গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বাংলাদেশী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম জানান, তারা বর্তমানে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ৩৭০ নটিক্যাল মাইল বা ৬৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। স্বাভাবিক গতিতে চললে এক দিনের মধ্যে গাজায় পৌঁছানো সম্ভব হলেও ছোট সহকারী নৌযানগুলো পেছনে ফেলে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে পুরো বহরকে একসাথে রাখতে গিয়ে যাত্রার গতি কমে গেছে। এ কারণে সময় বেশি লাগতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবহাওয়ার অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আবহাওয়া সারাক্ষণ বদলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা একদফা বেশ খারাপ আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছেন। এখন আবহাওয়া মেঘলা কিন্তু উত্তপ্ত। নজরদারির জন্য তাদের কাছে একটি ড্রোন ওয়াচ থাকলেও তা দিয়ে সবকিছু ধরা পড়ে না। চোখে যা দেখা যায়, সেটাই দেখা হচ্ছে।
গত ২ অক্টোবরের দিকে একটি নৌবাহিনীর জাহাজ তাদের খুব কাছাকাছি চলে আসে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেটি ইসরায়েলের জাহাজ নাও হতে পারে। এটি তুরস্ক বা অন্য কোনো দেশের জাহাজ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানা গেছে
২০১০ সালের ফ্লোটিলা হামলার স্মৃতি এখনও তাদের সঙ্গেই আছে। ওই ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১০ জন নিহত হন। অনেককে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। সেই স্মৃতির প্রেক্ষাপটে এবার বৃহৎ সংখ্যক নৌযান একসাথে যাওয়ায় চাপ ও অনিশ্চয়তা দুটোই বেশি। তাদের কী হবে, তা নিয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই। তাদের জাহাজে ৯৬ জন রয়েছেন। পুরো বহরে মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন। তাদের জাহাজটি উচ্চ হওয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষে সরাসরি আরোহণ করা কঠিন হতে পারে। তাই তারা হেলিকপ্টার থেকে নেমে আক্রমণের পথ বেছে নিতে পারে, যা আলাদা ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। আগের আক্রমণে স্বাস্থ্যকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর আক্রোশ বেশি ছিল। তাদের জাহাজেও এই দুই পেশার মানুষ বেশি থাকায় আক্রমণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
শহিদুল আলমের মূল দাবি হলো, ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ আইনগতভাবে অবৈধ। তারা যে আন্তর্জাতিক সাগরপথ দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই। এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সেই অবৈধতা ও মানবিক সংকটকে সামনে নিয়ে আসাই তাদের উদ্দেশ্য। জাহাজে থাকা চিকিৎসাকর্মীরা গাজাবাসীকে চিকিৎসাসেবা দেবেন এবং পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে থেকে করণীয় সবকিছুই তারা করবেন।
ইতোমধ্যে তাদের আগে রওনা দেয়া আটটি জাহাজ গতকাল তাদের অতিক্রম করে গেছে। অন্যদিকে, ফ্রিডম কোয়ালিশনের দুটি জাহাজ যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এখনও বহরে যোগ দিতে পারেনি। তাই পুরো বহরের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তারা সম্ভাব্য অবস্থান থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে থাকতে পারেন। তাদের জাহাজটি ধীর গতিতে চলার জন্য তৈরি নয়। ধীরে চললে ইঞ্জিন ও নৌচালনায় সমস্যা দেখা দেয়। তাই সামগ্রিক সমন্বয় বজায় রাখতে ধীর গতিতে চলতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।
কোনো কারণে যদি তাদের আটক করা হয়, তখন কী করা হবে, সে বিষয়ে প্রত্যেককে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। কোনো একক ব্যক্তির ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়নি। সবার সাথে বিকল্প পথ ও সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে শহিদুল আলম ডিপোর্টেশন বা ফিরে যাওয়ার বিকল্প মেনে নিতে রাজি নন। তিনি নিজেকে ‘অবৈধভাবে প্রবেশকারী’ বলে স্বীকার করবেন না। এই মনোভাব নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন।
শেষে, বাংলাদেশের সকল ভাই-বোনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানান তিনি। তাদের অসাধারণ সমর্থন জাহাজের সকল সদস্যের জন্য একটি বড় প্রেরণা বলে তিনি উল্লেখ করেন।