বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করবে সরকার

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। বড় অঙ্কের তহবিল উদ্ধারের জন্য তাদের কমিশন প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর।

শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি কর্তৃক আয়োজিত ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ শীর্ষক কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

সেন্টার ফর এনআরবি’র এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি এমএস শেকিল চৌধুরী এবং প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে আমরা বিদেশি সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করছি। এ জন্য আমাদের বৈশ্বিক আইন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ সময় চট্টগ্রাম-ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ পাচার দেশের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আমরা এই তহবিল পুনরুদ্ধারের জন্য এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের সাথে একসঙ্গে কাজ করছি। ইতিমধ্যে বিদেশি সংস্থাগুলো সহায়তা করার জন্য তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতে সাম্প্রতিক উন্নতির কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, গত ছয় মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ গড়ে ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাণ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এ সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির চলমান প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে ড. মনসুর উল্লেখ করেন, পূর্বে দুবাই থেকেও তহবিল পাচার করা হতো। এখন স্বচ্ছতা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই ধরনের অর্থপাচারের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি।

ব্যাংকিং চ্যানেলে সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। তবে রেমিট্যান্সের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমাদেরকে আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো কমাতে হবে। কারণ এই বাধার কারণে অনেক সময় সৌদি আরব থেকে তহবিল প্রায় সময়ই দুবাই হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছায়। যদি ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা থাকে, তাহলে খাতটি পুনরুদ্ধার  হবে।

ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও রেমিট্যান্সের এ প্রবাহকে শক্তিশালী করেছে। অনুষ্ঠানে গভর্নর টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।

রেমিট্যান্স প্রবাহ সর্বাধিক করার জন্য কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সঠিক শাসন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করবে সরকার

প্রকাশিত সময় : ০৯:০১:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। বড় অঙ্কের তহবিল উদ্ধারের জন্য তাদের কমিশন প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর।

শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি কর্তৃক আয়োজিত ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ শীর্ষক কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

সেন্টার ফর এনআরবি’র এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি এমএস শেকিল চৌধুরী এবং প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে আমরা বিদেশি সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করছি। এ জন্য আমাদের বৈশ্বিক আইন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ সময় চট্টগ্রাম-ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ পাচার দেশের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আমরা এই তহবিল পুনরুদ্ধারের জন্য এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের সাথে একসঙ্গে কাজ করছি। ইতিমধ্যে বিদেশি সংস্থাগুলো সহায়তা করার জন্য তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতে সাম্প্রতিক উন্নতির কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, গত ছয় মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ গড়ে ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পরিমাণ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এ সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির চলমান প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে ড. মনসুর উল্লেখ করেন, পূর্বে দুবাই থেকেও তহবিল পাচার করা হতো। এখন স্বচ্ছতা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই ধরনের অর্থপাচারের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি।

ব্যাংকিং চ্যানেলে সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। তবে রেমিট্যান্সের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমাদেরকে আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো কমাতে হবে। কারণ এই বাধার কারণে অনেক সময় সৌদি আরব থেকে তহবিল প্রায় সময়ই দুবাই হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছায়। যদি ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা থাকে, তাহলে খাতটি পুনরুদ্ধার  হবে।

ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও রেমিট্যান্সের এ প্রবাহকে শক্তিশালী করেছে। অনুষ্ঠানে গভর্নর টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য আর্থিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।

রেমিট্যান্স প্রবাহ সর্বাধিক করার জন্য কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সঠিক শাসন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।