বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বহুবার হোঁচট খেয়েও থেমে যাননি, ছুটেছেন দুরন্ত গতিতে

জীবনে বহুবার হোঁচট খেয়েছেন, তবু কখনো থেমে যাননি আজমেরী হক বাঁধন। ছুটেছেন দুরন্ত গতিতে। কাটিয়ে উঠেছেন ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা। হতাশার অন্ধকার পেরিয়ে আজ যেন তিনি আলোর প্রতীক।

দেখতে দেখতে জীবনের ৪১ বসন্ত পেরিয়ে পা রাখলেন ৪২-এ। নিজের জন্মদিনে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন বাঁধন। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন নিজের একটি সাদাকালো ছবি। ফেসবুকের সেই পোস্টে বাঁধন লিখেছেন জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ের কথা।

এক ফেসবুক পোস্টে বাঁধন লিখেছেন, ‘আজ আমার ৪২তম জন্মদিন। কী দারুণই না ছিল এই যাত্রা! ৪০ পার করার পর জীবন যেন একেবারে বদলে গেল। একটা বেদনাদায়ক সম্পর্কের বিচ্ছেদ, আর দেশের জুলাই আন্দোলনের পরের অস্থিরতা— এই দুই ঘটনাই আমাকে গভীর বিষণ্নতায় ডুবিয়ে দিয়েছিল। হ্যাঁ, সেটা ছিল আমার অসুস্থতা, কিন্তু এই দুইটা ঘটনা সেটাকে ভয়ংকরভাবে বাড়িয়ে দিল।

সেই সময়ে মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে নিজের শারীরিক পরিবর্তন হয়েছিল জানিয়ে বাঁধন বলেন, ‘ওই সময় ১৭ কেজি ওজন বেড়ে গেল, আর ভাবলাম—এটাই বোধহয় শেষ, জীবন এখানেই থেমে গেল। নিজের শরীরের ভেতরেই আমি বন্দি হয়ে গিয়েছিলাম। শরীর ব্যথা করত, হাঁটুতে যন্ত্রণা, পিঠে টান, আর মনে ঘন কুয়াশার মতো একটানা দুঃখের মেঘ। অনেক দিন শুধু ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা।’

সেই দিনগুলো অন্ধকারের ছিল, উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘কিন্তু না, পৃথিবী শেষ হয়ে যায়নি।

আমি বেঁচে গেছি। আমি সবসময়ই বেঁচে যাই। তারপর একদিন একটা ফোন এলো—একজন পরিচালকের কাছ থেকে, যার সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন আমি অনেকদিন ধরে দেখতাম। সেই ফোন কলটাই বদলে দিল সবকিছু। আবার জেগে উঠল আমার ভেতরের আগুন, উদ্যম, বাঁচার ইচ্ছা।’

এই সময়টাকে নিজের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় বলছেন বাঁধন। তিনি এরপর লেখেন, ‘এখন আমি প্রতিদিন ব্যায়াম করি। আবার নিজেকে জীবিত মনে হয়। আর সত্যি বলছি—জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় এখনই কাটাচ্ছি। কারণ আমরা মানুষ, সুপারহিরো নই। আমরা ভাঙি, হোঁচট খাই, কষ্ট পাই, হারাই, আবার জোড়া লাগি, উঠি আর বেঁচে থাকি। তাই আমার জন্য শুভকামনা রাখো—কারণ আমার চল্লিশের দশকটাই এখন পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে দারুণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে।’

সবশেষে বাঁধন লেখেন, ‘আমি এখন আরো পরিণত, শান্ত, সংযত। আর সবচেয়ে বড় কথা—আমি নিজেকে গভীরভাবে ভালোবাসি।’

বছর কয়েক আগে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমা দিয়ে প্রত্যাবর্তন ঘটে বাঁধনের। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি দেশের হয়ে ইতিহাস তৈরি করে। মূলত এই ছবির পরেই বদলে যায় বাঁধনের ক্যারিয়ার গ্রাফ। পরে কাজ করেছেন সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র কেন্দ্রীয় চরিত্রে, সেই সঙ্গে বলিউড নির্মাতা বিশাল ভরদ্বাজের নেটফ্লিক্স মুভি ‘খুফিয়া’তেও বাঁধনের ‘অক্টোপাস’ চরিত্রটি সবার নজর কেড়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বহুবার হোঁচট খেয়েও থেমে যাননি, ছুটেছেন দুরন্ত গতিতে

প্রকাশিত সময় : ০৫:০৪:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

জীবনে বহুবার হোঁচট খেয়েছেন, তবু কখনো থেমে যাননি আজমেরী হক বাঁধন। ছুটেছেন দুরন্ত গতিতে। কাটিয়ে উঠেছেন ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা। হতাশার অন্ধকার পেরিয়ে আজ যেন তিনি আলোর প্রতীক।

দেখতে দেখতে জীবনের ৪১ বসন্ত পেরিয়ে পা রাখলেন ৪২-এ। নিজের জন্মদিনে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন বাঁধন। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন নিজের একটি সাদাকালো ছবি। ফেসবুকের সেই পোস্টে বাঁধন লিখেছেন জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ের কথা।

এক ফেসবুক পোস্টে বাঁধন লিখেছেন, ‘আজ আমার ৪২তম জন্মদিন। কী দারুণই না ছিল এই যাত্রা! ৪০ পার করার পর জীবন যেন একেবারে বদলে গেল। একটা বেদনাদায়ক সম্পর্কের বিচ্ছেদ, আর দেশের জুলাই আন্দোলনের পরের অস্থিরতা— এই দুই ঘটনাই আমাকে গভীর বিষণ্নতায় ডুবিয়ে দিয়েছিল। হ্যাঁ, সেটা ছিল আমার অসুস্থতা, কিন্তু এই দুইটা ঘটনা সেটাকে ভয়ংকরভাবে বাড়িয়ে দিল।

সেই সময়ে মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে নিজের শারীরিক পরিবর্তন হয়েছিল জানিয়ে বাঁধন বলেন, ‘ওই সময় ১৭ কেজি ওজন বেড়ে গেল, আর ভাবলাম—এটাই বোধহয় শেষ, জীবন এখানেই থেমে গেল। নিজের শরীরের ভেতরেই আমি বন্দি হয়ে গিয়েছিলাম। শরীর ব্যথা করত, হাঁটুতে যন্ত্রণা, পিঠে টান, আর মনে ঘন কুয়াশার মতো একটানা দুঃখের মেঘ। অনেক দিন শুধু ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা।’

সেই দিনগুলো অন্ধকারের ছিল, উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘কিন্তু না, পৃথিবী শেষ হয়ে যায়নি।

আমি বেঁচে গেছি। আমি সবসময়ই বেঁচে যাই। তারপর একদিন একটা ফোন এলো—একজন পরিচালকের কাছ থেকে, যার সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন আমি অনেকদিন ধরে দেখতাম। সেই ফোন কলটাই বদলে দিল সবকিছু। আবার জেগে উঠল আমার ভেতরের আগুন, উদ্যম, বাঁচার ইচ্ছা।’

এই সময়টাকে নিজের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় বলছেন বাঁধন। তিনি এরপর লেখেন, ‘এখন আমি প্রতিদিন ব্যায়াম করি। আবার নিজেকে জীবিত মনে হয়। আর সত্যি বলছি—জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় এখনই কাটাচ্ছি। কারণ আমরা মানুষ, সুপারহিরো নই। আমরা ভাঙি, হোঁচট খাই, কষ্ট পাই, হারাই, আবার জোড়া লাগি, উঠি আর বেঁচে থাকি। তাই আমার জন্য শুভকামনা রাখো—কারণ আমার চল্লিশের দশকটাই এখন পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে দারুণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে।’

সবশেষে বাঁধন লেখেন, ‘আমি এখন আরো পরিণত, শান্ত, সংযত। আর সবচেয়ে বড় কথা—আমি নিজেকে গভীরভাবে ভালোবাসি।’

বছর কয়েক আগে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সিনেমা দিয়ে প্রত্যাবর্তন ঘটে বাঁধনের। কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি দেশের হয়ে ইতিহাস তৈরি করে। মূলত এই ছবির পরেই বদলে যায় বাঁধনের ক্যারিয়ার গ্রাফ। পরে কাজ করেছেন সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’র কেন্দ্রীয় চরিত্রে, সেই সঙ্গে বলিউড নির্মাতা বিশাল ভরদ্বাজের নেটফ্লিক্স মুভি ‘খুফিয়া’তেও বাঁধনের ‘অক্টোপাস’ চরিত্রটি সবার নজর কেড়েছে।