শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়

কথায় আছে মানুষ মাত্রই ভুল। সে রকমই অনেক সময় জেনে বা না জেনে আমাদের গুনাহ হয়ে যায়। তবে ইসলামে গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়ার এবং মুক্তির অনেক পথ দেখিয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মানুষ মাত্রই গুনাহগার, তবে গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাকারীরাই উত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯৯)। তাই সর্বদা গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা, গুনাহ হলে তাওবা করা এবং যেসব আমলে গুনাহ মোচন হয়, সেগুলো বেশি বেশি করে করা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব।

এক সাহাবী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল- ঈমান (এর আলামত) কী, আল্লাহর রাসূল!

নবীজী উত্তরে বললেন

إِذَا سَرّتْكَ حَسَنَتُكَ، وَسَاءَتْكَ سَيِّئَتُكَ فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ.

যদি তোমার নেক আমল তোমাকে আনন্দিত করে এবং তোমার পাপ তোমাকে ব্যথিত করে (পাপ হয়ে গেলে তুমি কষ্টে ভুগতে থাক)। তাহলেই (বুঝবে) তুমি মুমিন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১৬৬

গুনাহ তো হয়েই যায়। শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়- গুনাহ হয়েই যায়। কিন্তু আশার কথা হল, আল্লাহ বান্দার জন্য গুনাহ মোচনের অগণিত পথ রেখেছেন। একে তো যে কোনো পাপ মোচনের জন্যই আল্লাহ খোলা রেখেছেন তাওবার দরজা, যা বান্দার পাপ মোচন করে দেয় এবং শয়তানকে ব্যর্থ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উপলক্ষে, বিভিন্ন নেক আমলের দ্বারাও আল্লাহ বান্দার পাপ মোচন করেন। মুমিন বুদ্ধিমান। সে এসকল আমল-উপলক্ষকে কাজে লাগায় এবং পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সচেষ্ট থাকে।

তওবা : সব গোনাহ মুছে দেয়

তাওবা। তাওবার মাধ্যমে মহাপাপীও হয়ে যেতে পারে গোনাহমুক্ত; শয়তানের সকল অপচেষ্টা মুহূর্তে ধূলিস্মাৎ করে দিতে পারে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

التّائِبُ مِنَ الذّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ.

গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহমুক্ত ব্যক্তির মত। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৫০

মুমিন তো গুনাহ নিয়ে বসে থাকতে পারে না। গুনাহ তো মুমিনের কাছে পাহাড়সম বোঝা। তাই মুমিন গুনাহ হওয়ার সঙ্গে তওবা করে নেয়। কুরআনে কারীম আল্লাহ তাআলা মুমিনের এ গুণের কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে-

وَ الَّذِیْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوْبِهِمْ  وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ، وَ لَمْ یُصِرُّوْا عَلٰی مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ.

এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি যুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কে বা আছে যে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে?   আর তারা জেনেশুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৫

আর আল্লাহ তাআলাও বান্দার তওবা কবুলের জন্য তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেই রাখেন; দিনে-রাতে, সর্বদা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللّيْلِ، حَتّى تَطْلُعَ الشّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا.

আল্লাহ তাআলা রাতে তার (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। আর দিনে তার (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। এভাবে (তার অবারিত ক্ষমা) চলতে থাকবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া পর্যন্ত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৫৯

তো যত বড় গুনাহই হোক না কেন, তওবার মাধ্যমে সব গুনাহ মুছে যায়। বিভিন্ন নেক আমলের দ্বারা তো সগীরা গুনাহগুলো মিটে যায় কিন্তু তওবা- সগীরা-কবীরা সব গোনাহ মিটিয়ে দেয়।

এখানে স্মরণ রাখতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে- বান্দার হকের ব্যাপারে। তা থেকে মুক্ত হতে হলে, বান্দার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে বা তার থেকে মাফ নিয়ে নিতে হবে তারপর আল্লাহ মাফ করবেন, তার আগে নয়। সুতরাং বান্দার হকের ব্যাপারে সাবধান! শত সাবধান!!

