মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়ালো ২০০ জনে

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহ-এ এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। এখনো ২২০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন যাদের মধ্যে পাঁচজন নৌ-সেনা সদস্য আছেন বলে জানা যায়।

রোববার (৩০ নভেম্বর) কলম্বোর কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে অন্তত ২০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আরও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের মধ্যাঞ্চল। ওই এলাকায় বন্যার পানি কমে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা ভূমিধস ও গাছপালা পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন সড়ক পরিষ্কার করছেন।

শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের (ডিএমসি)  এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহ আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও উজানে ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। যে কারণে বর্তমানে কেলানি নদীর তীরবর্তী সব নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।’’

এদিকে  কলম্বো থেকে ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মানাম্পিটিয়া শহরে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমে যাওয়ায় সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। ৭২ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা এস শিবানন্দন বলেন, মানাম্পিটিয়া বন্যাপ্রবণ এলাকা। কিন্তু আমি আগে কখনও এতো পানি দেখিনি।

পাহাড়ি ঢালের স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণকারী দেশটির সংস্থা ন্যাশনাল বিল্ডিং রিসার্চ অর্গানাইজেশন বলেছে, বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ের ঢাল এখনও ভেজা থাকায় আরও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট অনুঢ়া কুমারা দিসানায়েকে শনিবার ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। পাশাপাশি বিপর্যয়কর এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

অনুঢ়ার এই আহ্বানে ভারত প্রথমে সাড়া দিয়েছে। দেশটি ইতোমধ্যে ত্রাণসামগ্রী ও দুটি হেলিকপ্টার পাঠিয়ে উদ্ধারকাজে সহায়তা করেছে। লঙ্কান কর্মকর্তারা বলেছেন, আরও দুটি হেলিকপ্টার রোববার উদ্ধারকাজে পাঠানোর কথা রয়েছে ভারতের।

এদিকে, শ্রীলঙ্কার বিমানবাহিনী বলেছে, পাকিস্তানও উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে। জাপান বলেছে, তারা তাৎক্ষণিক চাহিদা মূল্যায়নের জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে এবং পরবর্তী সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।

শ্রীলঙ্কায় চলমান এই বৈরী আবহাওয়া-জনিত দুর্যোগে ২৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস এবং ১ লাখ ৪৭ হাজার মানুষকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্যায় বাস্তুচ্যুত আরও ৯ লাখ ৬৮ হাজার মানুষের সহায়তা প্রয়োজন।

ত্রাণকার্যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও বেসামরিক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছেন।

উল্লেখ্য,  ২০১৭ সালের পর এটিই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ওই বছর বন্যা ও ভূমিধসে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। চলতি শতকের শুরুর পর থেকে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা গিয়েছিল ২০০৩ সালের জুন মাসে। সেসময় বন্যায় দেশটিতে ২৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।

সূত্র: এএফপি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়ালো ২০০ জনে

প্রকাশিত সময় : ০৫:০১:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহ-এ এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। এখনো ২২০ জনের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন যাদের মধ্যে পাঁচজন নৌ-সেনা সদস্য আছেন বলে জানা যায়।

রোববার (৩০ নভেম্বর) কলম্বোর কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে অন্তত ২০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আরও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের মধ্যাঞ্চল। ওই এলাকায় বন্যার পানি কমে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা ভূমিধস ও গাছপালা পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন সড়ক পরিষ্কার করছেন।

শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের (ডিএমসি)  এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহ আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও উজানে ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। যে কারণে বর্তমানে কেলানি নদীর তীরবর্তী সব নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।’’

এদিকে  কলম্বো থেকে ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মানাম্পিটিয়া শহরে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমে যাওয়ায় সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। ৭২ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা এস শিবানন্দন বলেন, মানাম্পিটিয়া বন্যাপ্রবণ এলাকা। কিন্তু আমি আগে কখনও এতো পানি দেখিনি।

পাহাড়ি ঢালের স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণকারী দেশটির সংস্থা ন্যাশনাল বিল্ডিং রিসার্চ অর্গানাইজেশন বলেছে, বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ের ঢাল এখনও ভেজা থাকায় আরও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট অনুঢ়া কুমারা দিসানায়েকে শনিবার ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। পাশাপাশি বিপর্যয়কর এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

অনুঢ়ার এই আহ্বানে ভারত প্রথমে সাড়া দিয়েছে। দেশটি ইতোমধ্যে ত্রাণসামগ্রী ও দুটি হেলিকপ্টার পাঠিয়ে উদ্ধারকাজে সহায়তা করেছে। লঙ্কান কর্মকর্তারা বলেছেন, আরও দুটি হেলিকপ্টার রোববার উদ্ধারকাজে পাঠানোর কথা রয়েছে ভারতের।

এদিকে, শ্রীলঙ্কার বিমানবাহিনী বলেছে, পাকিস্তানও উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে। জাপান বলেছে, তারা তাৎক্ষণিক চাহিদা মূল্যায়নের জন্য একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে এবং পরবর্তী সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।

শ্রীলঙ্কায় চলমান এই বৈরী আবহাওয়া-জনিত দুর্যোগে ২৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস এবং ১ লাখ ৪৭ হাজার মানুষকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্যায় বাস্তুচ্যুত আরও ৯ লাখ ৬৮ হাজার মানুষের সহায়তা প্রয়োজন।

ত্রাণকার্যে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও বেসামরিক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছেন।

উল্লেখ্য,  ২০১৭ সালের পর এটিই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ওই বছর বন্যা ও ভূমিধসে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। চলতি শতকের শুরুর পর থেকে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা গিয়েছিল ২০০৩ সালের জুন মাসে। সেসময় বন্যায় দেশটিতে ২৫৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।

সূত্র: এএফপি।