মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিল্লির দূষণ দিনে ৪৯টি সিগারেট খাওয়ার সমান!

তীব্র দূষণে দিল্লির মানুষের হাঁসফাঁস দশা। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে বাড়ছে ধূলিকণা ও কার্বনজাত রাসায়নিক। সোমবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ভয়াবহ দূষণ বেলা গড়াবার পর কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু তা-ও দুপুর সাড়ে ১২টায় দূষণের সূচক ছিল ৯৭৮, যা দৈনিক ৪৯.০২টি সিগারেট খাওয়ার সমতুল্য।

দিল্লির পার্শ্ববর্তী হরিয়ানায় বায়ুদূষণের সূচক ছিল ৬৩১, যা দিনে ৩৩.২৫টি সিগারেট খাওয়ার সমতুল্য। উত্তরপ্রদেশে বায়ুদূষণ ছিল ২৭৩, যা দিনে ১০.১৬টি সিগারেট খাওয়ার সমান।

সোমবার রাজধানীর দূষণ নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধির চতুর্থ স্তরের নিষেধাজ্ঞা চালু থাকবে বলে জানিয়েছে। বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং অগাস্টিন জর্জ মসিহ্কে নিয়ে গঠিতবেঞ্চ দিল্লি সরকারকে বলেছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে।

বেঞ্চ বলেছে, আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই আদালতের অনুমতি ছাড়া গ্র্যাপ স্টেজ ফোরের নিচে নিষেধাজ্ঞাবিধি যেন না নামানো হয়। যদি বাতাসে দূষণের পরিমাণ ৪০০-এর নিচেও নেমে যায়, তাহলেও যেন চতুর্থ স্তরের নিরাপত্তা মেনে চলা হয়। এটাই আদালতের নির্দেশ।

প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে দিল্লি ও তার আশপাশের এলাকা ভয়াবহ দূষণে ভরে গেছে। এই কদিন খারাপ, খুব খারাপ, তীব্র স্তরে থাকলেও সোমবার সবকিছুকে ছাপিয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় চলে গেছে দূষণের মাত্রা। দূষণের কারণে আগেই দিল্লিতে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান বা গ্র্যাপের তৃতীয় স্তরের সাবধানতা পালন করা হচ্ছিল। এদিন পরিস্থিতি বিবেচনা করে চতুর্থ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করে প্রশাসন।

এর ফলে দিল্লিতে কোনোরকম নির্মাণকাজ বা ভাঙাভাঙির কাজ করা যাবে না। দিল্লিতে মাটি কাটা যাবে না। গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি চালু হবে। স্কুলে অনলাইনে ক্লাস হবে। খুব জরুরি না হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাড়িতে বসে কাজ করা যাবে। খবর দ্য ওয়ালের।

গত কয়েকদিনের মতো এদিনও দিল্লির ভোরের আকাশ ছিল ঘন ধোঁয়াশায় ঢাকা। সকাল ১০টা পর্যন্ত চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিল। মুন্ডকা, দ্বারকা সেক্টর ৮ এবং রোহিনীতে সব থেকে খারাপ ছিল বায়ুদূষণের পরিমাণ। এই তিন জায়গায় যথাক্রমে ১৫৯১, ১৪৯৭ ও ১৪২৭ ছিল সূচক।

যদিও সমীর অ্যাপ, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের জাতীয় বায়ুদূষণের সূচক সরকারি মাধ্যম, যারা ঘণ্টায় ঘণ্টায় দূষণের সূচক প্রকাশ করে, তাদের হিসাব অনুযায়ী দিল্লিতে সর্বমোট দূষণের মাত্রা ছিল ৪৮৫ (ওই একই সময়ে)। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসাবে বহু জায়গাতেই দূষণের মাত্রা ছিল ৪৭০-৫০০।

দূষণের জেরে গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে তীব্র অন্ধকার নেমে আসে ভোরের দিকে। ফলে বিঘ্ন ঘটে ট্রেন ও বিমান চলাচলে। ধোঁয়াশার কারণে নয়াদিল্লি ও আনন্দ বিহারমুখী অন্তত ২৮টি ট্রেন ২ থেকে ৯ ঘণ্টা দেরিতে চলছে। ফ্লাইটরাডার২৪-এর খবর অনুযায়ী ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৬০টির বেশি ফ্লাইট সকাল সাড়ে ৮টার আগে উড়তে পারেনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

দিল্লির দূষণ দিনে ৪৯টি সিগারেট খাওয়ার সমান!