নেক আমল : কৃত গুনাহ মুছে দেয়

কোনো পাপ হয়ে গেলে মুমিনের করণীয় কী? পাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তো মুমিন পেরেশান হয়ে যায় তা মোচনের জন্য। আল্লাহ তাআলা মুমিনকে বাতলেছেন সে পথ। পাপ হয়ে গেছে বান্দা? তওবা কর এবং নেক আমল দ্বারা সেটি মিটিয়ে দাও। ইরশাদ হয়েছে-

وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ طَرَفَیِ النَّهَارِ وَ زُلَفًا مِّنَ الَّیْلِ، اِنَّ الْحَسَنٰتِ یُذْهِبْنَ السَّیِّاٰتِ،  ذٰلِكَ ذِكْرٰی لِلذّٰكِرِیْنَ .

তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল গুনাহগুলো মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ। -সূরা হূদ (১১) : ১১৪

সুতরাং নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া চাই। কোনো পাপ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করা চাই এবং নেক আমলের মাধ্যমে গুনাহ মুছে ফেলতে হবে। নবীজী তার এক প্রিয় সাহাবী আবু যর রা.কে একবার এ উপদেশই দিয়েছেন যে

اتّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعِ السّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا.

হে আবু যর! যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর এবং কোনো গুনাহ হয়ে গেলেই নেক আমল কর; তা তোমার গুনাহ মিটিয়ে দেবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৮৭

যে সকল নেক আমল দ্বারা পাপ মিটে যায় এর শীর্ষে হল নামায। আর আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতিও হল নামায। নামাযের মাধ্যমে মাফ চাইলে আল্লাহ দ্রুত মাফ করেন। হযরত আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

مَا مِنْ رَجُلٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيَتَوَضّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ، قَالَ مِسْعَرٌ: وَيُصَلِّي، وَقَالَ سُفْيَانُ: ثُمّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، فَيَسْتَغْفِرُ اللهَ عَزّ وَجَلّ إِلّا غُفَرَ لَهُ.

কারো কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি উত্তমরূপে ওযু করে এবং দুই রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায় আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২

এছাড়াও হাদীস শরীফে নামাযের মাধ্যমে পাপ মোচন হওয়ার অনেক বর্ণনা এসেছে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামায : মধ্যবর্তী গোনাহগুলো মিটিয়ে দেয়

যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ব্যাপারে যত্নবান তার কি কোনো গুনাহ থাকতে পারে? একে তো নামাযী ব্যক্তি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করবে, প্রতি নামাযেই গুনাহ থেকে মাফ চাইবে এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সংকল্প করবে- এটাই স্বাভাবিক। তারপরও যদি কোনো গুনাহ হয়ে যায় তো আল্লাহ তাআলা গাফুরুর রাহীম- নামাযের মাধ্যমে বান্দার গোনাহগুলো মিটিয়ে দেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ، قَالَ: فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنّ الْخَطَايَا.

(তোমাদের কী মনে হয়?) কারো বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজী তখন বললেন-

فَذلِكَ مَثَلُ الصّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنّ الْخَطَايَا.

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) গুনাহগুলো মিটিয়ে দেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-

الصّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ

পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমযান থেকে আরেক রমযান এর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহকে মিটিয়ে দেয়; যদি ওই ব্যক্তি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে (ওই ব্যক্তির যদি কবীরা গোনাহ না থাকে)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩

জুমার নামায : সারা সপ্তাহের গুনাহ মিটিয়ে দেয়

হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ تَوَضّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ، وَمَنْ مَسّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا.

যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করল এবং জুমায় এল। এরপর মনোযোগসহ খুতবা শুনল ও চুপ থাকল। আল্লাহ তাআলা তার গত জুমা ও এই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করে দিবেন। আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহও মাফ করবেন। আর যে ব্যক্তি নুড়ি (পাথর) স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৭

ওযু : গুনাহ ধুয়ে দেয়

নামাযের জন্য, তিলাওয়াত বা অন্য কোনো আমলের জন্য আমরা ওযু করি। নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করি; ওযুর মাধ্যমে আমরা পবিত্র হই। আমরা দেখি, আমাদের শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ওযু এর চেয়েও বেশি কিছু। তা শুধু শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে দেয় এবং আমাদের পবিত্র করে- এটুকুই নয়; বরং তা আমাদের গুনাহগুলোও ধুয়ে দেয়। গুনাহের নাপাকী থেকেও আমাদের পবিত্র করে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِذَا تَوَضّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ – أَوِ الْمُؤْمِنُ – فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – حَتّى يَخْرُجَ نَقِيّا مِنَ الذّنُوبِ.

যখন মুসলিম ওযু করে- চেহারা ধোওয়ার সময় পানির ফোঁটার সঙ্গে চোখের গুনাহগুলো ধুয়ে যায় (বর্ণনাকারী বলেন, অথবা নবীজী বলেছেন, পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে ধুয়ে যায়)। যখন হাত ধোয় তো হাতের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়।… যখন পা ধোয় তো পানির ফোঁটার সঙ্গে পায়ের দ্বারা করা গুনাহগুলো ধুয়ে যায়।… এভাবে বান্দা গুনাহ থেকে একেবারে পাক-সাফ হয়ে যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৪

নামাযের জন্য মসজিদে গমন : কদমে কদমে গুনাহ মাফ

জামাতের নামায আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক প্রিয়। ফলে জামাতের নামাযের জন্য যে কদম আগে বাড়ে তাও আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয়। জামাতে নামাযের জন্য আগে বাড়া প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

صَلاَةُ الرّجُلِ فِي الجَمَاعَةِ تُضَعّفُ عَلَى صَلاَتِهِ فِي بَيْتِهِ، وَفِي سُوقِهِ، خَمْسًا وَعِشْرِينَ ضِعْفًا، وَذَلِكَ أَنَّهُ: إِذَا تَوَضَّأَ، فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ، ثُمّ خَرَجَ إِلَى المَسْجِدِ، لاَ يُخْرِجُهُ إِلّا الصّلاَةُ، لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً، إِلّا رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ، وَحُطّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ.

জামাতের নামায ঘরের বা বাজারের নামায অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ, বান্দা যখন উত্তমরূপে ওযু করে এবং একমাত্র নামাযের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তো প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গোনাহ মিটিয়ে দেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭

আমিন বলা : ফিরিশতার সঙ্গে মিলে গেলে

নামাযে বান্দা চুপিসারে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলে। আল্লাহর তাসবীহ পড়ে, হাম্দ ও ছানা করে, দুআ ও প্রার্থনা করে। সূরা ফাতেহার মধ্যে বান্দা হাম্দ ও ছানার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। সূরা ফাতেহা যখন শেষ হয় তখন মুসল্লি আমিন বলে। ফিরিশতারাও তখন আমিন বলেন। বান্দার আমিন ও ফিরিশতার আমিন মিলে গেলে আল্লাহ বান্দার আগে সব গুনাহ মাফ করে দেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِذَا قَالَ الْإِمَامُ: غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضّالِّينَ، فَقُولُوا: آمِينَ، فَإِنّ الْمَلَائِكَةَ تَقُولُ : آمِينَ، وَإِنّ الْإِمَامَ يَقُولُ: آمِينَ، فَمَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْمَلَائِكَةِ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

যখন ইমাম غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ বলেন তখন তোমরাও আমিন বল। কেননা তখন ফিরিশতারাও আমিন বলে। ইমামও আমিন বলে। আর যার আমিন বলা ফিরিশতাদের আমিন বলার সঙ্গে মিলবে তার পূর্বের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭১৮৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৮০

রব্বানা লাকাল হামদ: আগে গুনাহ মাফ

রুকু থেকে উঠে ইমাম ঘোষণা করেন- سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (আল্লাহ শোনেন- যে তার প্রশংসা করে)। এ ঘোষণা শুনে কি মুমিন চুপ থাকতে পারে? সাথে সাথে মুমিনও তার রবের প্রশংসায় সচকিত হয়। সে বলে- رَبّنَا لَكَ الحَمْدُ (সকল প্রশংসা তোমারই হে আমাদের রব!)। এহেন মুহূর্তে কি ফিরিশতারা নিরব থাকবে? তারাও আল্লাহর প্রশংসায় সরব হয়। সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের। আল্লাহ খুশি হন। যে বান্দার তাহমীদ (রব্বানা লাকাল হাম্দ বলা) ফিরিশতাদের সাথে মিলে যায় তার পূর্বের সব গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়

প্রকাশিত সময় : ১০:৫৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

কথায় আছে মানুষ মাত্রই ভুল। সে রকমই অনেক সময় জেনে বা না জেনে আমাদের গুনাহ হয়ে যায়। তবে ইসলামে গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়ার এবং মুক্তির অনেক পথ দেখিয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মানুষ মাত্রই গুনাহগার, তবে গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাকারীরাই উত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯৯)। তাই সর্বদা গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা, গুনাহ হলে তাওবা করা এবং যেসব আমলে গুনাহ মোচন হয়, সেগুলো বেশি বেশি করে করা আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব।

এক সাহাবী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল- ঈমান (এর আলামত) কী, আল্লাহর রাসূল!

নবীজী উত্তরে বললেন

إِذَا سَرّتْكَ حَسَنَتُكَ، وَسَاءَتْكَ سَيِّئَتُكَ فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ.

যদি তোমার নেক আমল তোমাকে আনন্দিত করে এবং তোমার পাপ তোমাকে ব্যথিত করে (পাপ হয়ে গেলে তুমি কষ্টে ভুগতে থাক)। তাহলেই (বুঝবে) তুমি মুমিন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১৬৬

গুনাহ তো হয়েই যায়। শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়- গুনাহ হয়েই যায়। কিন্তু আশার কথা হল, আল্লাহ বান্দার জন্য গুনাহ মোচনের অগণিত পথ রেখেছেন। একে তো যে কোনো পাপ মোচনের জন্যই আল্লাহ খোলা রেখেছেন তাওবার দরজা, যা বান্দার পাপ মোচন করে দেয় এবং শয়তানকে ব্যর্থ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উপলক্ষে, বিভিন্ন নেক আমলের দ্বারাও আল্লাহ বান্দার পাপ মোচন করেন। মুমিন বুদ্ধিমান। সে এসকল আমল-উপলক্ষকে কাজে লাগায় এবং পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সচেষ্ট থাকে।

তওবা : সব গোনাহ মুছে দেয়

তাওবা। তাওবার মাধ্যমে মহাপাপীও হয়ে যেতে পারে গোনাহমুক্ত; শয়তানের সকল অপচেষ্টা মুহূর্তে ধূলিস্মাৎ করে দিতে পারে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

التّائِبُ مِنَ الذّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ.

গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহমুক্ত ব্যক্তির মত। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৫০

মুমিন তো গুনাহ নিয়ে বসে থাকতে পারে না। গুনাহ তো মুমিনের কাছে পাহাড়সম বোঝা। তাই মুমিন গুনাহ হওয়ার সঙ্গে তওবা করে নেয়। কুরআনে কারীম আল্লাহ তাআলা মুমিনের এ গুণের কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে-

وَ الَّذِیْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوْبِهِمْ  وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ، وَ لَمْ یُصِرُّوْا عَلٰی مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ.

এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি যুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কে বা আছে যে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে?   আর তারা জেনেশুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৫

আর আল্লাহ তাআলাও বান্দার তওবা কবুলের জন্য তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেই রাখেন; দিনে-রাতে, সর্বদা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللّيْلِ، حَتّى تَطْلُعَ الشّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا.

আল্লাহ তাআলা রাতে তার (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। আর দিনে তার (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। এভাবে (তার অবারিত ক্ষমা) চলতে থাকবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া পর্যন্ত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৫৯

তো যত বড় গুনাহই হোক না কেন, তওবার মাধ্যমে সব গুনাহ মুছে যায়। বিভিন্ন নেক আমলের দ্বারা তো সগীরা গুনাহগুলো মিটে যায় কিন্তু তওবা- সগীরা-কবীরা সব গোনাহ মিটিয়ে দেয়।

এখানে স্মরণ রাখতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে- বান্দার হকের ব্যাপারে। তা থেকে মুক্ত হতে হলে, বান্দার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে বা তার থেকে মাফ নিয়ে নিতে হবে তারপর আল্লাহ মাফ করবেন, তার আগে নয়। সুতরাং বান্দার হকের ব্যাপারে সাবধান! শত সাবধান!!

নেক আমল : কৃত গুনাহ মুছে দেয়

কোনো পাপ হয়ে গেলে মুমিনের করণীয় কী? পাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তো মুমিন পেরেশান হয়ে যায় তা মোচনের জন্য। আল্লাহ তাআলা মুমিনকে বাতলেছেন সে পথ। পাপ হয়ে গেছে বান্দা? তওবা কর এবং নেক আমল দ্বারা সেটি মিটিয়ে দাও। ইরশাদ হয়েছে-

وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ طَرَفَیِ النَّهَارِ وَ زُلَفًا مِّنَ الَّیْلِ، اِنَّ الْحَسَنٰتِ یُذْهِبْنَ السَّیِّاٰتِ،  ذٰلِكَ ذِكْرٰی لِلذّٰكِرِیْنَ .

তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল গুনাহগুলো মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ। -সূরা হূদ (১১) : ১১৪

সুতরাং নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া চাই। কোনো পাপ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করা চাই এবং নেক আমলের মাধ্যমে গুনাহ মুছে ফেলতে হবে। নবীজী তার এক প্রিয় সাহাবী আবু যর রা.কে একবার এ উপদেশই দিয়েছেন যে

اتّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعِ السّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا.

হে আবু যর! যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর এবং কোনো গুনাহ হয়ে গেলেই নেক আমল কর; তা তোমার গুনাহ মিটিয়ে দেবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৮৭

যে সকল নেক আমল দ্বারা পাপ মিটে যায় এর শীর্ষে হল নামায। আর আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতিও হল নামায। নামাযের মাধ্যমে মাফ চাইলে আল্লাহ দ্রুত মাফ করেন। হযরত আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

مَا مِنْ رَجُلٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيَتَوَضّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ، قَالَ مِسْعَرٌ: وَيُصَلِّي، وَقَالَ سُفْيَانُ: ثُمّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، فَيَسْتَغْفِرُ اللهَ عَزّ وَجَلّ إِلّا غُفَرَ لَهُ.

কারো কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি উত্তমরূপে ওযু করে এবং দুই রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায় আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২

এছাড়াও হাদীস শরীফে নামাযের মাধ্যমে পাপ মোচন হওয়ার অনেক বর্ণনা এসেছে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামায : মধ্যবর্তী গোনাহগুলো মিটিয়ে দেয়

যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ব্যাপারে যত্নবান তার কি কোনো গুনাহ থাকতে পারে? একে তো নামাযী ব্যক্তি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করবে, প্রতি নামাযেই গুনাহ থেকে মাফ চাইবে এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সংকল্প করবে- এটাই স্বাভাবিক। তারপরও যদি কোনো গুনাহ হয়ে যায় তো আল্লাহ তাআলা গাফুরুর রাহীম- নামাযের মাধ্যমে বান্দার গোনাহগুলো মিটিয়ে দেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-

أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ، قَالَ: فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنّ الْخَطَايَا.

(তোমাদের কী মনে হয়?) কারো বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজী তখন বললেন-

فَذلِكَ مَثَلُ الصّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنّ الْخَطَايَا.

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) গুনাহগুলো মিটিয়ে দেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-

الصّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ

পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমযান থেকে আরেক রমযান এর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহকে মিটিয়ে দেয়; যদি ওই ব্যক্তি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে (ওই ব্যক্তির যদি কবীরা গোনাহ না থাকে)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩

জুমার নামায : সারা সপ্তাহের গুনাহ মিটিয়ে দেয়

হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ تَوَضّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ، وَمَنْ مَسّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا.

যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করল এবং জুমায় এল। এরপর মনোযোগসহ খুতবা শুনল ও চুপ থাকল। আল্লাহ তাআলা তার গত জুমা ও এই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করে দিবেন। আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহও মাফ করবেন। আর যে ব্যক্তি নুড়ি (পাথর) স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৭

ওযু : গুনাহ ধুয়ে দেয়

নামাযের জন্য, তিলাওয়াত বা অন্য কোনো আমলের জন্য আমরা ওযু করি। নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করি; ওযুর মাধ্যমে আমরা পবিত্র হই। আমরা দেখি, আমাদের শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ওযু এর চেয়েও বেশি কিছু। তা শুধু শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে দেয় এবং আমাদের পবিত্র করে- এটুকুই নয়; বরং তা আমাদের গুনাহগুলোও ধুয়ে দেয়। গুনাহের নাপাকী থেকেও আমাদের পবিত্র করে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِذَا تَوَضّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ – أَوِ الْمُؤْمِنُ – فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ – أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ – حَتّى يَخْرُجَ نَقِيّا مِنَ الذّنُوبِ.

