মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেরপুরে বন্য হাতির আক্রমণে নিহত ২

ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের দরবেশতলা এলাকায় ভ্যান চালক মো. আজিজুর রহমান আকাশ (৪০) এর মৃত্যু হয়। এর দুই ঘণ্টা পর রাত দশটার সময় এফিলিস মারাক (৫২) নামে এক সিএনজি চালকের মৃত্যু হয়।

আকাশ কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও এলাকার মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে এবং এফিলিস মারাকক গজনী এলাকার সহেন সিমসাং-এর ছেলে।

আকাশের নিকট আত্মীয় মো. দুলাল মন্ডল (স্ত্রীর বড় ভাই) জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় ২০-৩০টি হাতির একটি দল ধান ক্ষেতে নেমে আসে। ফসল রক্ষায় এলাকার মানুষ লাঠি নিয়ে হাতির পালটিকে ধাওয়া করেন।

এসময় আকাশ হাতির খুব কাছাকাছি চলে যান। পরে একটি হাতি তাকে ধাওয়া দিয়ে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় দেয়। এতে তার মাথা ও পেটের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। লোকজনের ধাওয়া খেয়ে হাতির দল সরে যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিএনজি চালক এফিলিস মারাক সিএনজি চালানো শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। সেসময় তারা চারজন একত্রে ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি এলে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা হাতির পালের কবলে পড়ে। সাথের তিন জন দৌড়ে পালিয়ে গেলেও এফিলিস মারাক পালাতে পারেননি।

হাতির দল থেকে একটি হিংস্র হাতি তাকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় দেয়। এতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান জানান, প্রতিবছর এভাবে হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নে আশ্বাস শুনতে শুনতে যুগ যুগ কেটে গেলো। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি।

ঝিনাইগাতী উপজেলা বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, “হাতির আক্রমণে মৃত্যু হলে বন বিভাগ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। আমরা পরবর্তীতে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি সহায়তা প্রদানে সহযোগিতা করব।”

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-আমীন বলেন, “ওই অটোভ্যান চালকের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও এফিলিস মারাকের লাশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর দুইটি মামলা দায়ের করা হবে।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

শেরপুরে বন্য হাতির আক্রমণে নিহত ২

প্রকাশিত সময় : ১২:০৯:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের দরবেশতলা এলাকায় ভ্যান চালক মো. আজিজুর রহমান আকাশ (৪০) এর মৃত্যু হয়। এর দুই ঘণ্টা পর রাত দশটার সময় এফিলিস মারাক (৫২) নামে এক সিএনজি চালকের মৃত্যু হয়।

আকাশ কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও এলাকার মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে এবং এফিলিস মারাকক গজনী এলাকার সহেন সিমসাং-এর ছেলে।

আকাশের নিকট আত্মীয় মো. দুলাল মন্ডল (স্ত্রীর বড় ভাই) জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় ২০-৩০টি হাতির একটি দল ধান ক্ষেতে নেমে আসে। ফসল রক্ষায় এলাকার মানুষ লাঠি নিয়ে হাতির পালটিকে ধাওয়া করেন।

এসময় আকাশ হাতির খুব কাছাকাছি চলে যান। পরে একটি হাতি তাকে ধাওয়া দিয়ে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় দেয়। এতে তার মাথা ও পেটের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। লোকজনের ধাওয়া খেয়ে হাতির দল সরে যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিএনজি চালক এফিলিস মারাক সিএনজি চালানো শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। সেসময় তারা চারজন একত্রে ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি এলে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা হাতির পালের কবলে পড়ে। সাথের তিন জন দৌড়ে পালিয়ে গেলেও এফিলিস মারাক পালাতে পারেননি।

হাতির দল থেকে একটি হিংস্র হাতি তাকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় দেয়। এতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান জানান, প্রতিবছর এভাবে হাতির আক্রমণে মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রকল্প বাস্তবায়নে আশ্বাস শুনতে শুনতে যুগ যুগ কেটে গেলো। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি।

ঝিনাইগাতী উপজেলা বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, “হাতির আক্রমণে মৃত্যু হলে বন বিভাগ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। আমরা পরবর্তীতে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি সহায়তা প্রদানে সহযোগিতা করব।”

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-আমীন বলেন, “ওই অটোভ্যান চালকের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও এফিলিস মারাকের লাশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর দুইটি মামলা দায়ের করা হবে।”