শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরো ৫০ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরো ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সারাদিন অব্যাহত বোমাবর্ষণ চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় গাজায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দক্ষিণ গাজায় ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া অন্তত ৯ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।

ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গাজার বন্দর এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের একটি অস্থায়ী তাঁবুতে ড্রোন হামলায় দুই বেসামরিক নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে একাধিক আবাসিক ভবনে, গাজার আল-মুখাবারাত এলাকার চারটি বাড়ি এবং সিটির উত্তর-পশ্চিমের জিদান ভবনে। দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের তালবানি এলাকায় আরেকটি বাড়ি ধ্বংস হয়, তুফাহর আজ-জারকা এলাকায় হামলায় নিহত হন দুই তরুণ।

এর আগে সোমবার ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছিল, গাজা সিটির জামাল আবদেল নাসের সড়কের একটি ভবন ও আশপাশের তাঁবু খালি না করলে প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকবে। মানুষকে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় যেতে বলা হয়, যেটিকে তথাকথিত ‘মানবিক অঞ্চল’ বলা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে আল-মাওয়াসিতেই বারবার বোমা বর্ষণ করেছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বছরের শুরুতে যেখানে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ ছিল, সেই আল-মাওয়াসিতে এখন ৮ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সবাই ঠাসাঠাসি করে তাঁবুতে দুর্দশার জীবন কাটাচ্ছেন।

ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এটিকে ‘ক্ষুধার্ত ও হতাশ মানুষের বিশাল ক্যাম্প’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “গাজায় কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি কথিত মানবিক অঞ্চলও নয়। দুর্ভিক্ষের সতর্কতা কেউ শুনছে না।”

গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, “গাজা সিটি জ্বলছে, মানবতা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।” সংস্থাটির হিসেবে, মাত্র ৭২ ঘণ্টায় পাঁচটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়েছে, যেখানে ২০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এতে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। একই সঙ্গে ৩৫০টিরও বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়ে গেছে, ফলে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ক্ষুধা, অসহনীয় গরম আর মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার শিশু। বহু মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জাতিসংঘ বলছে, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরো ৫০ ফিলিস্তিনি

প্রকাশিত সময় : ০৫:৫৬:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরো ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সারাদিন অব্যাহত বোমাবর্ষণ চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় গাজায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দক্ষিণ গাজায় ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া অন্তত ৯ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।

ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গাজার বন্দর এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের একটি অস্থায়ী তাঁবুতে ড্রোন হামলায় দুই বেসামরিক নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে একাধিক আবাসিক ভবনে, গাজার আল-মুখাবারাত এলাকার চারটি বাড়ি এবং সিটির উত্তর-পশ্চিমের জিদান ভবনে। দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের তালবানি এলাকায় আরেকটি বাড়ি ধ্বংস হয়, তুফাহর আজ-জারকা এলাকায় হামলায় নিহত হন দুই তরুণ।

এর আগে সোমবার ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছিল, গাজা সিটির জামাল আবদেল নাসের সড়কের একটি ভবন ও আশপাশের তাঁবু খালি না করলে প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকবে। মানুষকে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় যেতে বলা হয়, যেটিকে তথাকথিত ‘মানবিক অঞ্চল’ বলা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে আল-মাওয়াসিতেই বারবার বোমা বর্ষণ করেছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বছরের শুরুতে যেখানে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ ছিল, সেই আল-মাওয়াসিতে এখন ৮ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সবাই ঠাসাঠাসি করে তাঁবুতে দুর্দশার জীবন কাটাচ্ছেন।

ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এটিকে ‘ক্ষুধার্ত ও হতাশ মানুষের বিশাল ক্যাম্প’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “গাজায় কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি কথিত মানবিক অঞ্চলও নয়। দুর্ভিক্ষের সতর্কতা কেউ শুনছে না।”

গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, “গাজা সিটি জ্বলছে, মানবতা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।” সংস্থাটির হিসেবে, মাত্র ৭২ ঘণ্টায় পাঁচটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়েছে, যেখানে ২০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এতে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। একই সঙ্গে ৩৫০টিরও বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়ে গেছে, ফলে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ক্ষুধা, অসহনীয় গরম আর মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার শিশু। বহু মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জাতিসংঘ বলছে, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।