সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং কমিয়েছে মুডিস

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডিস আমেরিকার সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং কমিয়েছে। ঋণ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় শুক্রবার (১৬ মে) রেটিং কমিয়েছে তারা। খবর সিনহুয়ার।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং ‘এএএ’ থেকে কমিয়ে ‘এএ১’ করে দিয়েছে। এটি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যে, মার্কিন অর্থনীতির ভিত কিছুটা হলেও দুর্বল হচ্ছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কর ও ব্যয় কমানো ইস্যুতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এমন কর্মকাণ্ডে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। একইসঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটির ঋণ তিন লাখ ৬০ হাজার লাখ কোটি ছাড়িয়েছে। মার্কিন সরকারের অতিরিক্ত ঋণের বোঝা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থর গতির কারণেই মুডিস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মুডিস এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের ২১-নচ রেটিং স্কেলে এই এক-নচ ডাউনগ্রেড এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সরকারি ঋণ এবং সুদ পরিশোধের অনুপাতের বৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে, যা একই ধরনেরর রেটিংপ্রাপ্ত সার্বভৌমদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।”

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “রাজস্ব ঘাটতি ও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকা সুদের ব্যয় নিয়ে মার্কিন প্রশাসন ও কংগ্রেস ঐক্যমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জেরে নিজেদের আউটলুকে যুক্তরাষ্ট্রকে স্থিতিশীল থেকে নেগেটিভে স্থানান্তর করা হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ক্রেডিট রেটিং সংস্থাটি আরো বলেছে, “আমরা বিশ্বাস করি না যে, চলতি বছরের বাজেট প্রস্তাব বিবেচনাধীন থাকার ফলে বাধ্যতামূলক ব্যয় এবং ঘাটতির ক্ষেত্রে বহু-বছর ধরে উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটবে। আগামী দশকে, আমরা আরো বড় ঘাটতির আশা করছি কারণ এনটাইটেলমেন্ট ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারি রাজস্ব মোটামুটিভাবে সমতল থাকবে।”

মুডিস জানিয়েছে, ক্রমাগত বৃহৎ রাজস্ব ঘাটতি সরকারের ঋণ এবং সুদের বোঝা আরো বাড়িয়ে দেবে।

ক্রেডিট রেটিং সংস্থাটি বলছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব কর্মক্ষমতা তার নিজস্ব অতীতের তুলনায় এবং অন্যান্য উচ্চ-রেটেড সার্বভৌমদের তুলনায় আরো খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

মুডিস ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে দেওয়ার মানে হলো, ২০২৩ সালে ফিচ রেটিং এবং ২০১১ সালে এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিং দ্বারা হ্রাসের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রধান রেটিং সংস্থা থেকে তার শেষ ‘ট্রিপল-এ’ ক্রেডিট রেটিং হারালো।

মুডিস আগামী দশকে মার্কিন ঋণের বোঝা এবং আর্থিক অবস্থার জন্য একটি হতাশাজনক পূর্বাভাসও দিয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যানুসারে, কর এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে সমন্বয় না করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের নমনীয়তা সীমিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুদ ব্যয়সহ বাধ্যতামূলক ব্যয় ২০৩৫ সালের মধ্যে মোট ব্যয়ের প্রায় ৭৮ শতাংশে উন্নীত হবে, যা ২০২৪ সালে প্রায় ৭৩ শতাংশ ছিল।

মুডিস রেটিং অনুসারে, যদি ২০১৭ সালের কর কর্তন ও চাকরি আইন সম্প্রসারিত করা হয়, তাহলে আগামী দশকে ফেডারেল রাজস্ব প্রাথমিক (সুদ প্রদান ব্যতীত) ঘাটতিতে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হবে।

মুডিস রেটিং অনুমান করেছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে মার্কিন ফেডারেল ঋণের বোঝা জিডিপির প্রায় ১৩৪ শতাংশে উন্নীত হবে, যা ২০২৪ সালে ৯৮ শতাংশ ছিল।

সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, মার্কিন ট্রেজারি সম্পদের উচ্চ চাহিদা সত্ত্বেও, ২০২১ সাল থেকে উচ্চ ট্রেজারি ফলন ঋণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসে অবদান রেখেছে।

মুডিস জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ফেডারেল সুদের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ রাজস্ব শোষণ করবে, যা ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৯ শতাংশ ছিল।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মুডিসের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা। ট্রাম্পের সাবেক সিনিয়র অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের অর্থনীতিবিদ স্টিফেন মুর মুডিসের সিদ্ধান্তকে অপমানজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকার সমর্থিত বন্ড ‘ট্রিপল-এ’ না পায় তাহলে তারা কি পাবে।”

মুডিসের সিদ্ধান্তের জেরে হোয়াইট হাউজের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চেউঞ্জ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে নিজের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি এক পোস্টে মুডিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্দির সমালোচনা করেছেন। জান্দিকে ট্রাম্পের রাজনৈতিক বিরোধী আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং কমিয়েছে মুডিস

