শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় নিহত আরও ৬৩, উৎখাত অভিযানে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় নতুন করে অন্তত ৬৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একই সঙ্গে অনাহারে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে জোরপূর্বক উৎখাত অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের সেনারা।

রোববার (২৪ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ছিলেন মানবিক সহায়তা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

দেশটির চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, শনিবার গাজাজুড়ে একদিনেই অন্তত ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির ভেতরে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। শহরটি দখল ও প্রায় এক মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক উৎখাতের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

আল জাজিরা অ্যারাবিকের হাতে আসা ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি ট্যাংক গাজা সিটির সাবরা এলাকায় প্রবেশ করছে। এটি স্থল অভিযানের আরও বিস্তৃত হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সাবরার পাশেই অবরুদ্ধ জায়তুন পাড়া, যেখানে গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি বাহিনী বারবার হামলা চালাচ্ছে।

গাজার আল-আহলি হাসপাতালের এক সূত্র জানিয়েছে, সাবরায় সর্বশেষ বিমান হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে।

এর আগে শনিবার সকালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের উত্তর-পশ্চিমে আসদা এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর তাবুতে গোলাবর্ষণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ছয় শিশুসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হন বলে চিকিৎসা সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।

দিনজুড়ে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে আরও অন্তত ২২ জন নিহত হন। এর মধ্যে খান ইউনিসের দক্ষিণ-পূর্বে একটি বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে একজন প্রাণ হারান। এছাড়া নেটজারিম করিডরের কাছে সাহায্য নিতে গিয়ে আরেকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।

এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিতে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮১ জনে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, মৃতদের মধ্যে ১১৪ জন শিশু। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ক্ষুধা নিঃশব্দে বেসামরিক মানুষকে কাবু করছে, শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, আর প্রতিদিন তাবু ও হাসপাতালগুলোকে নতুন ট্র্যাজেডির দৃশ্যে পরিণত করছে।’

এর আগে শুক্রবার জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম এমন ঘোষণা এলো। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বর্তমানে ভয়াবহ খাদ্যসংকটে ভুগছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

গাজায় নিহত আরও ৬৩, উৎখাত অভিযানে ইসরায়েল

প্রকাশিত সময় : ১১:৫৯:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় নতুন করে অন্তত ৬৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একই সঙ্গে অনাহারে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে জোরপূর্বক উৎখাত অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের সেনারা।

রোববার (২৪ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ছিলেন মানবিক সহায়তা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

দেশটির চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, শনিবার গাজাজুড়ে একদিনেই অন্তত ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির ভেতরে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। শহরটি দখল ও প্রায় এক মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক উৎখাতের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

আল জাজিরা অ্যারাবিকের হাতে আসা ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি ট্যাংক গাজা সিটির সাবরা এলাকায় প্রবেশ করছে। এটি স্থল অভিযানের আরও বিস্তৃত হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সাবরার পাশেই অবরুদ্ধ জায়তুন পাড়া, যেখানে গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি বাহিনী বারবার হামলা চালাচ্ছে।

গাজার আল-আহলি হাসপাতালের এক সূত্র জানিয়েছে, সাবরায় সর্বশেষ বিমান হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে।

এর আগে শনিবার সকালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের উত্তর-পশ্চিমে আসদা এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর তাবুতে গোলাবর্ষণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ছয় শিশুসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হন বলে চিকিৎসা সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।

দিনজুড়ে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে আরও অন্তত ২২ জন নিহত হন। এর মধ্যে খান ইউনিসের দক্ষিণ-পূর্বে একটি বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে একজন প্রাণ হারান। এছাড়া নেটজারিম করিডরের কাছে সাহায্য নিতে গিয়ে আরেকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।

এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিতে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮১ জনে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, মৃতদের মধ্যে ১১৪ জন শিশু। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ক্ষুধা নিঃশব্দে বেসামরিক মানুষকে কাবু করছে, শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, আর প্রতিদিন তাবু ও হাসপাতালগুলোকে নতুন ট্র্যাজেডির দৃশ্যে পরিণত করছে।’

এর আগে শুক্রবার জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম এমন ঘোষণা এলো। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বর্তমানে ভয়াবহ খাদ্যসংকটে ভুগছেন।