আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের এই দিনে এ দেশের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু কৃতী সন্তানকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের পর রাজধানীর রায়েরবাজার ইটখোলা, মিরপুরের বধ্যভূমিসহ ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের চোখ-হাত বাঁধা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এবারও জাতীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল ৬টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার অংশ হিসেবে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবিচল সাহস ও দৃঢ় অবস্থান দেশের ইতিহাসে অনন্য ও চিরস্মরণীয়। বাণীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দুঃখজনক ও কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিনগুলোতে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে দেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। শোকাবহ এ দিনে আমি শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করি। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানি শোষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা। বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের মেধা ও প্রজ্ঞার প্রয়োগ, সাংস্কৃতিক চর্চা ও ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যুদ্ধকালীন সরকারকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত পরামর্শ দিয়ে জাতিকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিতেও তাঁদের ছিল অসামান্য ভূমিকা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর বাণীতে বলেছেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পার হলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। গণতন্ত্র বারবার মৃত্যুকূপে পতিত হয়েছে। একদলীয় দুঃশাসনের বাতাবরণ তৈরি করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ প্রতিহত করা হয়েছে। অনেক রক্ত ঝরলেও মতপ্রকাশ, লেখা ও বলার স্বাধীনতা সংকটের দুর্বিপাক থেকে আজও মুক্ত হতে পারেনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দলীয় নেতারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে দলটি। এ ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে সকাল ৭টার মধ্যে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে সকাল ৯টায় রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন তাঁরা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন ও বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সকাল ৯টায় মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শাহবাগে ‘প্রতীকী বধ্যভূমি ১৯৭১’ প্রদর্শিত
অন্যদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রাজধানীর শাহবাগে গতকাল ‘প্রতীকী বধ্যভূমি ১৯৭১’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই প্রদর্শনী হয়। কালো কাপড়ে হাত-মুখ বাঁধা, শরীরে ক্ষত ও রক্তের চিহ্ন নিয়ে একদল নাট্যকর্মীর অংশগ্রহণে প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে ‘বাংলাপরিসর’ সাংস্কৃতিক সংগঠন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাপরিসরের সম্পাদক দীপান্ত রায়হান।

ডেইলি দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক 






















