রাজশাহীর পবা উপজেলার পদ্মা চর এলাকার বন্যাদুর্গতদের মাঝে পচা-গন্ধযুক্ত ত্রাণের চাল বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে এ চালের ভাত রান্না করে খেতে পারেননি পানিবন্দি বিপদগ্রস্থ মানুষরা। ওই চাল গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগিকে দিয়ে শেষে করেছে তাঁরা। সর্বশেষ গত শ্রক্রবারে এ চাল বিরতরণ করা হয় পদ্মার চরের বানভাসি মানুষদের মাঝে। আর এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিপাকে পড়া এ মানুষদের মাঝে।
এলাকাবাসী ও পবার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে মতে, দুই দফায় পবার হরিয়ান ইউনিয়ন ইউনিয়নের চর খানপুর ও চর খিদিরপুর (মধ্যচর) এলাকার পানিবন্দি মানুষদেও জন্য সর্বমোট ৩০০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হয়। প্রথম দুই পরিবারের দেওয়া হয় শুধুমাত্র ১০ কেজি করে চাল। পরের একশ পরিবারকে দেওয়া হয় ১০ কেজি করে চাল, কিছু পেয়াজ, মরিজ আর তেল ও ডাল। তবে যে চালগুলো বিতরণ করা হয়, সেগুলো ছিল পচা ও গন্ধযুক্ত। এ কারণে পানিবন্দি মানুষরা সেই চালের ভাত রান্না করে খেতে পারেননি।
গতকাল পবার মধ্যচরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চরের চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। পদ্মার পানি গত চার বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ বেশি বেড়ে যাওয়ায় এ চরটির সবগুলো বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। তার মধ্যে মাত্র হাতে গোনা ১৫-২০টি বাড়ির কিছু উঁচু অংশ জেগে আছে। সেই উঁচু অংশেই গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, মহিষ নিয়ে বসবাস করছেন এ চরবাসী। গত ১২-১২ দিন ধরে তাঁরা পানিবন্দি জীবন-যাপন করছেন বলে জানান। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন ত্রাণ বা সহযোগিতা পাননি চরের এ সংগ্রামী বাসিন্দারা। কোনো কোনো পরিবার একবার করে ১০ কেজি করে চাল পেলেও সেই চাল দিয়ে তাঁরা ভাত রান্না করে খেতে পারেননি। সেগুলো গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিকে খাওয়ায় দিয়েছেন।
গতকাল রবিবার দুপুরে মধ্যচরের ষাটার্দ্ধ বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘গত ১০-১২ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন-যাপন করছি। একদিন স্থানীয় মেম্বার শহিদুল ইসলাম নৌকা করে এসে ১০ কেজি করে চাল দিয়ে গেছেন। আর কিছু পাইনি। কিন্তু ওই চালও পচা গন্ধ হওয়ায় ভাত খেতে পারিনি আমরা। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিতে দিয়ে খাইয়ে দিছি।’
আলমগীর হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার বাড়িতে চাল আছে। আমি চাল চাই না। কিন্তু ওই চালও ছিল পচা আর প্রচুর পরিমাণে গন্ধ। এসব চাল মানুষকে দেয়! আমাদের দরকার মুড়ি-চিড়া, স্যালাইন, তেল বা শুকনা খাবার। কিন্তু এসব না দিয়ে পচা চাল ধরাই দিয়ে গেছে। আমাদের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে এর মাধ্যমে।’
মনোয়ারা নামের এক নারী বলেন, ‘অনেক কষ্টে আছি। চারিদিকে পানি। একটু জায়গাতে কোনোমতে বাস করছি। একবার চাল পেয়েছি ১০ কেজি। কিন্তু ভারত রান্না করে গন্ধে খেতে পারিনি। গরুকে দিয়ে সেই ভাত খাওয়াই দিছি। পরে গরুকেই খাওয়ায় দিছি।’
পবার মধ্যচরটি পড়েছে হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। ওই ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বানভাসিদের ত্রাণের জন্য ইউএনও স্যার বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেই বরাদ্দপত্র নিয়ে উপজেলা গোডাউন থেকে আমরা চাল তুলে নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছি। চালগুলো যদি নষ্ট হয়, তাহলে আমাদের কিছু করার নাই। আমরা যা পেয়েছি, তাই বিতরণ করেছি। তবে কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি।’
চর খানপুর পড়েছে হরিয়ান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। এ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু জাফর ইবনে আলম প্রমীজ বলেন, গোডাউন থেকে যে চাল দিয়েছে, সেটিই বিতরণ করা হয়েছে। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।’
হরিয়ান ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের আলী বলেন, বরাদ্দপত্র নিয়ে ইউপি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে আমি নিজে উপস্থিত থেকে গোডাউন থেকে চাল সংগ্রহ করে বিতরণ করেছি। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে গোডাউনের চালের সমস্যা। আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না।’
জানতে চাইলে পবা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণকের দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত গোডাউন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘হরিয়ান ইউনিয়নের জন্য ইউএনও স্যারের মাধ্যমে বরাদ্দের দুই টন চাল গোডাউন থেকে দেওয়া হয়েছে। এই চাল তো ভালো ছিল। আমাদের কাছে তো কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।’
জানতে চাইলে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমেই জানলাম। যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকেন, তাহলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।’

রায়হান রোহানঃ 






