প্রকাশিত সময় : ১১:৫৮:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

তীব্র দূষণে দিল্লির মানুষের হাঁসফাঁস দশা। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে বাড়ছে ধূলিকণা ও কার্বনজাত রাসায়নিক। সোমবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ভয়াবহ দূষণ বেলা গড়াবার পর কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু তা-ও দুপুর সাড়ে ১২টায় দূষণের সূচক ছিল ৯৭৮, যা দৈনিক ৪৯.০২টি সিগারেট খাওয়ার সমতুল্য।

দিল্লির পার্শ্ববর্তী হরিয়ানায় বায়ুদূষণের সূচক ছিল ৬৩১, যা দিনে ৩৩.২৫টি সিগারেট খাওয়ার সমতুল্য। উত্তরপ্রদেশে বায়ুদূষণ ছিল ২৭৩, যা দিনে ১০.১৬টি সিগারেট খাওয়ার সমান।

সোমবার রাজধানীর দূষণ নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধির চতুর্থ স্তরের নিষেধাজ্ঞা চালু থাকবে বলে জানিয়েছে। বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং অগাস্টিন জর্জ মসিহ্কে নিয়ে গঠিতবেঞ্চ দিল্লি সরকারকে বলেছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে।

বেঞ্চ বলেছে, আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই আদালতের অনুমতি ছাড়া গ্র্যাপ স্টেজ ফোরের নিচে নিষেধাজ্ঞাবিধি যেন না নামানো হয়। যদি বাতাসে দূষণের পরিমাণ ৪০০-এর নিচেও নেমে যায়, তাহলেও যেন চতুর্থ স্তরের নিরাপত্তা মেনে চলা হয়। এটাই আদালতের নির্দেশ।

প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে দিল্লি ও তার আশপাশের এলাকা ভয়াবহ দূষণে ভরে গেছে। এই কদিন খারাপ, খুব খারাপ, তীব্র স্তরে থাকলেও সোমবার সবকিছুকে ছাপিয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় চলে গেছে দূষণের মাত্রা। দূষণের কারণে আগেই দিল্লিতে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান বা গ্র্যাপের তৃতীয় স্তরের সাবধানতা পালন করা হচ্ছিল। এদিন পরিস্থিতি বিবেচনা করে চতুর্থ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করে প্রশাসন।

এর ফলে দিল্লিতে কোনোরকম নির্মাণকাজ বা ভাঙাভাঙির কাজ করা যাবে না। দিল্লিতে মাটি কাটা যাবে না। গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি চালু হবে। স্কুলে অনলাইনে ক্লাস হবে। খুব জরুরি না হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাড়িতে বসে কাজ করা যাবে। খবর দ্য ওয়ালের।

গত কয়েকদিনের মতো এদিনও দিল্লির ভোরের আকাশ ছিল ঘন ধোঁয়াশায় ঢাকা। সকাল ১০টা পর্যন্ত চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিল। মুন্ডকা, দ্বারকা সেক্টর ৮ এবং রোহিনীতে সব থেকে খারাপ ছিল বায়ুদূষণের পরিমাণ। এই তিন জায়গায় যথাক্রমে ১৫৯১, ১৪৯৭ ও ১৪২৭ ছিল সূচক।

যদিও সমীর অ্যাপ, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের জাতীয় বায়ুদূষণের সূচক সরকারি মাধ্যম, যারা ঘণ্টায় ঘণ্টায় দূষণের সূচক প্রকাশ করে, তাদের হিসাব অনুযায়ী দিল্লিতে সর্বমোট দূষণের মাত্রা ছিল ৪৮৫ (ওই একই সময়ে)। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসাবে বহু জায়গাতেই দূষণের মাত্রা ছিল ৪৭০-৫০০।

দূষণের জেরে গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে তীব্র অন্ধকার নেমে আসে ভোরের দিকে। ফলে বিঘ্ন ঘটে ট্রেন ও বিমান চলাচলে। ধোঁয়াশার কারণে নয়াদিল্লি ও আনন্দ বিহারমুখী অন্তত ২৮টি ট্রেন ২ থেকে ৯ ঘণ্টা দেরিতে চলছে। ফ্লাইটরাডার২৪-এর খবর অনুযায়ী ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৬০টির বেশি ফ্লাইট সকাল সাড়ে ৮টার আগে উড়তে পারেনি।