শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আদায়ে শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

  • রায়হান রোহানঃ
  • প্রকাশিত সময় : ০৫:২৯:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭৫

চাকুরী জাতীয়করণ, ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদানের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ঢাকায় পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রাজশাহীতে কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা ভবনের সামনে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম, রাজশাহী অঞ্চলের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

এ সময় রাজশাহীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী অংশ নেন। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা হাতে নানা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে স্লোগান দেন— ‘শিক্ষকের যোগ্য সম্মান দিতে হবে’, ‘এক দফা এক দাবি—জাতীয়করণ চাই’, ‘শিক্ষক মানে জাতির মেরুদণ্ড’, ‘ভিক্ষুক নয়, আমরা শিক্ষক’ ও ‘ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন করো, শিক্ষক সমাজ বাঁচাও’।

সমাবেশে প্রধান অতিথির ছিলেন আদর্শ ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম রাজশাহী অঞ্চলের আহ্বায়ক সেরাজুল হক।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইডিয়া কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ। কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক নার্গিস পারভিন বলেন,“ভিক্ষুক নয়, আমরা শিক্ষক। শিক্ষকরা জাতি গঠনের অগ্ৰভাগে থেকে কাজ করেন, কিন্তু রাষ্ট্র তাদের সেই মর্যাদা ও অধিকার দেয় না। আজ শিক্ষক সমাজ লাঞ্ছিত, অবমানিত। সন্তানদের মুখে দু’বেলা ভালো খাবার তুলে দিতে না পারা একজন শিক্ষকের জন্য অপমানজনক। আমরা ন্যায্য প্রাপ্য চাই—ভিক্ষা নয়, অধিকার।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আদর্শ ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ সেরাজুল হক বলেন,“শিক্ষকদের চাকুরী জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। দেশের সব পেশার মানুষ যখন সুবিধা পাচ্ছে, তখন শিক্ষকরা কেন পিছিয়ে থাকবে? একজন শিক্ষককে সম্মান না দিলে জাতির ভবিষ্যৎ কখনও গড়ে উঠবে না। সরকারের প্রতি আহ্বান, দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে।”

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি পবা উপজেলা শাখার সচিব মহররম আলী খান বলেন,“সরকার প্রতি বছর বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বললেও শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ খুবই সীমিত। সরকারি চাকরিতর বাইরে যারা কাজ করেন, তাদের অবস্থাও করুণ। ন্যায্য ভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধি না হলে শিক্ষক সমাজের মধ্যে গভীর হতাশা তৈরি হবে।”তিনি আরও বলেন, “যে জাতি শিক্ষকদের সম্মান দিতে জানে না, সে জাতি কখনও উন্নত হতে পারে না। আমাদের দাবি একটাই—শিক্ষকদের মর্যাদা ও প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দাও।”

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার যদি দ্রুত শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ ও অন্যান্য যৌক্তিক দাবি পূরণের পদক্ষেপ না নেয়, তবে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এর আগে গত ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, চাকুরী জাতীয়করণ ও অন্যান্য আর্থিক দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ করেন। কিন্তু পুলিশি বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটে। এরই প্রতিবাদে রাজশাহীতেও শিক্ষক সমাজ ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করে।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে অংশগ্রহণকারীরা মানববন্ধন করেন এবং “শিক্ষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ—ন্যায়বিচার না পেলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে” বলে ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে দেশের বেসরকারি কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, সরকারি চাকুরীর মর্যাদা প্রদান এবং ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সম্প্রতি আন্দোলন আরও জোরদার হওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে সমাবেশ ও কর্মবিরতি কর্মসূচি চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

আদায়ে শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান

প্রকাশিত সময় : ০৫:২৯:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

চাকুরী জাতীয়করণ, ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদানের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ঢাকায় পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রাজশাহীতে কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা ভবনের সামনে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম, রাজশাহী অঞ্চলের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

এ সময় রাজশাহীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী অংশ নেন। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা হাতে নানা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে স্লোগান দেন— ‘শিক্ষকের যোগ্য সম্মান দিতে হবে’, ‘এক দফা এক দাবি—জাতীয়করণ চাই’, ‘শিক্ষক মানে জাতির মেরুদণ্ড’, ‘ভিক্ষুক নয়, আমরা শিক্ষক’ ও ‘ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন করো, শিক্ষক সমাজ বাঁচাও’।

সমাবেশে প্রধান অতিথির ছিলেন আদর্শ ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম রাজশাহী অঞ্চলের আহ্বায়ক সেরাজুল হক।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইডিয়া কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ। কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক নার্গিস পারভিন বলেন,“ভিক্ষুক নয়, আমরা শিক্ষক। শিক্ষকরা জাতি গঠনের অগ্ৰভাগে থেকে কাজ করেন, কিন্তু রাষ্ট্র তাদের সেই মর্যাদা ও অধিকার দেয় না। আজ শিক্ষক সমাজ লাঞ্ছিত, অবমানিত। সন্তানদের মুখে দু’বেলা ভালো খাবার তুলে দিতে না পারা একজন শিক্ষকের জন্য অপমানজনক। আমরা ন্যায্য প্রাপ্য চাই—ভিক্ষা নয়, অধিকার।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আদর্শ ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ সেরাজুল হক বলেন,“শিক্ষকদের চাকুরী জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। দেশের সব পেশার মানুষ যখন সুবিধা পাচ্ছে, তখন শিক্ষকরা কেন পিছিয়ে থাকবে? একজন শিক্ষককে সম্মান না দিলে জাতির ভবিষ্যৎ কখনও গড়ে উঠবে না। সরকারের প্রতি আহ্বান, দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে।”

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি পবা উপজেলা শাখার সচিব মহররম আলী খান বলেন,“সরকার প্রতি বছর বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বললেও শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ খুবই সীমিত। সরকারি চাকরিতর বাইরে যারা কাজ করেন, তাদের অবস্থাও করুণ। ন্যায্য ভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধি না হলে শিক্ষক সমাজের মধ্যে গভীর হতাশা তৈরি হবে।”তিনি আরও বলেন, “যে জাতি শিক্ষকদের সম্মান দিতে জানে না, সে জাতি কখনও উন্নত হতে পারে না। আমাদের দাবি একটাই—শিক্ষকদের মর্যাদা ও প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দাও।”

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার যদি দ্রুত শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ ও অন্যান্য যৌক্তিক দাবি পূরণের পদক্ষেপ না নেয়, তবে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এর আগে গত ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, চাকুরী জাতীয়করণ ও অন্যান্য আর্থিক দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ করেন। কিন্তু পুলিশি বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটে। এরই প্রতিবাদে রাজশাহীতেও শিক্ষক সমাজ ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করে।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে অংশগ্রহণকারীরা মানববন্ধন করেন এবং “শিক্ষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ—ন্যায়বিচার না পেলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে” বলে ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে দেশের বেসরকারি কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, সরকারি চাকুরীর মর্যাদা প্রদান এবং ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সম্প্রতি আন্দোলন আরও জোরদার হওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে সমাবেশ ও কর্মবিরতি কর্মসূচি চলছে।