সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আইনটির বিরুদ্ধে করা ৭৩টি পিটিশনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ ঘোষণা দেন।

আইন স্থগিতের পর সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে নিশ্চিত করা হয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন নিয়োগ বা সম্পত্তির অবস্থা পরিবর্তন করা হবে না। পুরোনো ওয়াকফ এবং ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিও আগের মতো থাকবে। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধর্মীয় বা দানের কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করতে পারে, এমনকি কাগজপত্র না থাকলেও। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ বা সরকারি জমিতে এটি প্রযোজ্য হবে না। বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, দিল্লি হাইকোর্ট ওয়াকফ জমির ওপর। সব ওয়াক্ফ বাই ইউজার ভুল নয়।’

তিনি জানান, ১৩শ, ১৪শ বা ১৫শ শতাব্দীর মসজিদের জন্য কাগজপত্র পাওয়া অসম্ভব।

তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, “আপনারা কি বলছেন, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ এখন বাতিল হবে? আইন দিয়ে আদালতের রায় বাতিল করা যায় না।”

আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, “হাজার বছর আগে ওয়াকফ তৈরি হলে এখন কাগজপত্র চাওয়া সমস্যা।’

আইনজীবী অভিষেক সিংভি জানান, ভারতের আট লাখ ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে চার লাখই ওয়াকফ বাই ইউজার।

এদিকে, নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান আছে। এতে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কাউন্সিলে ২২ জনের মধ্যে ৮ জন এবং রাজ্য বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে চার জন মুসলিম থাকবে। এই বিধান মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতাকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা কি হিন্দু দেবোত্তর বোর্ডে মুসলিম সদস্য রাখতে দেবেন? খোলাখুলি বলুন।”

বৃহস্পতিবার সরকার জানায়, নতুন আইনের ৯ ও ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো নিয়োগ করা হবে না। এই ধারাগুলো কাউন্সিল ও বোর্ডে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে। সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা মামলার জবাব দেয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় চান, যা আদালত মঞ্জুর করেছে। আদালত বলেছে, আবেদনকারীরা সরকারের জবাবের পর পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসে সংসদে ওয়াকফ আইন সংশোধনের পর ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে সংহিসতায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

প্রকাশিত সময় : ১১:০০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আইনটির বিরুদ্ধে করা ৭৩টি পিটিশনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ ঘোষণা দেন।

আইন স্থগিতের পর সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে নিশ্চিত করা হয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন নিয়োগ বা সম্পত্তির অবস্থা পরিবর্তন করা হবে না। পুরোনো ওয়াকফ এবং ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিও আগের মতো থাকবে। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধর্মীয় বা দানের কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করতে পারে, এমনকি কাগজপত্র না থাকলেও। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ বা সরকারি জমিতে এটি প্রযোজ্য হবে না। বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, দিল্লি হাইকোর্ট ওয়াকফ জমির ওপর। সব ওয়াক্ফ বাই ইউজার ভুল নয়।’

তিনি জানান, ১৩শ, ১৪শ বা ১৫শ শতাব্দীর মসজিদের জন্য কাগজপত্র পাওয়া অসম্ভব।

তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, “আপনারা কি বলছেন, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ এখন বাতিল হবে? আইন দিয়ে আদালতের রায় বাতিল করা যায় না।”

আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, “হাজার বছর আগে ওয়াকফ তৈরি হলে এখন কাগজপত্র চাওয়া সমস্যা।’

আইনজীবী অভিষেক সিংভি জানান, ভারতের আট লাখ ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে চার লাখই ওয়াকফ বাই ইউজার।

এদিকে, নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান আছে। এতে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কাউন্সিলে ২২ জনের মধ্যে ৮ জন এবং রাজ্য বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে চার জন মুসলিম থাকবে। এই বিধান মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতাকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা কি হিন্দু দেবোত্তর বোর্ডে মুসলিম সদস্য রাখতে দেবেন? খোলাখুলি বলুন।”

বৃহস্পতিবার সরকার জানায়, নতুন আইনের ৯ ও ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো নিয়োগ করা হবে না। এই ধারাগুলো কাউন্সিল ও বোর্ডে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে। সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা মামলার জবাব দেয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় চান, যা আদালত মঞ্জুর করেছে। আদালত বলেছে, আবেদনকারীরা সরকারের জবাবের পর পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসে সংসদে ওয়াকফ আইন সংশোধনের পর ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে সংহিসতায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।