মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহাকাশ মিশনে মাঝপথে ‌‘অসুস্থ’ ভারতের রকেট

উৎক্ষেপণের মাত্র চার দিনের মাথাতেই বড়সড় বাধার মুখে পড়ল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র শততম মিশন! রবিবার মহাকাশে পা রাখা ইসরোর কৃত্রিম উপগ্রহ ‘এনভিএস-২’তে দেখা দিল প্রযুক্তিগত ত্রুটি।

গত বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে শততম উৎক্ষেপণের নজির গড়ে ইসরো। কৃত্রিম উপগ্রহ এনভিএস-২-কে নিয়ে রওনা দেয় জিএসএলভি এফ-১৫ রকেট। জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল বা জিএসএলভি এফ-১৫ হল ভারতের ক্রায়োজেনিক্স প্রযুক্তিতে তৈরি একটি ত্রিস্তরীয় রকেট। এটির মাধ্যমেই পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছিল এনভিএস-০২-কে।

কিন্তু চার দিন যেতে না যেতেই বাধা পড়েছে সেই মিশনে। রকেটের থ্রাস্টারগুলিকে ‘ফায়ার’ করার জন্য জারকের প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ভাল্‌ভ খুললেই সেই জারক নির্গত হতে পারে। ইসরো জানিয়েছে, সময়মতো খোলেনি ভাল্‌ভ। ফলে এনভিএস-২কে কক্ষপথের নির্ধারিত জায়গায় স্থাপনের কাজও সফল হয়নি।

ইসরো জানিয়েছে, কৃত্রিম উপগ্রহটি আপাতত উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে। পৃথিবী থেকে এই কক্ষপথের সর্বনিম্ন দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার, সর্বাধিক দূরত্ব ৩৬,৫৭৭ কিলোমিটার। এই দূরত্ব থেকে এনভিএসের পক্ষে কাজ করা কার্যত অসম্ভব। যতক্ষণ না এনভিএসের তরল ইঞ্জিন সুষ্ঠু ভাবে কাজ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মিশন নিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এনভিএস-কে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পাঠাতে কত সময় লাগবে, তা এখনও জানা নেই। সে রকম হলে মিশনটি বাতিলও হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে ইসরো।

এনভিএস-০২ স্যাটেলাইটটির ওজন প্রায় ২২৫০ কেজি। বুধবার মাত্র ১৯ মিনিটেই সেটিকে জিওসিঙ্ক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিট (জিটিও) বা স্থায়ী কক্ষপথের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয় জিএসএলভি এফ-১৫। এর আগেও একাধিক বার জিএসএলভি এফ-১৫ উৎক্ষেপণ করেছিল ইসরো। কিন্তু তাতে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা এসেছে বেশি। পূর্বের ১৬টি উৎক্ষেপণের মধ্যে ছয়টি অভিযানই ব্যর্থ হয়েছে, শতকরা হিসাবে যা প্রায় ৩৭ ভাগ! তাই শততম উৎক্ষেপণের সাফল্যে মুখে হাসি ফুটেছিল ইসরোর। কিন্তু রবিবারের ঘটনা চিন্তার ভাঁজ ফেলল বিজ্ঞানীদের কপালে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মহাকাশ মিশনে মাঝপথে ‌‘অসুস্থ’ ভারতের রকেট

প্রকাশিত সময় : ০৭:১২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উৎক্ষেপণের মাত্র চার দিনের মাথাতেই বড়সড় বাধার মুখে পড়ল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র শততম মিশন! রবিবার মহাকাশে পা রাখা ইসরোর কৃত্রিম উপগ্রহ ‘এনভিএস-২’তে দেখা দিল প্রযুক্তিগত ত্রুটি।

গত বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে শততম উৎক্ষেপণের নজির গড়ে ইসরো। কৃত্রিম উপগ্রহ এনভিএস-২-কে নিয়ে রওনা দেয় জিএসএলভি এফ-১৫ রকেট। জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল বা জিএসএলভি এফ-১৫ হল ভারতের ক্রায়োজেনিক্স প্রযুক্তিতে তৈরি একটি ত্রিস্তরীয় রকেট। এটির মাধ্যমেই পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছিল এনভিএস-০২-কে।

কিন্তু চার দিন যেতে না যেতেই বাধা পড়েছে সেই মিশনে। রকেটের থ্রাস্টারগুলিকে ‘ফায়ার’ করার জন্য জারকের প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ভাল্‌ভ খুললেই সেই জারক নির্গত হতে পারে। ইসরো জানিয়েছে, সময়মতো খোলেনি ভাল্‌ভ। ফলে এনভিএস-২কে কক্ষপথের নির্ধারিত জায়গায় স্থাপনের কাজও সফল হয়নি।

ইসরো জানিয়েছে, কৃত্রিম উপগ্রহটি আপাতত উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে। পৃথিবী থেকে এই কক্ষপথের সর্বনিম্ন দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার, সর্বাধিক দূরত্ব ৩৬,৫৭৭ কিলোমিটার। এই দূরত্ব থেকে এনভিএসের পক্ষে কাজ করা কার্যত অসম্ভব। যতক্ষণ না এনভিএসের তরল ইঞ্জিন সুষ্ঠু ভাবে কাজ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মিশন নিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এনভিএস-কে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পাঠাতে কত সময় লাগবে, তা এখনও জানা নেই। সে রকম হলে মিশনটি বাতিলও হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে ইসরো।

এনভিএস-০২ স্যাটেলাইটটির ওজন প্রায় ২২৫০ কেজি। বুধবার মাত্র ১৯ মিনিটেই সেটিকে জিওসিঙ্ক্রোনাস ট্রান্সফার অরবিট (জিটিও) বা স্থায়ী কক্ষপথের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয় জিএসএলভি এফ-১৫। এর আগেও একাধিক বার জিএসএলভি এফ-১৫ উৎক্ষেপণ করেছিল ইসরো। কিন্তু তাতে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা এসেছে বেশি। পূর্বের ১৬টি উৎক্ষেপণের মধ্যে ছয়টি অভিযানই ব্যর্থ হয়েছে, শতকরা হিসাবে যা প্রায় ৩৭ ভাগ! তাই শততম উৎক্ষেপণের সাফল্যে মুখে হাসি ফুটেছিল ইসরোর। কিন্তু রবিবারের ঘটনা চিন্তার ভাঁজ ফেলল বিজ্ঞানীদের কপালে।