বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় ২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন

নওগাঁয় অপহরণ করে হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদন্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

অপহরণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মিশু (১৯) পিংকি (৩০)। এছাড় এ মামলায় দুই আসামি হুজাইফা এবং সাজু আহমেদের১৮ বছর না হওয়ায় তাদের ১০ বছর আটকাদেশ দেওয়া হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মোরশেদ আলী (৩৫) ও রবিউল ইসলাম (৩৮)। তবে, এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে এক নারীকে খালাস প্রদান করা হয়েছে।

হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের নাজমুল নামের এক স্কুল ছাত্রকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে তার বাবার কাছ ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন কয়েকজন যুবক। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে পরের দিন আসামিরা নাজমুলকে হত্যা করে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে আক্কেলপুর রেলগেটের উত্তর পাশে ডোবার মধ্যে ফেলে রাখেন। পরে নাজমুলের বাবা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ দুই আসামি মিশু ও পিংকিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলার আরও দুই আসামির ১৮ বছর না হওয়ায় তাদের ১০ বছর আটকাদেশ দেওয়া হয়।

অপরদিকে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মান্দা উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার বালুবাজার গ্রামের মোরশেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন আসামি রবিউল ইসলাম। এ সময় তিনি মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারন করে রেখে দেন। পরবর্তীতে ওই মেয়েকে রবিউল ইসলাম বিয়ে না করলে মেয়ের পরিবার তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে আসামি রবিউল ইসলাম মেয়ের স্বামীর কাছে ধর্ষণের ভিডিও পাঠান। ধর্ষণের ভিডিও এবং ছবি দেখে ওই মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেন। কিছুদিন পরে ঢাকার বিক্রমপুরে ওই মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে হলে রবিউল ইসলাম দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও ধর্ষণের ভিডিও পাঠান। তখন তার দ্বিতীয় স্বামী আইনি পরামর্শের কথা বলে ওই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে মান্দা থানা পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা থাকার রিপোর্ট প্রদান করেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে মোরশেদ আলী এবং রবিউল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে আরেক আসামির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাস প্রদান করেছেন।

উভয় মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিশেষ কুশলি এডভোকেট রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

নওগাঁয় ২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন

প্রকাশিত সময় : ০৬:৪৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

নওগাঁয় অপহরণ করে হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদন্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

অপহরণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মিশু (১৯) পিংকি (৩০)। এছাড় এ মামলায় দুই আসামি হুজাইফা এবং সাজু আহমেদের১৮ বছর না হওয়ায় তাদের ১০ বছর আটকাদেশ দেওয়া হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মোরশেদ আলী (৩৫) ও রবিউল ইসলাম (৩৮)। তবে, এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে এক নারীকে খালাস প্রদান করা হয়েছে।

হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের নাজমুল নামের এক স্কুল ছাত্রকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে তার বাবার কাছ ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন কয়েকজন যুবক। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে পরের দিন আসামিরা নাজমুলকে হত্যা করে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে আক্কেলপুর রেলগেটের উত্তর পাশে ডোবার মধ্যে ফেলে রাখেন। পরে নাজমুলের বাবা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ দুই আসামি মিশু ও পিংকিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলার আরও দুই আসামির ১৮ বছর না হওয়ায় তাদের ১০ বছর আটকাদেশ দেওয়া হয়।

অপরদিকে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মান্দা উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার বালুবাজার গ্রামের মোরশেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন আসামি রবিউল ইসলাম। এ সময় তিনি মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারন করে রেখে দেন। পরবর্তীতে ওই মেয়েকে রবিউল ইসলাম বিয়ে না করলে মেয়ের পরিবার তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে আসামি রবিউল ইসলাম মেয়ের স্বামীর কাছে ধর্ষণের ভিডিও পাঠান। ধর্ষণের ভিডিও এবং ছবি দেখে ওই মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেন। কিছুদিন পরে ঢাকার বিক্রমপুরে ওই মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে হলে রবিউল ইসলাম দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও ধর্ষণের ভিডিও পাঠান। তখন তার দ্বিতীয় স্বামী আইনি পরামর্শের কথা বলে ওই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে মান্দা থানা পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা থাকার রিপোর্ট প্রদান করেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে মোরশেদ আলী এবং রবিউল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে আরেক আসামির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাস প্রদান করেছেন।

উভয় মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিশেষ কুশলি এডভোকেট রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।