রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে অন্তঃসত্ত্বা পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার

গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা এলাকায় প্যানারোমা এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে অন্তঃসন্তা এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত সোমবার (৩ মার্চ) রাতে বাসন থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন নিহতের মা নাজমা বেগম। পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিহত ওই নারী শ্রমিক হলেন, ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানা জাগির ভূগলী এলাকার আফসার আলীর মেয়ে আফসানা আক্তার (৩০)। গ্রেপ্তারকৃত হলেন, ময়মনসিংহ নান্দাইলের চাঁন মিয়ার ছেলে হৃদয় খান ওরফে মল্লিক মিয়া (৩০)।

মামলার বাদি নিহতের মা নাজমা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেছেন, “প্রায় ১০ বছর আগে তার মেয়ে আফসানা আক্তারের সঙ্গে হৃদয় খানের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুইটি সন্তান রয়েছে এবং আফসানা আক্তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আফসানা আক্তার গাজীপুর মহানগরীর প্যানোরামা এ্যাপারেলস্ লিমিটেড-এ সুইং জুনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।

‘বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত এবং ঠিকমতো ভরনপোষণ দিত না। সবসময় গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য চাপ দিত। আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা থাকায় আর গার্মেন্টসে করবে না। একথা শুনে মেয়ের জামাই হৃদয় খান উত্তেজিত হয়ে আমার মেয়েকে শারিরীক নির্যাতন করে এবং গার্মেন্টেসের চাকরি করতে বাধ্য করে।”

বাদি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘‘গত ২ মার্চ সকালে পূর্বের ন্যায় আমার মেয়েকে অত্যাচার করে। আসামির অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করলে আসামি আমার মেয়েকে মারতে উদ্যত হয় এবং আমার মেয়েকে বলে যে, ‘তুই মরে গেলে আমি শান্তি পাই, তুই মরে যা।’ পরে আমার মেয়ে কর্মস্থলে চলে যায়। আমার মেয়ে আফসানা আক্তার আসামির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুপুর অনুমানানিক ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই কারখানার ছাদ হতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।’’

ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর তার স্বামীকে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে কারখানার ছাদ থেকে নারী শ্রমিক আত্মহত্যার ঘটনায় সোমবার সকালে ওই কারখানা শ্রমিকরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় শ্রমিকরা দাবি তোলে ছুটি না দেওয়ায় ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী শ্রমিক আত্মহত্যা করেছে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার সামনে থাকা ব্যক্তিগত গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল মহাসড়কে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

গাজীপুরে অন্তঃসত্ত্বা পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার

প্রকাশিত সময় : ০৭:১৭:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা এলাকায় প্যানারোমা এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে অন্তঃসন্তা এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত সোমবার (৩ মার্চ) রাতে বাসন থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন নিহতের মা নাজমা বেগম। পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিহত ওই নারী শ্রমিক হলেন, ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানা জাগির ভূগলী এলাকার আফসার আলীর মেয়ে আফসানা আক্তার (৩০)। গ্রেপ্তারকৃত হলেন, ময়মনসিংহ নান্দাইলের চাঁন মিয়ার ছেলে হৃদয় খান ওরফে মল্লিক মিয়া (৩০)।

মামলার বাদি নিহতের মা নাজমা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেছেন, “প্রায় ১০ বছর আগে তার মেয়ে আফসানা আক্তারের সঙ্গে হৃদয় খানের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুইটি সন্তান রয়েছে এবং আফসানা আক্তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আফসানা আক্তার গাজীপুর মহানগরীর প্যানোরামা এ্যাপারেলস্ লিমিটেড-এ সুইং জুনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।

‘বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত এবং ঠিকমতো ভরনপোষণ দিত না। সবসময় গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য চাপ দিত। আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা থাকায় আর গার্মেন্টসে করবে না। একথা শুনে মেয়ের জামাই হৃদয় খান উত্তেজিত হয়ে আমার মেয়েকে শারিরীক নির্যাতন করে এবং গার্মেন্টেসের চাকরি করতে বাধ্য করে।”

বাদি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘‘গত ২ মার্চ সকালে পূর্বের ন্যায় আমার মেয়েকে অত্যাচার করে। আসামির অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করলে আসামি আমার মেয়েকে মারতে উদ্যত হয় এবং আমার মেয়েকে বলে যে, ‘তুই মরে গেলে আমি শান্তি পাই, তুই মরে যা।’ পরে আমার মেয়ে কর্মস্থলে চলে যায়। আমার মেয়ে আফসানা আক্তার আসামির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুপুর অনুমানানিক ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই কারখানার ছাদ হতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।’’

ওই ঘটনায় নিহতের মা বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের পর তার স্বামীকে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে কারখানার ছাদ থেকে নারী শ্রমিক আত্মহত্যার ঘটনায় সোমবার সকালে ওই কারখানা শ্রমিকরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় শ্রমিকরা দাবি তোলে ছুটি না দেওয়ায় ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী শ্রমিক আত্মহত্যা করেছে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার সামনে থাকা ব্যক্তিগত গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল মহাসড়কে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।