শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে ৮৯ শতাংশ বাংলাদেশি

ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বন্দি রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে। পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি জেলবন্দীদের ৮৯ শতাংশই বাংলাদেশি নাগরিক।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)’-এর সবশেষ ২০২৩ সালের রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

এনসিআরবি কর্তৃক প্রকাশিত ‘ভারতের প্রিজন স্ট্যাটিস্টিকস ২০২৩’ অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৬ হাজার ৯৫৬ জন বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ২ হাজার ৫০৮ জন অর্থাৎ ৩৬ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজ্যটির কারাগারে আটক বিদেশি বন্দিদের মধ্যে অধিকাংশই (৮৯ শতাংশ) আবার বাংলাদেশি নাগরিক। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাদের আটক করা হয়।

স্ট্যাটিসটিকস অনুসারে, বাংলাদেশি বন্দিদের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত ৭৭৮ জন। বিচারাধীন রয়েছেন ১ হাজার ৪৪০ জন। রাজ্যে বিদেশি বন্দির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিয়ানমার। দেশটির বিচারাধীন বন্দিদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে থাকা ৭৯৬ জন বিদেশি দণ্ডিত বন্দির মধ্যে ২০৪ জন নারী। তবে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির থেকে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা বেশি, সংখ্যাটা ১ হাজার ৪৯৯ জন। তার আগের বছর ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির সংখ্যা ছিল ৪৭১ জন,  বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪২৪ জন। ২০২১ সালে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির সংখ্যা ছিল ৩২৯ জন এবং বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৭৯ জন।

এনসিআরবির দেওয়া এই তথ্যেই পরিস্কার যে, ভারতের কারাগারগুলোতে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরে রয়েছে মহারাষ্ট্র, যেখানে ২০২৩ নালে বিদেশি বন্দির সংখ্যা ৭৭৩ জন, দিল্লিতে ৭৫১ জন এবং উত্তর প্রদেশে ৪৮১ জন।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৯০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। আবার এর অর্ধেকেরও বেশি সীমান্ত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সাথে। এই বিস্তীর্ণ সীমান্তের কিছু এলাকা অরক্ষিত হওয়ার কারণে অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটে। স্বাভাবিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকদের বন্দি থাকার ঘটনাটিও বেশি।

আইনজীবীদের অভিমত, পশ্চিমবঙ্গে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধির একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে আইনজীবী জোগাড় করতে না পারা, বিচার বিভাগীয় বেঞ্চের অনুপস্থিতি এবং বিচার আদালতের অতিরিক্ত চাপ।

মূলত, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই ‘বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিস’-এর (এফআরআরও) নির্দেশে অবৈধ বন্দিদের সেদেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু রাজ্যের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “তবে, আমাদের বারবার আবেদন সত্ত্বেও, রাজ্য থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হার অত্যন্ত কম।”

এনসিআরবির ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারগুলোর প্রতিটিতেই অতিরিক্ত বন্দিদের চাপে অবস্থা খুব শোচনীয়। এছাড়াও কারাগারে নারীদের জন্য কম সুযোগ-সুবিধা, কারা কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপের ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্দিদের দখলে কারাগারের শতকরা ১২০ ভাগ। রাজ্যটির ৬০টি কারাগারে যেখানে ভারতীয় ও বিদেশি মিলিয়ে ধারণক্ষমতা মোট ২১ হাজার ৪৭৬ জন বন্দির, সেখানে গাদাগাদি করে ২৫ হাজার ৭৭৪ জন বন্দি অবস্থান করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি মির্জা ফখরুলের

পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে ৮৯ শতাংশ বাংলাদেশি

প্রকাশিত সময় : ১০:৩০:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বন্দি রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে। পশ্চিমবঙ্গে বিদেশি জেলবন্দীদের ৮৯ শতাংশই বাংলাদেশি নাগরিক।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)’-এর সবশেষ ২০২৩ সালের রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

এনসিআরবি কর্তৃক প্রকাশিত ‘ভারতের প্রিজন স্ট্যাটিস্টিকস ২০২৩’ অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৬ হাজার ৯৫৬ জন বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ২ হাজার ৫০৮ জন অর্থাৎ ৩৬ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজ্যটির কারাগারে আটক বিদেশি বন্দিদের মধ্যে অধিকাংশই (৮৯ শতাংশ) আবার বাংলাদেশি নাগরিক। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাদের আটক করা হয়।

স্ট্যাটিসটিকস অনুসারে, বাংলাদেশি বন্দিদের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত ৭৭৮ জন। বিচারাধীন রয়েছেন ১ হাজার ৪৪০ জন। রাজ্যে বিদেশি বন্দির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিয়ানমার। দেশটির বিচারাধীন বন্দিদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে থাকা ৭৯৬ জন বিদেশি দণ্ডিত বন্দির মধ্যে ২০৪ জন নারী। তবে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির থেকে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা বেশি, সংখ্যাটা ১ হাজার ৪৯৯ জন। তার আগের বছর ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির সংখ্যা ছিল ৪৭১ জন,  বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪২৪ জন। ২০২১ সালে সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি বন্দির সংখ্যা ছিল ৩২৯ জন এবং বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৭৯ জন।

এনসিআরবির দেওয়া এই তথ্যেই পরিস্কার যে, ভারতের কারাগারগুলোতে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরে রয়েছে মহারাষ্ট্র, যেখানে ২০২৩ নালে বিদেশি বন্দির সংখ্যা ৭৭৩ জন, দিল্লিতে ৭৫১ জন এবং উত্তর প্রদেশে ৪৮১ জন।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৯০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। আবার এর অর্ধেকেরও বেশি সীমান্ত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সাথে। এই বিস্তীর্ণ সীমান্তের কিছু এলাকা অরক্ষিত হওয়ার কারণে অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটে। স্বাভাবিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকদের বন্দি থাকার ঘটনাটিও বেশি।

আইনজীবীদের অভিমত, পশ্চিমবঙ্গে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধির একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে আইনজীবী জোগাড় করতে না পারা, বিচার বিভাগীয় বেঞ্চের অনুপস্থিতি এবং বিচার আদালতের অতিরিক্ত চাপ।

মূলত, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই ‘বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিস’-এর (এফআরআরও) নির্দেশে অবৈধ বন্দিদের সেদেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু রাজ্যের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “তবে, আমাদের বারবার আবেদন সত্ত্বেও, রাজ্য থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হার অত্যন্ত কম।”

এনসিআরবির ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের কারাগারগুলোর প্রতিটিতেই অতিরিক্ত বন্দিদের চাপে অবস্থা খুব শোচনীয়। এছাড়াও কারাগারে নারীদের জন্য কম সুযোগ-সুবিধা, কারা কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপের ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্দিদের দখলে কারাগারের শতকরা ১২০ ভাগ। রাজ্যটির ৬০টি কারাগারে যেখানে ভারতীয় ও বিদেশি মিলিয়ে ধারণক্ষমতা মোট ২১ হাজার ৪৭৬ জন বন্দির, সেখানে গাদাগাদি করে ২৫ হাজার ৭৭৪ জন বন্দি অবস্থান করছে।