শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তারেক রহমান দেশে ফিরে ঘোষণা করবেন প্রার্থী তালিকা

দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। অনিশ্চয়তা, সংশয় সত্ত্বেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পক্ষের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ তালিকা আরো যাচাই-বাছাই করবেন এবং দেশে ফিরে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের নির্বাচনে প্রধান এসব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রার্থী বাছাই অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। গত বছরের ওই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিগত ১৫ বছর এ দেশের মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য সাধারণ ভোটাররা মুখিয়ে আছেন।

তাঁদের মতে, ভোটাধিকার হলো গণতান্ত্রিক দেশে সবচেয়ে বড় নাগরিক অধিকার। দেশের নাগরিকরা এই অধিকার এবার যেন নির্বিঘ্নে, স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করাই সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। তবে এই দায়িত্ব শুধু সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিলেই চলবে না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

প্রার্থী বাছাই থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা, প্রতিটি ধাপে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এই দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দলটির নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজ দলটি শেষ করে রেখেছে। তবে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শরিকদের নিয়ে নির্বাচনী জোট করবে বিএনপি। এরই মধ্যে মিত্র দলগুলোর কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশিত নির্বাচনী আসনের তালিকা চাওয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে কয়েকটি দল তাদের প্রার্থী তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে হস্তান্তর করেছে।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে এই তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। মিত্রদের তালিকা পাওয়ার পর তারেক রহমান দলের শীর্ষ নেতাদের এবং শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রথমে শরিকদের জন্য বরাদ্দ আসন চূড়ান্ত করবেন। এরপর বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার পরই বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। তবে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিকভাবে সবুজসংকেত দেওয়া হবে খুব শিগগিরই।

বিএনপি থেকে কারা মনোনয়ন পাবেন? এ রকম প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির অন্তত দুজন নেতা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে পাঁচটি মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন। এর ভিত্তিতেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এই পাঁচটি যোগ্যতা হলো—১. এলাকায় ‘ক্লিন ইমেজ’ : এবার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের ইমেজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজি, দখল কিংবা অন্য কোনো অভিযোগ নেই, বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাবেন। ২. এলাকায় জনপ্রিয়তা : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উদ্যোগে সারা দেশের নির্বাচনী আসনের ওপর একাধিক জরিপ চালানো হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই জরিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে। কিন্তু জনপ্রিয়তা মনোনয়ন প্রাপ্তির একমাত্র মাপকাঠি হবে না। ৩. দেশ ও দলের জন্য ত্যাগ রয়েছে : গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিগত ১৭ বছর যাঁরা সীমাহীন অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন। যেসব পরিবারের সদস্যরা বিগত স্বৈরশাসনে জীবন দিয়েছেন কিংবা গুম হয়েছেন, বছরের পর বছর কারাভোগ করেছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মনোনয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে তা হবে যোগ্যতার অন্যান্য শর্ত পূরণ সাপেক্ষে। ৪. সংগঠনের জন্য অবদান : বিগত ১৭ বছর যাঁরা সংগঠনকে আগলে রেখেছেন। দলীয় কর্মীদের পাশে থেকেছেন, সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হবে। ৫. দলীয় কোন্দল থেকে মুক্ত : যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশী দলে কোন্দলে জড়াননি, এলাকায় গ্রুপিং করেননি, তাঁদেরও মনোনয়ন প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এরই মধ্যে এই পাঁচটি মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন। তবে কিছু কিছু আসনে সমযোগ্যতার একাধিক প্রার্থী থাকলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

তারেক রহমান দেশে ফিরে ঘোষণা করবেন প্রার্থী তালিকা

প্রকাশিত সময় : ১০:২৬:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। অনিশ্চয়তা, সংশয় সত্ত্বেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পক্ষের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ তালিকা আরো যাচাই-বাছাই করবেন এবং দেশে ফিরে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের নির্বাচনে প্রধান এসব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রার্থী বাছাই অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। গত বছরের ওই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিগত ১৫ বছর এ দেশের মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য সাধারণ ভোটাররা মুখিয়ে আছেন।

তাঁদের মতে, ভোটাধিকার হলো গণতান্ত্রিক দেশে সবচেয়ে বড় নাগরিক অধিকার। দেশের নাগরিকরা এই অধিকার এবার যেন নির্বিঘ্নে, স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করাই সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। তবে এই দায়িত্ব শুধু সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিলেই চলবে না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

প্রার্থী বাছাই থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা, প্রতিটি ধাপে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এই দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দলটির নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজ দলটি শেষ করে রেখেছে। তবে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শরিকদের নিয়ে নির্বাচনী জোট করবে বিএনপি। এরই মধ্যে মিত্র দলগুলোর কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশিত নির্বাচনী আসনের তালিকা চাওয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে কয়েকটি দল তাদের প্রার্থী তালিকা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে হস্তান্তর করেছে।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে এই তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন। মিত্রদের তালিকা পাওয়ার পর তারেক রহমান দলের শীর্ষ নেতাদের এবং শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রথমে শরিকদের জন্য বরাদ্দ আসন চূড়ান্ত করবেন। এরপর বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার পরই বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। তবে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের অনানুষ্ঠানিকভাবে সবুজসংকেত দেওয়া হবে খুব শিগগিরই।

বিএনপি থেকে কারা মনোনয়ন পাবেন? এ রকম প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির অন্তত দুজন নেতা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে পাঁচটি মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন। এর ভিত্তিতেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। এই পাঁচটি যোগ্যতা হলো—১. এলাকায় ‘ক্লিন ইমেজ’ : এবার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের ইমেজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজি, দখল কিংবা অন্য কোনো অভিযোগ নেই, বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাবেন। ২. এলাকায় জনপ্রিয়তা : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উদ্যোগে সারা দেশের নির্বাচনী আসনের ওপর একাধিক জরিপ চালানো হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই জরিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে। কিন্তু জনপ্রিয়তা মনোনয়ন প্রাপ্তির একমাত্র মাপকাঠি হবে না। ৩. দেশ ও দলের জন্য ত্যাগ রয়েছে : গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিগত ১৭ বছর যাঁরা সীমাহীন অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছেন। যেসব পরিবারের সদস্যরা বিগত স্বৈরশাসনে জীবন দিয়েছেন কিংবা গুম হয়েছেন, বছরের পর বছর কারাভোগ করেছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মনোনয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে তা হবে যোগ্যতার অন্যান্য শর্ত পূরণ সাপেক্ষে। ৪. সংগঠনের জন্য অবদান : বিগত ১৭ বছর যাঁরা সংগঠনকে আগলে রেখেছেন। দলীয় কর্মীদের পাশে থেকেছেন, সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হবে। ৫. দলীয় কোন্দল থেকে মুক্ত : যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশী দলে কোন্দলে জড়াননি, এলাকায় গ্রুপিং করেননি, তাঁদেরও মনোনয়ন প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এরই মধ্যে এই পাঁচটি মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন। তবে কিছু কিছু আসনে সমযোগ্যতার একাধিক প্রার্থী থাকলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।