বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘সুশৃঙ্খল বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে’

তৎকালীন সময়ের দুটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে (সেনাবাহিনী ও বিডিআর) ধ্বংস করার জন্য পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কারা নির্যাতিত বিডিআর পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সহযোগিতায় কারা নির্যাতিত বিডিআর পরিবারের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে খুনি হাসিনার অবৈধ ক্ষমতাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সুসংহত করাই উদ্দেশ্য। এটি ছিল দেশি-বিদেশি চক্রান্তের নীল নকশার সফল বাস্তবায়ন। কিন্তু খুনি হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে তদন্তের নামে তদন্ত হেফাজতে ৪৭ জন নিরীহ বিডিআর জোয়ানকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যেসব বিডিআর জোয়ান প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতে যাচ্ছিল— তাদেরকেই তদন্তের নামে মেরে ফেলা হয় এবং এই খুনি হাসিনার হাত থেকে পিলখানার পেশ ইমামও রক্ষা পাননি। আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম বলেন, এই সব নিরীহ মানুষগুলোকে এই নিপীড়ক সরকার নিজের স্বার্থে কুরবানির খাঁসি বানিয়েছে। তাদের বলি দেওয়া হয়েছে। এখন যেভাবে চলছে সেটি যদি চলতে থাকে তাহলে, কুরবানির খাঁসিদের রক্ষা করতে পারব না। আমাদের দায়িত্ব রয়েছে এসব ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়ানোর। বিডিআর পরিবারের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিচার কার্যক্রমের নাটক সুচারুভাবে সম্পন্ন করার পুরস্কার হিসেবে পিপি অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে টেকনোর্ক্যাট কোটায় আইনমন্ত্রী, আর সরকারি পিপি মো. মোশারফ হোসেন কাজলকে দুদকের পিপি, দায়রা জজ মোহাম্মদ জহিরুল হককে দুদকের কমিশনার এবং দায়রা জজ ড. আক্তারুজ্জামানকে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, খুনি হাসিনা সরকারের পাতানো রায় বহাল রেখে নতুন তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন তদন্ত কমিশনের ওপর হাসিনার প্রেতাত্মার ছায়া পড়েছে। আমরা দেখেছি, শহীদ পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর পরিবারের গণদাবির মুখে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনাকারী ও প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার কর্মকর্তারা প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। এসময় তিনি তাদের ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে: ১. খুনি হাসিনার প্রহসনমূলক রায় বাতিল বা স্থগিত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলবন্দি সব বিডিআর জোয়ানকে মুক্তি দিয়ে তদন্ত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ২. পূর্বের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপন থেকে ‘ব্যতীত’ নামক শব্দটি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠার ‘ঙ নম্বর’ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. খুনি হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে যে ১৮ হাজার ৫১৯ জন বিডিআর জোয়ানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে সম্পূর্ণ সরকরি সুযোগ-সুবিধসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। ৪. স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতিকে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা এবং কমিশনের অন্যান্য সদস্যদে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা দিতে হবে। এছাড়া কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের নিরাপত্তায় গাড়ি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। একইসঙ্গে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় পূর্বের বিচারের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে এসে প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড, রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানান তিনি। সূত্র: যুগান্তর

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

‘সুশৃঙ্খল বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে’

প্রকাশিত সময় : ০৯:৩৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

তৎকালীন সময়ের দুটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে (সেনাবাহিনী ও বিডিআর) ধ্বংস করার জন্য পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কারা নির্যাতিত বিডিআর পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সহযোগিতায় কারা নির্যাতিত বিডিআর পরিবারের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে খুনি হাসিনার অবৈধ ক্ষমতাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সুসংহত করাই উদ্দেশ্য। এটি ছিল দেশি-বিদেশি চক্রান্তের নীল নকশার সফল বাস্তবায়ন। কিন্তু খুনি হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে তদন্তের নামে তদন্ত হেফাজতে ৪৭ জন নিরীহ বিডিআর জোয়ানকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যেসব বিডিআর জোয়ান প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতে যাচ্ছিল— তাদেরকেই তদন্তের নামে মেরে ফেলা হয় এবং এই খুনি হাসিনার হাত থেকে পিলখানার পেশ ইমামও রক্ষা পাননি। আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম বলেন, এই সব নিরীহ মানুষগুলোকে এই নিপীড়ক সরকার নিজের স্বার্থে কুরবানির খাঁসি বানিয়েছে। তাদের বলি দেওয়া হয়েছে। এখন যেভাবে চলছে সেটি যদি চলতে থাকে তাহলে, কুরবানির খাঁসিদের রক্ষা করতে পারব না। আমাদের দায়িত্ব রয়েছে এসব ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়ানোর। বিডিআর পরিবারের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিচার কার্যক্রমের নাটক সুচারুভাবে সম্পন্ন করার পুরস্কার হিসেবে পিপি অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে টেকনোর্ক্যাট কোটায় আইনমন্ত্রী, আর সরকারি পিপি মো. মোশারফ হোসেন কাজলকে দুদকের পিপি, দায়রা জজ মোহাম্মদ জহিরুল হককে দুদকের কমিশনার এবং দায়রা জজ ড. আক্তারুজ্জামানকে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, খুনি হাসিনা সরকারের পাতানো রায় বহাল রেখে নতুন তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন তদন্ত কমিশনের ওপর হাসিনার প্রেতাত্মার ছায়া পড়েছে। আমরা দেখেছি, শহীদ পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর পরিবারের গণদাবির মুখে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনাকারী ও প্রকৃত খুনিকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার কর্মকর্তারা প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। এসময় তিনি তাদের ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে: ১. খুনি হাসিনার প্রহসনমূলক রায় বাতিল বা স্থগিত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলবন্দি সব বিডিআর জোয়ানকে মুক্তি দিয়ে তদন্ত কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ২. পূর্বের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে তদন্ত কমিশনের প্রজ্ঞাপন থেকে ‘ব্যতীত’ নামক শব্দটি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠার ‘ঙ নম্বর’ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করতে হবে। ৩. খুনি হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে যে ১৮ হাজার ৫১৯ জন বিডিআর জোয়ানকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে সম্পূর্ণ সরকরি সুযোগ-সুবিধসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। ৪. স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতিকে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেড ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা এবং কমিশনের অন্যান্য সদস্যদে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা দিতে হবে। এছাড়া কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের নিরাপত্তায় গাড়ি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। একইসঙ্গে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় পূর্বের বিচারের রায় বহাল রাখার ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে এসে প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড, রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানান তিনি। সূত্র: যুগান্তর