যখন মুসলিম ওযু করে- চেহারা ধোওয়ার সময় পানির ফোঁটার সঙ্গে চোখের গুনাহগুলো ধুয়ে যায় (বর্ণনাকারী বলেন, অথবা নবীজী বলেছেন, পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে ধুয়ে যায়)। যখন হাত ধোয় তো হাতের গুনাহগুলো ধুয়ে যায়।… যখন পা ধোয় তো পানির ফোঁটার সঙ্গে পায়ের দ্বারা করা গুনাহগুলো ধুয়ে যায়।… এভাবে বান্দা গুনাহ থেকে একেবারে পাক-সাফ হয়ে যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৪

নামাযের জন্য মসজিদে গমন : কদমে কদমে গুনাহ মাফ

জামাতের নামায আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক প্রিয়। ফলে জামাতের নামাযের জন্য যে কদম আগে বাড়ে তাও আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয়। জামাতে নামাযের জন্য আগে বাড়া প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

صَلاَةُ الرّجُلِ فِي الجَمَاعَةِ تُضَعّفُ عَلَى صَلاَتِهِ فِي بَيْتِهِ، وَفِي سُوقِهِ، خَمْسًا وَعِشْرِينَ ضِعْفًا، وَذَلِكَ أَنَّهُ: إِذَا تَوَضَّأَ، فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ، ثُمّ خَرَجَ إِلَى المَسْجِدِ، لاَ يُخْرِجُهُ إِلّا الصّلاَةُ، لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً، إِلّا رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ، وَحُطّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ.

জামাতের নামায ঘরের বা বাজারের নামায অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ, বান্দা যখন উত্তমরূপে ওযু করে এবং একমাত্র নামাযের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তো প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গোনাহ মিটিয়ে দেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭

আমিন বলা : ফিরিশতার সঙ্গে মিলে গেলে

নামাযে বান্দা চুপিসারে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলে। আল্লাহর তাসবীহ পড়ে, হাম্দ ও ছানা করে, দুআ ও প্রার্থনা করে। সূরা ফাতেহার মধ্যে বান্দা হাম্দ ও ছানার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। সূরা ফাতেহা যখন শেষ হয় তখন মুসল্লি আমিন বলে। ফিরিশতারাও তখন আমিন বলেন। বান্দার আমিন ও ফিরিশতার আমিন মিলে গেলে আল্লাহ বান্দার আগে সব গুনাহ মাফ করে দেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِذَا قَالَ الْإِمَامُ: غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضّالِّينَ، فَقُولُوا: آمِينَ، فَإِنّ الْمَلَائِكَةَ تَقُولُ : آمِينَ، وَإِنّ الْإِمَامَ يَقُولُ: آمِينَ، فَمَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْمَلَائِكَةِ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

যখন ইমাম غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ বলেন তখন তোমরাও আমিন বল। কেননা তখন ফিরিশতারাও আমিন বলে। ইমামও আমিন বলে। আর যার আমিন বলা ফিরিশতাদের আমিন বলার সঙ্গে মিলবে তার পূর্বের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭১৮৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৮০

রব্বানা লাকাল হামদ: আগে গুনাহ মাফ

রুকু থেকে উঠে ইমাম ঘোষণা করেন- سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (আল্লাহ শোনেন- যে তার প্রশংসা করে)। এ ঘোষণা শুনে কি মুমিন চুপ থাকতে পারে? সাথে সাথে মুমিনও তার রবের প্রশংসায় সচকিত হয়। সে বলে- رَبّنَا لَكَ الحَمْدُ (সকল প্রশংসা তোমারই হে আমাদের রব!)। এহেন মুহূর্তে কি ফিরিশতারা নিরব থাকবে? তারাও আল্লাহর প্রশংসায় সরব হয়। সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের। আল্লাহ খুশি হন। যে বান্দার তাহমীদ (রব্বানা লাকাল হাম্দ বলা) ফিরিশতাদের সাথে মিলে যায় তার পূর্বের সব গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন।