শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি, আদালতে বললেন আউয়াল

ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রদ্রোহ ও বির্তকিত নির্বাচন দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর শেরে বাংলা থানার মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে তিনি বিচারকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

মামলা তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুদ্দোজা সরকার এ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান শুনানি শেষে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আজ রিমান্ড শুনানিতে সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতের অনুমতি নিয়ে কিছু কথা বলতে চান। আদালত অনুমতি দিলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমার জীবনে কোনদিন কেউ অর্থ আত্মসাত বা দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। আমি ডামি বা প্রশ্ন নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত নই। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাকে কেউ পয়সা দেয়নি বা আমি কারও কাছ থেকে পয়সা নেয়নি।’

এ সময় বিচারক বলেন,‘রিটার্নিং কর্মকর্তার যারা সহযোগী থাকেন তারা অতীতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার অধিক পায়নি। আপনার সময়ে তাদের পারিশ্রমিক বহুগুণ বৃদ্ধি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনার কোনো দায়িত্ব ছিল কি না? এবারের নির্বাচনের সময় আমি একটা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক ছিলাম, অথচ আমাকে দায়িত্ব না দিয়ে অন্য একজনকে দেওয়া হয়, তারা প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা করে বিল তুলেছে।’

হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘এত টাকা বিল পাওয়ার কথা আমার জানা নেই। একটি নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রায় ৮ লাখ লোক যুক্ত থাকে, তাদের কাউকে আমি চিনিও না।’

বিচারক বলেন, ‘আপনার সময় আপনি দেশ সেরা অফিসার ছিলেন। নির্বাচনে অনৈতিকতা দায় নিয়ে কেন আপনি পদত্যাগ করেননি?’

জবাবে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করলে ভালো হতো। কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তখন কী নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগ করেছেন।’

এ সময় মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী তাকে কথা বলতে বাধা দিলে হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘আমাকে কথা বলতে না দিলে একটা রিভলভা দিয়ে আমাকে মেরে ফেলেন। দলীয় সরকারের অধীনে সব নির্বাচনই বিতর্কিত। শেখ মুজিবও ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারেনি। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অতীতেও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি আগামী এক হাজার বছরেও সুষ্ঠু হবে না। যদি না কিছু মৌলিক সংস্কার করা হয়। কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আগামী এক হাজার বছরেও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোন নির্বাচন বিতর্কিত মুক্ত বলুন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালেও কিন্তু মানুষকে পথে আটকে নমিনেশন দিতে দেওয়া হয়নি। শেখ মুজিবের ক্ষমতার যে লোভ, তিনিও নিজেকে সামলাতে পারেননি। সেই সময়ও কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি, আদালতে বললেন আউয়াল

প্রকাশিত সময় : ০৬:৪৩:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রদ্রোহ ও বির্তকিত নির্বাচন দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর শেরে বাংলা থানার মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে তিনি বিচারকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

মামলা তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুদ্দোজা সরকার এ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান শুনানি শেষে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আজ রিমান্ড শুনানিতে সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতের অনুমতি নিয়ে কিছু কথা বলতে চান। আদালত অনুমতি দিলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমার জীবনে কোনদিন কেউ অর্থ আত্মসাত বা দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি। আমি ডামি বা প্রশ্ন নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত নই। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমাকে কেউ পয়সা দেয়নি বা আমি কারও কাছ থেকে পয়সা নেয়নি।’

এ সময় বিচারক বলেন,‘রিটার্নিং কর্মকর্তার যারা সহযোগী থাকেন তারা অতীতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার অধিক পায়নি। আপনার সময়ে তাদের পারিশ্রমিক বহুগুণ বৃদ্ধি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনার কোনো দায়িত্ব ছিল কি না? এবারের নির্বাচনের সময় আমি একটা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক ছিলাম, অথচ আমাকে দায়িত্ব না দিয়ে অন্য একজনকে দেওয়া হয়, তারা প্রত্যেকে ৫ লাখ টাকা করে বিল তুলেছে।’

হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘এত টাকা বিল পাওয়ার কথা আমার জানা নেই। একটি নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রায় ৮ লাখ লোক যুক্ত থাকে, তাদের কাউকে আমি চিনিও না।’

বিচারক বলেন, ‘আপনার সময় আপনি দেশ সেরা অফিসার ছিলেন। নির্বাচনে অনৈতিকতা দায় নিয়ে কেন আপনি পদত্যাগ করেননি?’

জবাবে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করলে ভালো হতো। কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তখন কী নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগ করেছেন।’

এ সময় মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী তাকে কথা বলতে বাধা দিলে হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘আমাকে কথা বলতে না দিলে একটা রিভলভা দিয়ে আমাকে মেরে ফেলেন। দলীয় সরকারের অধীনে সব নির্বাচনই বিতর্কিত। শেখ মুজিবও ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারেনি। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অতীতেও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি আগামী এক হাজার বছরেও সুষ্ঠু হবে না। যদি না কিছু মৌলিক সংস্কার করা হয়। কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আগামী এক হাজার বছরেও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোন নির্বাচন বিতর্কিত মুক্ত বলুন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালেও কিন্তু মানুষকে পথে আটকে নমিনেশন দিতে দেওয়া হয়নি। শেখ মুজিবের ক্ষমতার যে লোভ, তিনিও নিজেকে সামলাতে পারেননি। সেই সময়ও কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’