শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অপমানিত বোধ করেছেন রাষ্ট্রপতি, নির্বাচনের পর চান সরে যেতে

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে চান বলে জানিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এ পদত্যাগের পরিকল্পনা নিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।

রয়টার্স বলছে, রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে তিনি অপমানিত বোধ করায় সরে যেতে চান।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। এর বাইরে পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। দেশের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অবস্থান গুরুত্ব পায়। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর তিনিই ছিলেন দেশের শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।

হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি বিদায় নিতে আগ্রহী। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে বলেই আমি এ অবস্থানে আছি।’

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে প্রায় সাত মাস কোনো ধরনের সাক্ষাৎ করেননি। তার গণমাধ্যম বিভাগও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে নিজের ছবি সরিয়ে ফেলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল। এগুলো হঠাৎ করে এক রাতের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়।এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। মানুষজন ভাবতে পারে, রাষ্ট্রপতিকে হয়তো সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি।’

তিনি বলেন, ছবি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রয়টার্স দাবি করেছে, রাষ্ট্রপতির মন্তব্যগুলো নিয়ে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস উইংয়ের কাছে মন্তব্য চেয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া মেলেনি।

৭৫ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। চুপ্পু নামে বেশি পরিচিত সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হন। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন। পরে সামলিয়েছেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি, অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধেও। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি কারাভোগ করেন।

পেশায় আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তে যে কমিশন হয়েছিল, সাহাবুদ্দিন ছিলেন তার প্রধান।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

অপমানিত বোধ করেছেন রাষ্ট্রপতি, নির্বাচনের পর চান সরে যেতে

প্রকাশিত সময় : ১০:৫৫:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে চান বলে জানিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির এ পদত্যাগের পরিকল্পনা নিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।

রয়টার্স বলছে, রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে তিনি অপমানিত বোধ করায় সরে যেতে চান।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। এর বাইরে পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। দেশের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যান। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অবস্থান গুরুত্ব পায়। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর তিনিই ছিলেন দেশের শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।

হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি বিদায় নিতে আগ্রহী। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে বলেই আমি এ অবস্থানে আছি।’

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে প্রায় সাত মাস কোনো ধরনের সাক্ষাৎ করেননি। তার গণমাধ্যম বিভাগও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে নিজের ছবি সরিয়ে ফেলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল। এগুলো হঠাৎ করে এক রাতের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়।এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। মানুষজন ভাবতে পারে, রাষ্ট্রপতিকে হয়তো সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি।’

তিনি বলেন, ছবি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রয়টার্স দাবি করেছে, রাষ্ট্রপতির মন্তব্যগুলো নিয়ে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস উইংয়ের কাছে মন্তব্য চেয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া মেলেনি।

৭৫ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। চুপ্পু নামে বেশি পরিচিত সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হন। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন। পরে সামলিয়েছেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি, অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধেও। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি কারাভোগ করেন।

পেশায় আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তে যে কমিশন হয়েছিল, সাহাবুদ্দিন ছিলেন তার প্রধান।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।