রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুজিব ভাস্কর্য ও মুজিববর্ষের না‌মে হাজার কো‌টি টাকা গচ্চা, অনুসন্ধানে দুদক

ক্ষমতায় থাকা‌কালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে দে‌শজুড়ে শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিববর্ষ পালনের নামে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকা গচ্চা দি‌য়ে রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। অভি‌যোগ আম‌লে নি‌য়ে অনুসন্ধান শুরু ক‌রে‌ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোম‌ধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধা‌নে সাত সদস্যের ক‌মি‌টি গঠন করা হ‌য়ে‌ছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হো‌সেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তি‌নি ব‌লেন, ‘‘শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিববর্ষ পালনের নামে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুদক। প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সাত সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।’’

দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামকে টিমের প্রধান করা হ‌য়ে‌ছে।

টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

দুদক জানায়, মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই ব্যয় এখন অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসেবেই মূল্যায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

সারা দেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য বানানো হয়। তবে সরকারি সাতশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। সব জেলা পরিষদে ম্যুরাল নির্মাণে খরচ হয় ৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। সড়কের শুরুতে, শেষে, চৌরাস্তায়, নদীর তীরে, পুকুরপাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায়— এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এগুলো বসানো হয়নি।

অভি‌যোগ আছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও ডিজাইন তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে এর মোট ব্যয় হয় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে তৈরি করা ম্যুরালটির উচ্চতা ১০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। নির্মাণে সময় লাগে তিন মাস। ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ বেতার পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় মুর‌্যাল নির্মাণ করে। এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণে পৃথক কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সরকারি অর্থে স্থানীয় প্রশাসন এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করে। ফ‌লে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকার ক্ষ‌তি হ‌য়ে‌ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মুজিব ভাস্কর্য ও মুজিববর্ষের না‌মে হাজার কো‌টি টাকা গচ্চা, অনুসন্ধানে দুদক

প্রকাশিত সময় : ১০:৫৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

ক্ষমতায় থাকা‌কালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে দে‌শজুড়ে শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিববর্ষ পালনের নামে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকা গচ্চা দি‌য়ে রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। অভি‌যোগ আম‌লে নি‌য়ে অনুসন্ধান শুরু ক‌রে‌ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোম‌ধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধা‌নে সাত সদস্যের ক‌মি‌টি গঠন করা হ‌য়ে‌ছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হো‌সেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তি‌নি ব‌লেন, ‘‘শেখ মুজিবের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিববর্ষ পালনের নামে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বোন শেখ রেহানাসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুদক। প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সাত সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।’’

দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামকে টিমের প্রধান করা হ‌য়ে‌ছে।

টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

দুদক জানায়, মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই ব্যয় এখন অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসেবেই মূল্যায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

সারা দেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য বানানো হয়। তবে সরকারি সাতশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এতে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। সব জেলা পরিষদে ম্যুরাল নির্মাণে খরচ হয় ৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। সড়কের শুরুতে, শেষে, চৌরাস্তায়, নদীর তীরে, পুকুরপাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায়— এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এগুলো বসানো হয়নি।

অভি‌যোগ আছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও ডিজাইন তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে এর মোট ব্যয় হয় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে তৈরি করা ম্যুরালটির উচ্চতা ১০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। নির্মাণে সময় লাগে তিন মাস। ব্যয় হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ বেতার পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় মুর‌্যাল নির্মাণ করে। এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি নির্মাণে পৃথক কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। সরকারি অর্থে স্থানীয় প্রশাসন এই ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করে। ফ‌লে সরকা‌রের হাজার কো‌টি টাকার ক্ষ‌তি হ‌য়ে‌ছে।