প্রকাশিত সময় : ০৩:৫১:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডিস আমেরিকার সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং কমিয়েছে। ঋণ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় শুক্রবার (১৬ মে) রেটিং কমিয়েছে তারা। খবর সিনহুয়ার।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং ‘এএএ’ থেকে কমিয়ে ‘এএ১’ করে দিয়েছে। এটি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যে, মার্কিন অর্থনীতির ভিত কিছুটা হলেও দুর্বল হচ্ছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কর ও ব্যয় কমানো ইস্যুতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এমন কর্মকাণ্ডে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। একইসঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটির ঋণ তিন লাখ ৬০ হাজার লাখ কোটি ছাড়িয়েছে। মার্কিন সরকারের অতিরিক্ত ঋণের বোঝা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থর গতির কারণেই মুডিস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মুডিস এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের ২১-নচ রেটিং স্কেলে এই এক-নচ ডাউনগ্রেড এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সরকারি ঋণ এবং সুদ পরিশোধের অনুপাতের বৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করে, যা একই ধরনেরর রেটিংপ্রাপ্ত সার্বভৌমদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।”

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “রাজস্ব ঘাটতি ও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকা সুদের ব্যয় নিয়ে মার্কিন প্রশাসন ও কংগ্রেস ঐক্যমতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জেরে নিজেদের আউটলুকে যুক্তরাষ্ট্রকে স্থিতিশীল থেকে নেগেটিভে স্থানান্তর করা হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ক্রেডিট রেটিং সংস্থাটি আরো বলেছে, “আমরা বিশ্বাস করি না যে, চলতি বছরের বাজেট প্রস্তাব বিবেচনাধীন থাকার ফলে বাধ্যতামূলক ব্যয় এবং ঘাটতির ক্ষেত্রে বহু-বছর ধরে উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটবে। আগামী দশকে, আমরা আরো বড় ঘাটতির আশা করছি কারণ এনটাইটেলমেন্ট ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারি রাজস্ব মোটামুটিভাবে সমতল থাকবে।”

মুডিস জানিয়েছে, ক্রমাগত বৃহৎ রাজস্ব ঘাটতি সরকারের ঋণ এবং সুদের বোঝা আরো বাড়িয়ে দেবে।

ক্রেডিট রেটিং সংস্থাটি বলছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব কর্মক্ষমতা তার নিজস্ব অতীতের তুলনায় এবং অন্যান্য উচ্চ-রেটেড সার্বভৌমদের তুলনায় আরো খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

মুডিস ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে দেওয়ার মানে হলো, ২০২৩ সালে ফিচ রেটিং এবং ২০১১ সালে এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিং দ্বারা হ্রাসের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রধান রেটিং সংস্থা থেকে তার শেষ ‘ট্রিপল-এ’ ক্রেডিট রেটিং হারালো।

মুডিস আগামী দশকে মার্কিন ঋণের বোঝা এবং আর্থিক অবস্থার জন্য একটি হতাশাজনক পূর্বাভাসও দিয়েছে।

সংস্থাটির তথ্যানুসারে, কর এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে সমন্বয় না করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের নমনীয়তা সীমিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুদ ব্যয়সহ বাধ্যতামূলক ব্যয় ২০৩৫ সালের মধ্যে মোট ব্যয়ের প্রায় ৭৮ শতাংশে উন্নীত হবে, যা ২০২৪ সালে প্রায় ৭৩ শতাংশ ছিল।

মুডিস রেটিং অনুসারে, যদি ২০১৭ সালের কর কর্তন ও চাকরি আইন সম্প্রসারিত করা হয়, তাহলে আগামী দশকে ফেডারেল রাজস্ব প্রাথমিক (সুদ প্রদান ব্যতীত) ঘাটতিতে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হবে।

মুডিস রেটিং অনুমান করেছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে মার্কিন ফেডারেল ঋণের বোঝা জিডিপির প্রায় ১৩৪ শতাংশে উন্নীত হবে, যা ২০২৪ সালে ৯৮ শতাংশ ছিল।

সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, মার্কিন ট্রেজারি সম্পদের উচ্চ চাহিদা সত্ত্বেও, ২০২১ সাল থেকে উচ্চ ট্রেজারি ফলন ঋণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসে অবদান রেখেছে।

মুডিস জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ফেডারেল সুদের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ রাজস্ব শোষণ করবে, যা ২০২৪ সালে প্রায় ১৮ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৯ শতাংশ ছিল।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মুডিসের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা। ট্রাম্পের সাবেক সিনিয়র অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের অর্থনীতিবিদ স্টিফেন মুর মুডিসের সিদ্ধান্তকে অপমানজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকার সমর্থিত বন্ড ‘ট্রিপল-এ’ না পায় তাহলে তারা কি পাবে।”

মুডিসের সিদ্ধান্তের জেরে হোয়াইট হাউজের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চেউঞ্জ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে নিজের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি এক পোস্টে মুডিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্দির সমালোচনা করেছেন। জান্দিকে ট্রাম্পের রাজনৈতিক বিরোধী আখ্যা দিয়েছেন তিনি।