রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বোন বানিয়ে তারই ছেলেকে অপহরণ

হৃদয় নামের ৩০ বছর বয়সী এক যুবকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় এক নারীর। এক পর্যায়ে ওই নারীকে ধর্ম বোন বানান সেই যুবক। একে অপরের সঙ্গে দেখাও করেন একাধিকবার। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৮ বছরের সন্তান তুষারকে নিয়ে রাজধানীর সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে যান সেই নারী। পরে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তুষারকে অপহরণ করে হৃদয়।

রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল মো. মুনীম ফেরদৌস। শনিবার রাতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যৌথ অভিযান চালিয়ে অপহৃত আব্দুল্লাহ আল নূর তুষারকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, অপহরণকারী হৃদয়ের আসল নাম বাদল। তিনি ছদ্মনামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করেন। এতে তার স্ত্রীও তাকে সহযোগিতা করেন। এলাকায় তাদের অনেক দেনা রয়েছে। তাই প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন তারা। যদিও অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি র‌্যাব।

তুষারকে অপহরণ সম্পর্কে মুনীম ফেরদৌস বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় আব্দুল্লাহ আল নূর তুষার (৮) নামের এক শিশু অপহরণের শিকার হয়। ভিকটিমের মায়ের সাথে অপহরণকারী বাদল ওরফে হৃদয় (৩০) নামের এক তরুণের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে ঘটনার দিন ভিকটিমকে নিয়ে ভিকটিমের মা সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় বাদল ওরফে হৃদয়ের সাথে দেখা করতে যায়। পরবর্তীতে অপহরণকারী বাদল তুষারকে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে অপহরণ করে।

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীর মা সদরঘাটের সোয়ারীঘাট ও এর আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় সন্তানকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে ২ অক্টোবর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন, যার মামলা নং -০১/১৯৪। পরবর্তীতে গত ২ অক্টোবর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ভিকটিমের মাকে ফোন করে মুক্তিপণ দুই লাখ টাকা দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে তুষারকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অপহরণকারীদের ৬ হাজার টাকা প্রদান করে।

র‌্যাবের কর্মকর্তা জানান, অপহরণকারী বাদল ওরফে হৃদয় মুক্তিপণ আদায় করতে তুষারকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। অতঃপর তুষারের পিতা র‌্যাব-২ এর নিকট ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের জন্য লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে অপহৃত তুষারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে র‌্যাব-২ ও ৮ এর যৌথ আভিযানিক দল সুপরিকল্পিতভাবে অপহৃত আব্দুল্লাহ আল তুষারকে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানাধীন আমরাগাছি হোগলপাতি নামক প্রত্যন্ত এক এলাকা থেকে উদ্ধার করে। তবে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়।

এই অপহরণের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক। পাশাপাশি অপহৃত তুষারকে তার অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বোন বানিয়ে তারই ছেলেকে অপহরণ

প্রকাশিত সময় : ০৫:০৭:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

হৃদয় নামের ৩০ বছর বয়সী এক যুবকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় এক নারীর। এক পর্যায়ে ওই নারীকে ধর্ম বোন বানান সেই যুবক। একে অপরের সঙ্গে দেখাও করেন একাধিকবার। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৮ বছরের সন্তান তুষারকে নিয়ে রাজধানীর সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে যান সেই নারী। পরে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তুষারকে অপহরণ করে হৃদয়।

রোববার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল মো. মুনীম ফেরদৌস। শনিবার রাতে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যৌথ অভিযান চালিয়ে অপহৃত আব্দুল্লাহ আল নূর তুষারকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, অপহরণকারী হৃদয়ের আসল নাম বাদল। তিনি ছদ্মনামে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করেন। এতে তার স্ত্রীও তাকে সহযোগিতা করেন। এলাকায় তাদের অনেক দেনা রয়েছে। তাই প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন তারা। যদিও অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি র‌্যাব।

তুষারকে অপহরণ সম্পর্কে মুনীম ফেরদৌস বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় আব্দুল্লাহ আল নূর তুষার (৮) নামের এক শিশু অপহরণের শিকার হয়। ভিকটিমের মায়ের সাথে অপহরণকারী বাদল ওরফে হৃদয় (৩০) নামের এক তরুণের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে ঘটনার দিন ভিকটিমকে নিয়ে ভিকটিমের মা সদরঘাটের সোয়ারীঘাট এলাকায় বাদল ওরফে হৃদয়ের সাথে দেখা করতে যায়। পরবর্তীতে অপহরণকারী বাদল তুষারকে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে অপহরণ করে।

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীর মা সদরঘাটের সোয়ারীঘাট ও এর আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় সন্তানকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে ২ অক্টোবর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন, যার মামলা নং -০১/১৯৪। পরবর্তীতে গত ২ অক্টোবর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ভিকটিমের মাকে ফোন করে মুক্তিপণ দুই লাখ টাকা দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে তুষারকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অপহরণকারীদের ৬ হাজার টাকা প্রদান করে।

র‌্যাবের কর্মকর্তা জানান, অপহরণকারী বাদল ওরফে হৃদয় মুক্তিপণ আদায় করতে তুষারকে বিভিন্ন সময়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। অতঃপর তুষারের পিতা র‌্যাব-২ এর নিকট ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের জন্য লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে অপহৃত তুষারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে র‌্যাব-২ ও ৮ এর যৌথ আভিযানিক দল সুপরিকল্পিতভাবে অপহৃত আব্দুল্লাহ আল তুষারকে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানাধীন আমরাগাছি হোগলপাতি নামক প্রত্যন্ত এক এলাকা থেকে উদ্ধার করে। তবে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়।

এই অপহরণের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক। পাশাপাশি অপহৃত তুষারকে তার অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি।