রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান রাজনৈতিক দলগুলোর

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কক্সবাজারে আয়োজিত অংশীজন সংলাপে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য জাতীয় ঐক্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। তারা একযোগে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সোবমার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে হোটেল বে ওয়াচে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এমন অভিমত তুলে ধরেন।

সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, “অতীতে বিএনপি সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করেছিল।২০১৭ সালে শেখ হাসিনার সরকারের ব্যর্থতায় সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করে।”

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে ‘মিয়ানমারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়।বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা মানবিক ও ইসলামী দায়িত্ব হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো কোরআনের নির্দেশ।তাই রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার ও পূর্ণ নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও দায়ীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “মানবিক সহায়তার পাশাপাশি রোহিঙ্গা তরুণদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের কর্মসূচি জরুরি।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “রোহিঙ্গারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।আরাকানে গণহত্যার জন্য দায়ীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এর চূড়ান্ত সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তাসহ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।”

এবি পাটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি।”

এক্ষেত্রে সব দলের নেতারাই একমত হন যে রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং এটি একটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।

অধিবেশনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকনসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

সেশনটি পরিচালনা করেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। এতে রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান রাজনৈতিক দলগুলোর

প্রকাশিত সময় : ১১:০৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কক্সবাজারে আয়োজিত অংশীজন সংলাপে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য জাতীয় ঐক্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। তারা একযোগে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সোবমার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে হোটেল বে ওয়াচে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এমন অভিমত তুলে ধরেন।

সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, “অতীতে বিএনপি সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করেছিল।২০১৭ সালে শেখ হাসিনার সরকারের ব্যর্থতায় সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করে।”

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে ‘মিয়ানমারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়।বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা মানবিক ও ইসলামী দায়িত্ব হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো কোরআনের নির্দেশ।তাই রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার ও পূর্ণ নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও দায়ীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “মানবিক সহায়তার পাশাপাশি রোহিঙ্গা তরুণদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের কর্মসূচি জরুরি।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “রোহিঙ্গারা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।আরাকানে গণহত্যার জন্য দায়ীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এর চূড়ান্ত সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তাসহ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।”

এবি পাটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি।”

এক্ষেত্রে সব দলের নেতারাই একমত হন যে রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং এটি একটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।

অধিবেশনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকনসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

সেশনটি পরিচালনা করেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। এতে রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।