রাজশাহীর পবা উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের নীলনকশার শিকার হয়ে নিহত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। দিবসটির সূচনা হয় রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে। পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় উপস্থিত সবাই নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে পরিবেশ ছিল আবেগঘন ও গম্ভীর। এরপর সকাল সাড়ে ১০ টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাত আমান আজিজ। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদদের হত্যা করা হয়। এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়।
দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার দিন। এই দিনটি আমাদের সতর্ক করে দেয়—যে কোনো ধরনের অন্যায়, সাম্প্রদায়িকতা ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মেধা ও বিবেক। তাঁদের হত্যা করে স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের আদর্শ ও চিন্তা আজও আমাদের পথ দেখায়।
এসময় উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা শামসুন্নাহারের সঞ্চালনায় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এম এ মান্নান। এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন- সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, উপজেলা প্রকৌশলী মকবুল হোসেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. আব্দুল লতিফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এমদাদুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এমদাদুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুধু অস্ত্রের লড়াই ছিল না, এটি ছিল আদর্শ, চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধের সংগ্রাম। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্বাধীনতার মূল্য কত বড় এবং এই স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে, যাতে তারা দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে ওঠে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কেবল শোকের দিন নয়, এটি প্রতিজ্ঞার দিন। এই দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে—সত্য, ন্যায় ও স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রাখব এবং ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
আলোচনা সভার মাধ্যমে বক্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ধারণ করে একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দিনব্যাপী এই কর্মসূচির মাধ্যমে পবা উপজেলায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হয়।

ডেইলি দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক 






















