বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দায়িত্বে অবহেলা: ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত, তদন্ত কর্মকর্তাকে অব্যাহতি

রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই এসআই ও ছয় কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) রংপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাদের বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন—তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, এসআই সফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, ধিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবির, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওই আট পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই দিন ঘটনার সময়ে তারা তারাগঞ্জ থানায় মোবাইল টিমের দায়িত্বে ছিলেন।

একইসঙ্গে ওই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জোবায়েরকে তদন্ত কার্যক্রম থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলামকে।

এর আগে গত ৯ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাস নামের দুজনকে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকার উচ্ছৃঙ্খল জনতা।

নিহতের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার লালচাদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। রোববার (১০ আগস্ট) বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য শনিবার বিকেলে মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে ভাগনি জামাই প্রদীপ দাস তারাগঞ্জের রুপলাল দাসের বাড়ির দিকে রওনা হন। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রুপলালকে ফোন করেন।

সেখানে রুপলাল গিয়ে দুজনে ভ্যানে চড়ে ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে আসছিলেন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যানচোর সন্দেহে তাদের দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে।

একপর্যায়ে প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করে লোকজন। এর একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজন। এতে লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে। এরপর ভ্যানচোর সন্দেহে তাদের মারধর শুরু করেন।

মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে তাদের বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফেলে রাখা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় তাদের। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রুপলাল দাসকে (৪০) মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপ দাসকে (৩৫) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোববার ভোরে তিনিও মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত রূপলাল দাসের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

দায়িত্বে অবহেলা: ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত, তদন্ত কর্মকর্তাকে অব্যাহতি

প্রকাশিত সময় : ০৯:৫১:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই এসআই ও ছয় কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) রংপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাদের বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন—তারাগঞ্জ থানার এসআই আবু জোবায়ের, এসআই সফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, ধিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবির, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওই আট পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই দিন ঘটনার সময়ে তারা তারাগঞ্জ থানায় মোবাইল টিমের দায়িত্বে ছিলেন।

একইসঙ্গে ওই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জোবায়েরকে তদন্ত কার্যক্রম থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলামকে।

এর আগে গত ৯ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাস নামের দুজনকে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকার উচ্ছৃঙ্খল জনতা।

নিহতের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার লালচাদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। রোববার (১০ আগস্ট) বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য শনিবার বিকেলে মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে ভাগনি জামাই প্রদীপ দাস তারাগঞ্জের রুপলাল দাসের বাড়ির দিকে রওনা হন। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রুপলালকে ফোন করেন।

সেখানে রুপলাল গিয়ে দুজনে ভ্যানে চড়ে ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে আসছিলেন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যানচোর সন্দেহে তাদের দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে।

একপর্যায়ে প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করে লোকজন। এর একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজন। এতে লোকজনের সন্দেহ আরও বাড়ে। এরপর ভ্যানচোর সন্দেহে তাদের মারধর শুরু করেন।

মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে তাদের বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফেলে রাখা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় তাদের। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রুপলাল দাসকে (৪০) মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপ দাসকে (৩৫) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোববার ভোরে তিনিও মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত রূপলাল দাসের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক।