সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়া শিশু পরিবারে দুর্নীতি, ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি

কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারের (এতিমখানা) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে রায়হান হোসেন রিজভী (১২) নামে এক নিবাসী নিখোঁজ হয়। ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও তার এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অনিয়ম-দুর্নীতি ও নির্যাতনের চিত্র উঠে আসে। পরে সেখানকার ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।

শিশু পরিবারের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন, উপ-তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান, কারিগরি প্রশিক্ষক কাজী লুৎফর রহমান, মেট্রন কাম নার্স আফরিন আরা জাহান ও কারিগরি প্রশিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ সেখ বলেন, তদন্তে দুর্নীতি, অনিয়ম ও নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্ত্বাবধায়ক, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, একজন নার্স, দুই প্রশিক্ষককে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে গত ৯ নভেম্বর এই কর্মকর্তা বলেছিলেন, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগে কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারের (এতিমখানা) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও উপ-তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে রিজভী নিখোঁজের ঘটনার পর গত ৮ নভেম্বর রাতে ওই শিশু পরিবারের শিশুরা নিম্নমানের খাবার দেওয়া, শিশুদের জন্য সরবরাহকৃত মালামাল বিক্রি, শিশুদের নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ তুলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিক্ষোভ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পদত্যাগের দাবি জানায়।

পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা। এ সময় সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও উপ-তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রিজভী নিখোঁজ, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও নির্যাতনের ঘটনায় আসাদুজ্জামান ও ইলিয়াসসহ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) দিনের পর দিন চলেছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চরম স্বেচ্ছাচারিতা। পান থেকে চুন খসলেই শিশুদের ওপর নেমে আসতো অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের খড়গ। শিশুদের জন্য সরকারি বরাদ্দের মাছ-মাংস চলে যেত কর্মকর্তাদের বাড়ি। প্রতিষ্ঠানের গাছে ধরা আম-কাঁঠালেও তাদের অধিকার ছিল না। সম্প্রতি সেখানকার এক শিশু নিখোঁজের পর আলোচনায় আসে নানা অনিয়ম। সমাজসেবা অধিদপ্তরে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও অনিয়মের চিত্র উঠে আসায় তাদের বদলি করা হয়েছে।

গত ২ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে শিশু পরিবার থেকে নিখোঁজ হয় রিজভী। এ ঘটনায় ৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্বজনরা। শিশু পরিবারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে রিজভী সেখান থেকে পালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নিখোঁজ রিজভীর স্বজন ও শিশু পরিবারের নিবাসীরা। তারা দ্রুত সন্ধান ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে উপ-তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা মো. আফসার আলী বলেন, শিশু পরিবার বালক শাখায় সর্বমোট ৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের জন্য মাসিক সরকারি বরাদ্দ ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে কিছু টাকা পোশাক ও চিকিৎসা, বাকি টাকা খাবারের জন্য ব্যয় করা হয়।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, শিশু পরিবার থেকে রিজভী নামের এক শিশু পালিয়েছে। সে বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিশুটিকে খুঁজে পেতে কাজ করছে পুলিশ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে দুর্বৃত্তের হামলায় দুই সহোদর খুন

কুষ্টিয়া শিশু পরিবারে দুর্নীতি, ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি

প্রকাশিত সময় : ১০:৩১:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারের (এতিমখানা) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে রায়হান হোসেন রিজভী (১২) নামে এক নিবাসী নিখোঁজ হয়। ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও তার এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অনিয়ম-দুর্নীতি ও নির্যাতনের চিত্র উঠে আসে। পরে সেখানকার ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।

শিশু পরিবারের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন, উপ-তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান, কারিগরি প্রশিক্ষক কাজী লুৎফর রহমান, মেট্রন কাম নার্স আফরিন আরা জাহান ও কারিগরি প্রশিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ সেখ বলেন, তদন্তে দুর্নীতি, অনিয়ম ও নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্ত্বাবধায়ক, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, একজন নার্স, দুই প্রশিক্ষককে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে গত ৯ নভেম্বর এই কর্মকর্তা বলেছিলেন, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগে কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারের (এতিমখানা) সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও উপ-তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে রিজভী নিখোঁজের ঘটনার পর গত ৮ নভেম্বর রাতে ওই শিশু পরিবারের শিশুরা নিম্নমানের খাবার দেওয়া, শিশুদের জন্য সরবরাহকৃত মালামাল বিক্রি, শিশুদের নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ তুলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিক্ষোভ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পদত্যাগের দাবি জানায়।

পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা। এ সময় সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ইলিয়াস হোসেন ও উপ-তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রিজভী নিখোঁজ, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও নির্যাতনের ঘটনায় আসাদুজ্জামান ও ইলিয়াসসহ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) দিনের পর দিন চলেছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চরম স্বেচ্ছাচারিতা। পান থেকে চুন খসলেই শিশুদের ওপর নেমে আসতো অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের খড়গ। শিশুদের জন্য সরকারি বরাদ্দের মাছ-মাংস চলে যেত কর্মকর্তাদের বাড়ি। প্রতিষ্ঠানের গাছে ধরা আম-কাঁঠালেও তাদের অধিকার ছিল না। সম্প্রতি সেখানকার এক শিশু নিখোঁজের পর আলোচনায় আসে নানা অনিয়ম। সমাজসেবা অধিদপ্তরে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও অনিয়মের চিত্র উঠে আসায় তাদের বদলি করা হয়েছে।

গত ২ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে শিশু পরিবার থেকে নিখোঁজ হয় রিজভী। এ ঘটনায় ৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্বজনরা। শিশু পরিবারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে রিজভী সেখান থেকে পালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নিখোঁজ রিজভীর স্বজন ও শিশু পরিবারের নিবাসীরা। তারা দ্রুত সন্ধান ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে উপ-তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা মো. আফসার আলী বলেন, শিশু পরিবার বালক শাখায় সর্বমোট ৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের জন্য মাসিক সরকারি বরাদ্দ ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে কিছু টাকা পোশাক ও চিকিৎসা, বাকি টাকা খাবারের জন্য ব্যয় করা হয়।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, শিশু পরিবার থেকে রিজভী নামের এক শিশু পালিয়েছে। সে বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিশুটিকে খুঁজে পেতে কাজ করছে পুলিশ।