর গাড়ি এবং ত্রাণকর্মীদের জট লেগে আছে। এত ত্রাণ দেওয়ার জন্য তারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। কিন্তু পানি ও প্রতিকূল অবস্থার জন্য তারা সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে পারছেন না। এখন সবার আগে আটকে পড়া মানুষদের রেসকিউ করা এবং সবার কাছে অন্তত পানি পৌঁছে দিতে কাজ করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, ফেনী সদরের বিরিঞ্চি, বারাইপুর, সুলতানপুর, স্টেডিয়াম, পলিটেকনিক, ফুলেশ্বর, একাডেমি, ফুলগাজি রোডসহ নিচু অঞ্চলগুলোতে হাঁটু পানি থেকে কোথাও এখনো বুক সমান পানি। পাঁচগাছিয়া রোডের কিছু এলাকায় ৫-৬ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। বিশেষ করে পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার এলাকা। বিদ্যুৎ নেই, আর বাংলালিংক ছাড়া কোনও মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক নেই। শহরে খাবার পানি, শিশু খাদ্য ও মোমবাতি নেই। ওষুধেরও টানাটানি চলছে। পাল্লা দিয়ে বেশি দামে শুকনো খাবার, মোমবাতি, পানি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। চারদিকে শুধু মানুষের আহাজারি।

প্রচুর ত্রাণ নিয়ে গিয়েও সঠিকভাবে বিতরণ করতে পারছেন না অনেকে। আবার কেউ কেউ নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন জলাবদ্ধ এলাকায় গিয়ে মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছেন ‘ক্ষুধা নিবারণ’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের ফাউন্ডার ইঞ্জিনিয়ার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, শনিবার আমরা প্রচুর খাবার পানি, শুকনো খাবার, মোমবাতি, দিয়াশলাই, স্যানিটারি প্যাড, শিশু খাদ্য- এসব নিয়ে এসেছি। সুষ্ঠুভাবে দিতে পেরেছি।

নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ত্রাণ বিতরণকালে অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রচুর পানি, অপরিচিত জায়গা, ত্রাণ বহন করা সবই কষ্টকর ছিল। তবে স্বেচ্ছাসেবকরা যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। আরেকটি ব্যাপার, যাদের ত্রাণ সহযোগিতা করেছি, কারা কেউ গরিব নন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

খাবার পানি, শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট

প্রকাশিত সময় : ১১:৩৩:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

ফেনী সদর, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়ার বেশিরভাগ এলাকার মানুষজন পানিবন্দি। সোনাগাজীর মানুষ এখনও পানিবন্দি থাকলেও তুলনামূলক ভালো আছেন। পুরো ফেনী শহরের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। যেসব খোলা আছে, সেসব দোকানেও খাবার পানি, শিশু খাদ্য, মোমবাতির তীব্র সংকট রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনীয় যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগেরই দাম ব্যবসায়ীরা বেশি রাখছেন বলে অভিযোগ করেন বাসিন্দারা। সরবরাহ সংকটের কারণে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরেজমিন ফেনী শহরে অবস্থান করে, বিভিন্ন রেসকিউ টিমের সদস্য, ত্রাণ নিয়ে যাওয়া টিম, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত কয়েকদিন ফেনীতে কেউ কারও সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেননি। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মোবাইল টাওয়ার অকার্যকর হয়ে পড়ে। নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে যায়। জেলার বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান পিডিবি কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন। বর্তমানে ফেনী থেকে ক্রমে পানি নেমে যাচ্ছে। আজ (রোববার) থেকে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহও শুরু হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে, জেলা শহর ও বিভিন্ন থানা এলাকায় আটকা পড়ে আছেন লাখো মানুষ। দোতলা থেকে ওপরের দিকের বাসিন্দারা প্রাণে বেঁচে গেলেও বেশিরভাগ পরিবারে দুর্ভোগ নেমে আসে। আচমকা বন্যায় ঘরে আটকে পড়া এসব মানুষ খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকটে পড়েন চরমভাবে। বিশেষ করে শিশু খাদ্য ও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।

 

ট্রাংক রোডে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিনহাজ জানান, ত্রাণসামগ্রীর গাড়ি এবং ত্রাণকর্মীদের জট লেগে আছে। এত ত্রাণ দেওয়ার জন্য তারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। কিন্তু পানি ও প্রতিকূল অবস্থার জন্য তারা সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে পারছেন না। এখন সবার আগে আটকে পড়া মানুষদের রেসকিউ করা এবং সবার কাছে অন্তত পানি পৌঁছে দিতে কাজ করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, ফেনী সদরের বিরিঞ্চি, বারাইপুর, সুলতানপুর, স্টেডিয়াম, পলিটেকনিক, ফুলেশ্বর, একাডেমি, ফুলগাজি রোডসহ নিচু অঞ্চলগুলোতে হাঁটু পানি থেকে কোথাও এখনো বুক সমান পানি। পাঁচগাছিয়া রোডের কিছু এলাকায় ৫-৬ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। বিশেষ করে পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার এলাকা। বিদ্যুৎ নেই, আর বাংলালিংক ছাড়া কোনও মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক নেই। শহরে খাবার পানি, শিশু খাদ্য ও মোমবাতি নেই। ওষুধেরও টানাটানি চলছে। পাল্লা দিয়ে বেশি দামে শুকনো খাবার, মোমবাতি, পানি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। চারদিকে শুধু মানুষের আহাজারি।

প্রচুর ত্রাণ নিয়ে গিয়েও সঠিকভাবে বিতরণ করতে পারছেন না অনেকে। আবার কেউ কেউ নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন জলাবদ্ধ এলাকায় গিয়ে মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছেন ‘ক্ষুধা নিবারণ’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের ফাউন্ডার ইঞ্জিনিয়ার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, শনিবার আমরা প্রচুর খাবার পানি, শুকনো খাবার, মোমবাতি, দিয়াশলাই, স্যানিটারি প্যাড, শিশু খাদ্য- এসব নিয়ে এসেছি। সুষ্ঠুভাবে দিতে পেরেছি।

নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ত্রাণ বিতরণকালে অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রচুর পানি, অপরিচিত জায়গা, ত্রাণ বহন করা সবই কষ্টকর ছিল। তবে স্বেচ্ছাসেবকরা যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। আরেকটি ব্যাপার, যাদের ত্রাণ সহযোগিতা করেছি, কারা কেউ গরিব নন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার।